ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি ২০২৫ । সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রায় তীব্র চাপ, ৫% সুদের হার পুনর্বিবেচনার দাবি? - Technical Alamin
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ

ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি ২০২৫ । সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রায় তীব্র চাপ, ৫% সুদের হার পুনর্বিবেচনার দাবি?

সূচীপত্র

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ব্যক্তিগত (Personal) ঋণের সুদের হার ৯% থেকে বেড়ে ১৩/১৪%-এ উন্নীত হওয়ায় সাধারণ কর্মচারীদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে যখন জীবনধারণ করাই কঠিন, তখন ঋণের এই বোঝা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের সরকারি কর্মীদের ‘ঋণের ফাঁদে’ ফেলে জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে কর্মচারীরা সরকারের কাছে ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার ৫%-এ নামিয়ে এনে সুস্থভাবে বাঁচার সুযোগ দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।

সুদের হার বৃদ্ধি ও কর্মচারীদের ওপর প্রভাব

সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ বাড়ি তৈরি, সন্তানের শিক্ষা, বা চিকিৎসা ব্যয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ গ্রহণ করেন। গত বছরও যেখানে এই ঋণের সুদের হার ছিল ৯%, সেখানে তা এক ধাক্কায় ১৩/১৪ শতাংশে পৌঁছানোয় মাসিক কিস্তির (EMI) পরিমাণ অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে গেছে।

  • জীবনযাত্রা ‘ঝালাপালা’: একজন সরকারি কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বেতন যা পাই, তার প্রায় অর্ধেক চলে যায় ঋণের কিস্তি আর নিত্যপণ্যের দাম মেটাতে। এখন সুদের হার বাড়ায় কিস্তি আরও বেড়েছে। আমরা ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছি। সুস্থভাবে বাঁচার কোনো উপায় নেই।”
  • অসমর্থনীয় আর্থিক চাপ: অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতির কারণে যখন সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে যায়, তখন ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি করলে তা সরাসরি তাদের ক্রয়ক্ষমতা আরও কমিয়ে দেয়। সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে যে আলোচনা চলছে, এই উচ্চ সুদের হার তার সম্ভাব্য সুবিধাটুকুও কেড়ে নিচ্ছে।

ব্যাংক ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব

পার্সোনাল লোনের সুদের হার বৃদ্ধি শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত জীবনকেই প্রভাবিত করছে না, বরং অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

  • ব্যবসা ও বাণিজ্যে স্থবিরতা: সরকারি কর্মচারীদের ঋণের কিস্তি বেড়ে যাওয়ায় তাদের ভোগ্যপণ্য কেনার ক্ষমতা কমে আসছে। এতে সামগ্রিকভাবে বাজারে চাহিদা (Demand) কমে যাচ্ছে, যা ব্যবসা ও বাণিজ্যের গতিকে শ্লথ করে দিতে পারে।
  • বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা: কর্মচারীরা ব্যক্তিগত অর্থ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের চেয়ে কিস্তি শোধের দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য হওয়ায় সামগ্রিক আর্থিক খাতেও এর প্রভাব পড়ছে।

সরকারের কাছে সুদের হার ৫% করার দাবি

সরকারি কর্মচারী ফোরাম এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সরকারের কাছে অবিলম্বে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়েছে। তাদের মূল দাবি হলো, সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার বিশেষ বিবেচনায় ৫%-এ নামিয়ে আনতে হবে।

দাবিদাররা যুক্তি দিচ্ছেন যে, দেশের সেবায় নিয়োজিত এই বিশাল কর্মীবাহিনীকে যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে তাদের কাজের স্পৃহা ও দক্ষতা কমে যেতে পারে, যা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে প্রভাব ফেলবে। একই সাথে তারা মনে করেন, এই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলে বাজারে বড় ধরনের কোনো মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হবে না।

কর্মচারীদের আকুল আবেদন, সরকার যেন দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে এবং তাদের জন্য একটি সুস্থ আর্থিক পরিবেশ নিশ্চিত করে।

গৃহ ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত নিম্ন গ্রেডের কর্মীরা, ব্যক্তিগত ঋণে উচ্চ সুদের ফাঁদ: সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক দুর্দশা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি কর্মচারীদের জন্য সহজ শর্তে গৃহ নির্মাণ ঋণ চালু করা হলেও, বাস্তব ক্ষেত্রে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা সেই সুবিধা থেকে কার্যত বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ নিতে গেলে তাদের পড়তে হচ্ছে উচ্চ সুদের কবলে, যা বর্তমান মূল্যস্ফীতির বাজারে তাদের জীবনযাত্রাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ ঋণের বৈষম্য

সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহ নির্মাণ ঋণ চালু করা হয়েছিল, যা একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে:

  • নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা উপেক্ষিত: ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করা হলেও, ব্যাংকগুলো প্রায়শই নিম্ন গ্রেডের (গ্রেড ১১ থেকে ২০) কর্মচারীদের ঋণ দিতে আগ্রহী হয় না বা কড়াকড়ি আরোপ করে। পর্যাপ্ত জামানত, দীর্ঘ চাকরির নিশ্চয়তা এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে ব্যাংকগুলো নিম্ন আয়ের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বেশি রক্ষণশীল থাকে।
  • আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্য: ব্যাংক যখন কোনো কর্মচারীর আয়ের বিপরীতে কিস্তির একটি নির্দিষ্ট অনুপাত নিশ্চিত করতে চায়, তখন স্বল্প বেতনের কারণে নিম্ন গ্রেডের কর্মীদের ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। এই সামান্য ঋণ দিয়ে বর্তমান বাজারে একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরি করা বা কেনা অসম্ভব। ফলে তারা গৃহ ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।

ব্যক্তিগত ঋণে উচ্চ সুদের বোঝা

যখন আবাসন বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জরুরি প্রয়োজনে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা গৃহ নির্মাণ ঋণের সুবিধা নিতে পারেন না, তখন তারা বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত ঋণের দিকে ঝোঁকেন। এই ক্ষেত্রেই তাদের সবচেয়ে বড় আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়:

  • উচ্চ সুদের হার: বর্তমানে বাজারে ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার ১৩% থেকে ১৪% বা তারও বেশি। এই উচ্চ সুদের কারণে কর্মচারীদের মাসিক কিস্তির (EMI) বোঝা অনেক বেড়ে যায়।
  • বেতনের বড় অংশ কিস্তিতে শেষ: স্বল্প বেতনের কারণে উচ্চ সুদের কিস্তি মেটানোর পর কর্মচারীদের হাতে জীবনধারণের জন্য খুব সামান্য অর্থ অবশিষ্ট থাকে। এতে তাদের খাদ্য, চিকিৎসা ও সন্তানের শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। কার্যত এই উচ্চ সুদহার তাদের ‘ঋণের ফাঁদে’ ফেলে দেয়।
  • সহজ সুদের দাবি: কর্মচারীদের দাবি, যেহেতু তারা রাষ্ট্রীয় সেবায় নিয়োজিত এবং তাদের চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত, তাই সরকারের উচিত বিশেষ বিবেচনায় তাদের জন্য ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার ৫%-এর মতো একটি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের উচিত গৃহ নির্মাণ ঋণের ক্ষেত্রে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া অথবা এই ঋণ বিতরণে সরকারের পক্ষ থেকে ঝুঁকি কমানোর নিশ্চয়তা (Credit Guarantee) দেওয়া। একই সঙ্গে, ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রেও তাদের জন্য একটি সুবিধাজনক সুদের হার নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে তারা আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে এবং কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *