বাংলাদেশে ঘুষ, লবিং ও দুর্নীতি ছাড়া চাকরী । মেধা ও পরিশ্রমে কি সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব ?

বাংলাদেশে ঘুষ, লবিং ও দুর্নীতি ছাড়া চাকরী । মেধা ও পরিশ্রমে কি সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব?

বাংলাদেশেও ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া সম্ভব- তবে সেটি সোনার হরিণ নামেই জনসাধারণের কাছে পরিচিত- মেধাবীদের খুব সংখ্যকই এটি পেয়ে থাকেন– বাংলাদেশে ঘুষ, লবিং ও দুর্নীতি ছাড়া চাকরী

সরকারি চাকরি কি সোনার হরিণ? –সরকারি চাকরি সত্যিই অনেকের কাছে সোনার হরিণের মতো মনে হতে পারে।সরকারি চাকরিতে চাকরি হারানোর ঝুঁকি কম থাকে এবং নিয়মিত বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। সমাজে সরকারি চাকরিজীবীদের সাধারণত সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা হয়। অবসরের পর পেনশনের সুযোগ থাকে। চিকিৎসা, ছুটি, গৃহস্থালী ভাতা ইত্যাদি সুবিধাও থাকে।

সরকারি চাকরিতে বেতন কি কম? হ্যাঁ। সরকারি চাকরির জন্য প্রচুর প্রতিযোগিতা হতে পারে এবং নির্বাচিত হওয়া কঠিন হতে পারে। বেসরকারি চাকরির তুলনায় সরকারি চাকরির বেতন অনেক ক্ষেত্রে কম হতে পারে। সরকারি চাকরিতে কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। বেসরকারি চাকরির তুলনায় সরকারি চাকরিতে কাজের স্বাধীনতা কম থাকে। সুতরাং, সরকারি চাকরি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করার আগে সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদা গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে সরকারি চাকরি আপনার জন্য ভালো হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি বেশি বেতন, কাজের স্বাধীনতা এবং নমনীয়তা চান, তাহলে বেসরকারি চাকরি আপনার জন্য আরও উপযুক্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে ঘুষ ছাড়া চাকরি কত শতাংশ হয়? বাংলাদেশে ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়ার হার নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ এটি একটি জটিল ও বিতর্কিত বিষয়। কিছু গবেষণা ও প্রতিবেদন অনুসারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশে ৫০% চাকরিপ্রার্থী ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরকারি চাকরিতে ঘুষের হার ৬০% এরও বেশি। চ্যানেল আই এর ২০১৮ সালের একটি অনুসন্ধানে বলা হয়েছিল যে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তির হার ক্রমবর্ধমান। তবে, অনেকে মনে করেন এই হার অনেক বেশি।

সরকারি দাবী ঘুষ ছাড়াই চাকরি হচ্ছে বহু চাকরি প্রত্যাশীদের / অন্যদিকে খুব কম মেধাবী তরুনই ঘুষ ও লবিং ছাড়া চাকরি পাচ্ছে তা কর্মক্ষেত্রেও প্রমাণিত।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া অসম্ভব নয়, তবে এটি খুবই কঠিন।” একজন চাকরিপ্রার্থী বলেছেন, “আমি লেখাপড়ায় ভালো, কিন্তু আমার কাছে ঘুষ দেওয়ার মতো টাকা নেই। তাই আমি চাকরি পাচ্ছি না।” অন্যদিকে, সরকার দাবি করে যে তারা ঘুষ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “ঘুষ দুর্নীতির মূল কারণ। আমরা ঘুষমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” সরকার অনলাইন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করেছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করেছে।

Caption: Facebook Profile link of Zahed

বাংলাদেশে ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া অসম্ভব নয়, তবে এটি খুবই কঠিন।ঘুষের প্রকৃত হার নির্ধারণ করা কঠিন। সরকার ঘুষ রোধে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

  1. আইনি পদক্ষেপ: দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ১৯৯৫: দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত, মামলা ও বিচারের জন্য এই আইন প্রণীত হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯: নাগরিকদের সরকারি তথ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন (চাকরি) আইন, ২০০০: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত।
  2. প্রশাসনিক পদক্ষেপ: অনলাইন নিয়োগ প্রক্রিয়া: অনলাইনে আবেদন, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে ঘুষের সুযোগ কমানো হচ্ছে। ই-গভর্নেন্স: অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি সেবা প্রদানের মাধ্যমে মুখোমুখি যোগাযোগ কমিয়ে ঘুষের ঝুঁকি কমানো হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কোষ: প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি দমন কোষ স্থাপন করা হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি: দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
  3. প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ: ই-আবেদন: অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করা হচ্ছে। কম্পিউটারাইজড পরীক্ষা: পরীক্ষা ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি ও প্রতারণা রোধের জন্য কম্পিউটারাইজড পরীক্ষা চালু করা হচ্ছে। ডেটাবেস ব্যবস্থাপনা: নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যের একটি ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে।

মেধায় কি আসলে চাকরি হয়?

সরকারি চাকরিতে কিছু ক্ষেত্রে ৯০% মেধায় চাকরি হয়। যেমন-বিসিএস উত্তীর্ণদের। অপর দিকে বিপিএসসির পরীক্ষায়ও মেধায় চাকরি হয় ৫০% এরও অধিক। সুতরাং পথ হারিও না, হাল ছেড়ো না বন্ধু এগিয়ে চলো, সাফল্য একদিন আসবেই। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যেমন ভারতেও মেধায় চাকরি হওয়ার সংখ্যা আমাদের দেশের থেকে নেহায়েত বেশি নয়। জনসংখ্যাধিক্য ও পাশের হার বেশি বর্তমানে আমাদের দেশে। সরকারি চাকরিগুলোতে এখনও ১০-২০% চাকরিজীবী মেধার মাধ্যমেই উত্তীর্ণ হয়েছে।

এ ধারা অব্যাহত থাকবে কারণ একটি সরকারি দপ্তর চালাতে কিছু যোগ্য লোক থাকতেই হবে, না হলে দপ্তর চলবে কি করে? যারা উৎকোচ বা ঘুষ বা তদবীরের জোরে চাকরি পেয়ে থাকে তারা একদিকে যেমন কাজের অযোগ্য অন্যদিকে দাপ্তরিক কাজ করতে অনাগ্রহী থাকে এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ না করেও চাকরি টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। সুতরাং মেধাশুন্য চাকরির দৌড়ে ১০-২০% মেধার মূল্যায়ন আজীবনই থাকবে। আরেকটি কথা গ্রেড ১-১০ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরির ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন অনেক বেশি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলবো এখানও ১ম ও ২য় শ্রেণীর পদের চাকরিতে ৭০% লোকের চাকরি হয় মেধায়। সবচেয়ে বেশি দূর্ণীতি হয় ১১-২০ গ্রেড অর্থাৎ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর পদের চাকরির ক্ষেত্রে। এসব চাকরিতে সুযোগ পেতে হলে ঐ যে মেধায় উত্তীর্ণ ১০-২০% ব্যক্তির কাতারে উঠে আসতে হবে।

https://bdservicerules.info/%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%95%E0%A6%B2-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%8D/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *