নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ । যে ছুটি জমা হয় এবং তা পরবর্তীতে যে কোন সময় কাটানো যায়
“নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯” (The Prescribed Leave Rules, 1959) এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিধি ও আদেশের (যেমন: বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস্, ফান্ডামেন্টাল রুলস্) উপর ভিত্তি করে সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য ছুটির বিধানাবলী বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত। এই বিধিমালাটি ১৯৫৯ সালের ২ অক্টোবর জারি করা হয় এবং ১৯৫৯ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর বলে গণ্য হয় ।
বিধিমালাটির প্রয়োগ
বিধিমালাটি ১ জুলাই, ১৯৫৯ তারিখে বা তৎপরবর্তী সময়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগকৃত সকল সরকারি কর্মচারীর উপর প্রযোজ্য । এটি বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস্ অথবা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিধিসমূহের প্রতিস্থাপক বিধান হিসাবে প্রযোজ্য হবে ।
ছুটির প্রকারভেদ
বিধিমালা ও সংশ্লিষ্ট আদেশের আওতায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য নিম্নোক্ত প্রকার ছুটির বিধান রয়েছে:
- অর্জিত ছুটি (Earned Leave)
- অসাধারণ ছুটি (Extraordinary Leave)
- অধ্যয়ন ছুটি (Study Leave)
- সংগনিরোধ ছুটি (Quarantine Leave)
- প্রসূতি ছুটি (Maternity Leave)
- প্রাপ্যতাবিহীন ছুটি (Leave not due)
- অবসর উত্তর ছুটি (Post Retirement Leave)
- নৈমিত্তিক ছুটি (Casual Leave)
- সাধারণ ও সরকারি ছুটি (Public and Government holiday)
- শ্রান্তি বিনোদন ছুটি (Rest and Recreation Leave)
- অক্ষমতাজনিত বিশেষ ছুটি (Special Disability Leave)
- বিশেষ অসুস্থতাজনিত ছুটি (Special sick leave)
- অবকাশ বিভাগের ছুটি (Leave of Vacation Department)
- বিভাগীয় ছুটি (Departmental Leave)
- চিকিৎসালয় ছুটি (Hospital Leave)
- বাধ্যতামূলক ছুটি (Compulsory Leave)
- বিনা বেতনে ছুটি (Leave without pay)
অর্জিত ছুটি (Earned Leave)
অর্জিত ছুটি দুই প্রকার: গড় বেতনে অর্জিত ছুটি ও অর্ধ-গড় বেতনে অর্জিত ছুটি ।
গড় বেতনে অর্জিত ছুটি
- অর্জনের হার: স্থায়ী সরকারি কর্মচারীর জন্য কর্মকালের হারে গড় বেতনে ছুটি অর্জিত হয় ।
- সর্বোচ্চ জমা: এই ছুটি সর্বাধিক ৪ (চার) মাস পর্যন্ত একত্রে জমা হতে পারে । অতিরিক্ত অর্জিত ছুটি “ছুটি হিসাব” এর পৃথক আইটেমে জমা হবে ।
- সর্বোচ্চ ভোগ:
- সাধারণত এককালীন ৪ (চার) মাসের বেশি ভোগ করা যায় না ।
- মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে, তীর্থ যাত্রার, শিক্ষার বা বাংলাদেশ, বার্মা, শ্রীলংকা ও ভারতের বাইরে শ্রান্তি ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে এই সীমা ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে ।
অর্ধ-গড় বেতনে অর্জিত ছুটি
- অর্জনের হার: কর্মকালের হারে অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি অর্জিত হয় এবং এটি সীমাহীনভাবে জমা হয় ।
- রূপান্তর: মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করা হলে, প্রতি ২ (দুই) দিন অর্ধ-গড় বেতনের ছুটির পরিবর্তে ১ (এক) দিন গড় বেতনের ছুটিতে রূপান্তর করা যায়। এই রূপান্তর সর্বাধিক ১২ (বার) মাস পর্যন্ত করা যেতে পারে ।
প্রাপ্যতাবিহীন ছুটি (Leave Not Due)
- যোগ্যতা: শুধুমাত্র স্থায়ী কর্মে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীকে এই ছুটি মঞ্জুর করা যায় ।
- সর্বোচ্চ মেয়াদ:
- সমগ্র চাকরি জীবনে মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ১২ (বার) মাস পর্যন্ত ।
- মেডিকেল সার্টিফিকেট ব্যতীত সর্বোচ্চ ৩ (তিন) মাস পর্যন্ত ।
অসাধারণ ছুটি (Extraordinary Leave)
অসাধারণ ছুটি হলো এমন ছুটি যার জন্য ছুটিকালীন বেতন প্রদেয় নয় । এটি বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রদান করা যায় যখন:
- বিধিমতে অন্য কোনো প্রকার ছুটি প্রাপ্য নয়; অথবা
- অন্য প্রকার ছুটি প্রাপ্য হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী লিখিতভাবে অসাধারণ ছুটির জন্য আবেদন জানান।
মেয়াদ সংক্রান্ত বিধান (অস্থায়ী কর্মচারী):
- স্থায়ীকর্মে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারী ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রে অসাধারণ ছুটির মেয়াদ এককালীন ৩ (তিন) মাসের অধিক হবে না ।
- দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে অস্থায়ী কর্মচারীকে সর্বাধিক ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত অসাধারণ ছুটি দেওয়া যেতে পারে ।
- যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত অস্থায়ী কর্মচারীকে এককালীন সর্বাধিক ১২ (বার) মাস পর্যন্ত অসাধারণ ছুটি প্রদান করা যেতে পারে, যদি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ সুপারিশ করেন ।
ছুটিকালীন বেতন ও অন্যান্য সুবিধা
ছুটিকালীন বেতন নির্ণয়
বর্তমানে, ছুটি আরম্ভের পূর্বে
সর্বশেষ উত্তোলিত বেতনের সমহারে গড় বেতনে ছুটিকালীন বেতন এবং উক্ত হারের অর্ধহারে অর্ধ-গড় বেতনে ছুটিকালীন বেতন নির্ধারিত হয় । পূর্বের জটিল পদ্ধতিটি বর্তমানে অকার্যকর ।
অন্যান্য সুবিধা (অর্ধ-গড় বেতন ছুটি)
অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি ভোগকালে কর্মচারী
বাড়ীভাড়া ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা পূর্ণ হারে প্রাপ্য হবেন ।
ছুটি হিসাবের জন্য কর্মকাল গণনা
সাধারণত, কর্মচারীর ছুটি হিসাবের জন্য কর্মকাল গণনার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সময়গুলো বাদ দিতে হবে:
- ভোগকৃত ছুটিকাল (গড় ও অর্ধ-গড় বেতনে অর্জিত ছুটি, প্রসূতি ছুটি, অধ্যয়ন ছুটি, অসাধারণ ছুটি ইত্যাদি)।
- বিদেশে প্রশিক্ষণের/অধ্যয়নের জন্য অনুমতিক্রমে বিদেশে অবস্থানের সময় যদি সরকার বা সংস্থাকে কোনো আর্থিক কন্ট্রিবিউশন দিতে না হয় ।
- বেতনহীন অসাধারণ ছুটিকাল ।
তবে, নিম্নোক্ত সময়গুলো কর্মকাল হিসাবে গণ্য হবে না, এবং “ছুটি হিসাব” এর জন্য কর্মকাল হিসাবে গণনা করা যাবে না:
- প্রদত্ত কর্মকাল
- বৈদেশিক বা আন্তর্জাতিক সংস্থায়/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় প্রেষণকাল
- চাকরিচ্যুত থাকার অপেক্ষাকাল
- শিক্ষানবিসকাল
- প্রশিক্ষণ কোর্সে কাটানো সময়কাল
- গ্রেপ্তারকাল
- প্রেষণশেষে যোগদানের অপেক্ষাকাল
ছুটির সর্বোচ্চ মেয়াদ
একাধিক প্রকার ছুটি সম্মিলিতভাবে নেওয়া হলেও নিম্নলিখিত সর্বোচ্চ মেয়াদ অতিক্রম করা যাবে না:
- ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে এককালীন সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর ।
- স্বাস্থ্যগত কারণে এককালীন সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর ।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিধান
- অবকাশ বিভাগের কর্মচারী: যে বছর পূর্ণ অবকাশ ভোগ করবেন, সে বছর কর্মকালের জন্য গড় বেতনে কোনো ছুটি পাবেন না ।
- ছুটির তামাদি: সরকারি কর্মচারীর “ছুটি হিসাব” এ জমাকৃত ছুটি তার বাধ্যতামূলক অবসরগ্রহণের দিনটিতে তামাদি হয়ে যাবে ।
- ছুটির সংযুক্তি: এই বিধিমালার অধীন যে কোনো প্রকার ছুটির সাথে সংযুক্তভাবে বা এর ধারাবাহিকতাক্রমে অন্য যে কোনো প্রকার ছুটি প্রদান করা যেতে পারে ।
এই বিধিমালা সরকারি কর্মচারীদের ছুটির অধিকার ও বিধান সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে, যা সরকারি চাকরির বিধানাবলীর একটি অপরিহার্য অংশ।