এমপিও নীতিমালা-২০২৫ । বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় বড় পরিবর্তন?
বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ (এমপিও) সুষ্ঠুভাবে বণ্টন এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বহুল প্রতীক্ষিত ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২৫’ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় । গতকাল ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে (১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২) এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় । এই নতুন নীতিমালায় এমপিওভুক্তির শর্তাবলি, জনবল কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানের জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোরতা ও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নীতিমালার প্রধান লক্ষ্য ও পরিধি
নতুন নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি অংশের বেতন-ভাতা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ, উপযুক্ত জনবল কাঠামো প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট পদ্ধতিকে যুগোপযোগী করা । এই নীতিমালা দেশের নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এবং উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর কলেজসহ সংগীত কলেজ, শরীরচর্চা কলেজ, চারুকলা কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ও বিকেএসপি-এর মতো বিশেষ প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে ।
এমপিও প্রদানের ও মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণ করা হয়েছে ।
এমপিওভুক্তির আবশ্যিক শর্তে কঠোরতা
এমপিও পেতে হলে প্রতিষ্ঠানকে বেশ কয়েকটি কঠোর শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হলো:
জমির মালিকানা বাধ্যতামূলক: ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে না । এমপিও আবেদনের পূর্বে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমির মালিকানা, নামজারি ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণক থাকতে হবে ।
বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা: নীতিমালা জারির পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তিতে দোকান ঘর বা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না ।
শিক্ষার্থী ও পাসের হার: প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী এবং ন্যূনতম পাসের হার অর্জন করতে হবে, যা নীতিমালার পরিশিষ্ট ‘খ’ ও ‘গ’ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে ।
নিয়োগ প্রক্রিয়া: প্যাটার্নভুক্ত শূন্য পদে অবশ্যই বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে । এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ ও যোগদান কার্যক্রমে সরকারি নির্দেশ প্রতিপালন না করলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
জনবল কাঠামোতে পদবি পরিবর্তন ও সমন্বয়
নীতিমালায় বিভিন্ন স্তরের জনবল কাঠামোতে পদের সংখ্যা ও পদবিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৬ষ্ঠ-১০ম): এই স্তরের জন্য মোট ২৬ ধরনের পদ নির্ধারণ করা হয়েছে । এতে সহকারী শিক্ষক (পদার্থবিজ্ঞান) ও সহকারী শিক্ষক (রসায়ন) পদ রাখা হয়েছে । নীতিমালায় বলা হয়েছে, সহকারী শিক্ষক (ভৌত বিজ্ঞান) পদে কর্মরত কোনো শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি পদার্থবিজ্ঞান/রসায়নে স্নাতক বা সমমানের হয়, তবে ঐ শিক্ষককে সহকারী শিক্ষক (পদার্থবিজ্ঞান/রসায়ন) পদে সমন্বয় করতে হবে । সমন্বয়ের পর শূন্য পদে এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের জন্য চাহিদা প্রদান করতে হবে ।
কেরানিক পদবিতে পরিবর্তন: উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং স্নাতক (পাস) কলেজ উভয় ক্ষেত্রেই পূর্বে যারা “অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী” হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তাদের পদবী পরিবর্তিত হয়ে “হিসাব সহকারী” হবে ।
উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ (১১শ-১২শ): এই স্তরের জনবল কাঠামোতে ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ এর একটি পদ হ্রাস করা হয়েছে, ফলে মোট ১৬ ধরনের পদ থাকবে । তবে নীতিমালা জারির পূর্বে উক্ত পদে কর্মরত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত পদের বিধান (অনুচ্ছেদ ৪.৩) প্রযোজ্য হবে ।
নতুন জনবল কাঠামো অনুযায়ী, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট ১৯ ধরনের পদ , মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৬ ধরনের পদ , উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩২ ধরনের পদ এবং স্নাতক (পাস) কলেজে ১৮ ধরনের পদ থাকবে ।

পরিবর্তনটা কোথায় আসছে?
‘এমপিও নীতিমালা-২০২৫’-এ আসা প্রধান পরিবর্তনগুলো নিচে তুলে ধরা হলো, যা মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির শর্তাবলি, জমির ব্যবহার এবং জনবল কাঠামোতে এসেছে:
১. এমপিওভুক্তির শর্তে কঠোরতা (জমির মালিকানা ও বাণিজ্যিক স্থাপনা)
জমির মালিকানা বাধ্যতামূলক: এখন থেকে ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে না। এমপিও আবেদনের জন্য প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমির মালিকানা এবং হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণক থাকা আবশ্যক।
বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা: নীতিমালা জারির পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তিতে দোকান ঘর বা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
২. জনবল কাঠামো ও পদবিতে পরিবর্তন (কেরানিক ও বিজ্ঞান শিক্ষক)
‘হিসাব সহকারী’ পদবি সৃষ্টি: উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) কলেজগুলোতে পূর্বে যারা “অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী” হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তাদের পদবি পরিবর্তিত হয়ে এখন “হিসাব সহকারী” হবে।
বিজ্ঞান শিক্ষকের পদে সমন্বয়: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (পদার্থবিজ্ঞান) ও সহকারী শিক্ষক (রসায়ন) পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পূর্বে যারা ‘সহকারী শিক্ষক (ভৌত বিজ্ঞান)’ পদে কর্মরত ছিলেন এবং যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা পদার্থবিজ্ঞান/রসায়নে স্নাতক বা সমমানের, তাদের এখন সহকারী শিক্ষক (পদার্থবিজ্ঞান/রসায়ন) পদে সমন্বয় করা হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে পদ হ্রাস: উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জনবল কাঠামোতে ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’-এর একটি পদ হ্রাস করা হয়েছে (মোট ১৬ ধরনের পদ)।
৩. নিয়োগ ও কাম্য শিক্ষার্থী সংক্রান্ত পরিবর্তন
শিক্ষক নিয়োগে কড়াকড়ি: প্যাটার্নভুক্ত শূন্য পদে অবশ্যই বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
শিক্ষার্থী ও পাসের হারে জোর: এমপিও পেতে হলে প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই নীতিমালায় নির্ধারিত কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী এবং ন্যূনতম পাসের হার অর্জন করতে হবে।
এই পরিবর্তনগুলো নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৪.২ (এমপিওভুক্তির আবশ্যিক শর্ত), অনুচ্ছেদ ৪.৩ (উদ্বৃত্ত পদের বিধান), এবং বিভিন্ন স্তরের জনবল কাঠামো সংক্রান্ত পরিশিষ্ট অংশে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

