সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন ২০২৫ । ‘সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫’ কার্যকর হচ্ছে ১৬ নভেম্বর?
কৃষকদের কাছে সময়মতো সার সহজলভ্য ও বিতরণ ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করতে বাংলাদেশ সরকার ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫’ প্রণয়ন করেছে । কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং শাখা কর্তৃক প্রকাশিত এই নীতিমালাটি আগামী ১৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে কার্যকর হবে ।
কৃষি বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির অনুমোদনক্রমে প্রণীত এই নতুন নীতিমালায় সার বিতরণ ব্যবস্থায় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।
🔑 নীতিমালার মূল বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তনসমূহ
নতুন নীতিমালার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
একক নীতিমালার প্রবর্তন: সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত বিদ্যমান দুটি পৃথক নীতিমালার পরিবর্তে বিসিআইসি, বিএডিসি ও বেসরকারি মাধ্যমে সংগৃহীত সার বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এটি একটি একক নীতিমালা ।
ডিলার ইউনিট সুনির্দিষ্টকরণ: ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনে সার ডিলার ইউনিটের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে ।
প্রতিটি ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) জন ডিলারকে দায়িত্ব দিতে হবে, যেখানে প্রতি তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে একটি ডিলার ইউনিট ।
প্রতিটি পৌরসভায় ৩ (তিন) জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া যাবে ।
সিটি কর্পোরেশনে ফসলি জমি ও ফসলের নিবিড়তার ওপর ভিত্তি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুপারিশের ভিত্তিতে ‘সার ডিলার সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি’ কর্তৃক ডিলারের সংখ্যা নির্ধারিত হবে ।
খুচরা বিক্রেতা ব্যবস্থা রহিতকরণ: অনিয়ন্ত্রিত সাব-ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা ব্যবস্থা রহিত করা হয়েছে ।
ডিলার ব্যতীত আলাদাভাবে কোনো সাব-ডিলার বা খুচরা সার বিক্রেতা থাকবে না ।
বিদ্যমান সাব-ডিলার বা খুচরা বিক্রেতারা ৩১ মার্চ ২০২৬ তারিখের মধ্যে তাদের সমুদয় দায়-দেনার নিষ্পত্তি করবেন এবং এই তারিখ পর্যন্ত তারা পূর্বের নিয়মে সার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন ।
বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন: ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিলাররা তাদের নির্ধারিত তিনটি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে , এবং পৌরসভার ডিলাররা সুবিধাজনক স্থানে অনধিক তিনটি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করবেন । সিটি কর্পোরেশনের ডিলাররা প্রয়োজনীয় সংখ্যক খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করতে পারবেন । ডিলাররা তাদের নির্ধারিত নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র ব্যতীত অন্য কোনো স্থান বা কারও মাধ্যমে সার বিক্রয় বা সরবরাহ করতে পারবে না ।
ডিলারশিপের বিভাজন নেই: ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫’ এর আওতাধীন সকল ডিলার ‘সরকার নিযুক্ত/সরকারি নিবন্ধনকৃত/সরকারি তালিকাভুক্ত সার ডিলার’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। এক্ষেত্রে বিসিআইসি ডিলার বা বিএডিসি ডিলার নামক কোনো বিভাজন থাকবে না । সকল ডিলার ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া উভয় প্রকার সার বরাদ্দ পাবেন ।
একই পরিবারে একাধিক ডিলারশিপ রহিতকরণ: একই পরিবারে একাধিক ডিলার নিয়োগের সুযোগ রহিত করা হয়েছে ।
নিয়োগের অগ্রাধিকার: নতুন ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ।
📝 ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া ও যোগ্যতার শর্ত
নতুন নীতিমালায় ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মানদণ্ড এবং প্রক্রিয়াকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে:
আবশ্যিক যোগ্যতা:
আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা হতে হবে ।
নিজস্ব বা ভাড়ায় সংশ্লিষ্ট কার্য এলাকায় কমপক্ষে ৫০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পাকা গুদাম থাকতে হবে ।
কমপক্ষে ১০.০০ লক্ষ টাকার ব্যাংক সচ্ছলতার সাম্প্রতিক সনদ থাকতে হবে ।
ন্যূনতম বয়স ১৮ (আঠারো) বছর হতে হবে এবং টিআইএন থাকতে হবে ।
নিয়োগ প্রক্রিয়া: ডিলার শূন্য থাকা সাপেক্ষে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে । প্রাপ্ত আবেদনপত্রগুলো উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি সরেজমিন যাচাই করে জেলা কমিটির নিকট প্রেরণ করবে । এরপর জেলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ‘সার ডিলার সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি’ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ।
জামানত ও চুক্তি: নির্বাচিত আবেদনকারীকে স্থায়ী জামানত হিসেবে ৫,০০,০০০.০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা পে-অর্ডার/ডিমান্ড ড্রাফট-এর মাধ্যমে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির অনুকূলে জমা দিতে হবে এবং ৩০০/- টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি ও অঙ্গীকারনামা সম্পাদন করতে হবে ।
🗓️ ডিলারশিপ নবায়ন
নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলারদের পরবর্তী প্রতি ২ (দুই) বছর অন্তর ডিলারশিপ নবায়ন করতে হবে । নবায়নের জন্য মেয়াদ উত্তীর্ণের ২ (দুই) মাস পূর্বে (এপ্রিল) জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির নিকট আবেদন করতে হবে এবং আবেদন ফি বাবদ ২,০০০ টাকা (অফেরতযোগ্য) জমা দিতে হবে । বার্ষিক পারফরম্যান্স রিপোর্টের ভিত্তিতে সন্তোষজনক ডিলারদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ডিলারশিপ নবায়ন করা হবে ।
নীতিমালাটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে (www.moa.gov.bd) প্রকাশ করা হয়েছে । এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে ০২-৫৫১০০৩৫১ বা ০২-৫৫১০০৪৯৫ নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে ।
এই নীতিমালার মাধ্যমে ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায় ।

সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সক্রান্ত সমম্বিত নীতিমালা-২০২৫
সারের ডিলারশীপে বড় পরিবর্তন কি? সার ডিলারশিপে যে বড় পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রধান এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো হলো:
১। একক নীতিমালার প্রবর্তন: পূর্বে সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত দুইটি পৃথক নীতিমালা ছিল। এখন সেগুলোর পরিবর্তে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫’ নামে একটি একক নীতিমালা কার্যকর করা হয়েছে । এই নীতিমালার আওতায় বিসিআইসি, বিএডিসি ও বেসরকারি মাধ্যমে সংগৃহীত সার বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে ।
২। সাব-ডিলার/খুচরা বিক্রেতা ব্যবস্থা রহিতকরণ: অনিয়ন্ত্রিত সাব-ডিলার বা খুচরা সার বিক্রেতা ব্যবস্থা রহিত করা হয়েছে । ডিলার ব্যতীত আলাদাভাবে কোনো সাব-ডিলার বা খুচরা সার বিক্রেতা থাকবে না । ডিলার কৃষক ব্যতীত অন্য কোনো বিক্রেতার নিকট সার বিক্রয় করতে পারবে না ।
৩। ডিলারশিপের বিভাজন নেই: নতুন নীতিমালার আওতাধীন সকল ডিলার সরকার নিযুক্ত, সরকারি নিবন্ধনকৃত ও সরকারি তালিকাভুক্ত সার ডিলার হিসেবে বিবেচিত হবেন । এক্ষেত্রে বিসিআইসি ডিলার বা বিএডিসি ডিলার নামক কোনো বিভাজন থাকবে না ।
৪। ডিলার ইউনিট সুনির্দিষ্টকরণ: ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনে সার ডিলার ইউনিটের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে । প্রতিটি ইউনিয়নে/পৌরসভায় সর্বোচ্চ ৩ (তিন) জন করে সার ডিলারকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে ।
৫। একই পরিবারে একাধিক ডিলার নিয়োগের সুযোগ রহিতকরণ: একই পরিবারের একজনের ডিলারশিপ থাকলে অপর কেউ আবেদন করতে বা ডিলার থাকতে পারবেন না । এই পরিবর্তনগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো সার বিতরণ ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করে কৃষকের নিকট সময়মতো সার সহজলভ্য করা ।

