দেশে পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৪ । ই-পাসপোর্ট তৈরীর বিষয়ে এ টু জেড প্রক্রিয়া জেনে নিন
আজকে আপনাদের সমানে তুলে ধরব কিভাবে আপনি দেশে নতুন চালু হওয়া ই-পাসপোর্ট এর জন্য কিভাবে আবেদন করবেন নিজে নিজে ঘরে বসেই। প্রথমে আমরা বাংলাদেশের ডিপার্টমেন্ট অব ইমিগ্রেশন এন্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েব সাইট (https://www.epassport.gov.bd/instructions/instructions) এ প্রবেশ করব মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে। ওয়েব সাইটটিতে বাংলা অথবা ইংরেজীতে দুটি ভাষাতেই কাজ করতে পাববেন।
ওয়েব সাইটটির প্রথমেই রয়েছে কিভাবে ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের নির্দেশিকা। আবেদন ফরম পূরণ করার আগে এই নির্দেশিকা দেখে নিতে পারেন। প্রথমেই আমি ইংরেজী ভাষা নির্বাচন করে নিলাম। তারপর Apply Online অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করা পর যে পেইজটি আসবে তাতে Stpem-1 (প্রথম পদক্ষেপ) দেখে নিতে হবে আপনার নিকটবর্তী কোন পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনি ই-পাসপোর্ট নিতে পারবেন। এজন্য আপনাকে আপনার জেলা ও থানা সিলেক্ট করতে হবে। জেলা ও থানা সিল্কেট করার পর দেখে নেয়া যাবে কোন পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনি ই-পাসপোর্ট করতে পারবেন। আপনার জেলায় যদি ই-পাসপোর্ট চালু না হয়ে থাকে তাহলে নিকটবর্তী পাসপোর্ট অফিস দেখাবে। তার Continue এ ক্লিক করতে হবে।
Step-2 এই স্টেপে আপনার ইমেইল আইডি চাইবে। অবশ্যই আপনার পারছনাল একটি Valied ইমেইল আইডি লিখতে হবে। যদি নিচে I am not robot অপশনটিতে ক্লিক করে Continue তে ক্লিক করতে হবে।
Step- 3 Enter your account information এই স্টেপে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। প্রথমে পাসওয়ার্ড দিতে হবে। পাসওয়ার্ড টি অবশ্যই হতে হবে ইংরেজী অক্ষর, নম্বর এবং বিশেষ চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে। কমন অক্ষর বা নম্বর ব্যবহার করা ঠিক হবে না। যেমনঃ Akas759@# এমন হতে হবে। তারপর দিতে হবে আপনার পূর্ণ নাম। অবশ্যই আপনার ন্যাশনার আইডি কার্ড/জন্ম নিবন্ধনে এ যে নামটি আছে ওইটা ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোন নাম ব্যবহার করা যাবে না। তারপর দিতে হবে Given Name ও Surname। অনেকেই এই অপশনটাতে একটু সমস্যায় পরে যান যে Given name এবং Surname কোনটা। ধরুন আপনার নামে দুইটা অংশ আছে যেমনঃ Jishan Bishaws তো আপনার নামের প্রথম অংশ Jishan হবে given name এবং Bishawas হবে Surname। তারপর আপনাকে দিতে হবে Contact Infomation যেখানে আপনার একটি সচল মোবইল নম্বর দিতে হবে। যে নম্বরে আপনি ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত সকল এসএমএস/কল গ্রহণ করতে পারেন। তারপর Continue এ ক্লিক করতে হবে। ই পাসপোর্ট কি? ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের নির্দেশাবলী ২০২৪
Step-4 Active e-passport account এই স্টেপে আপনাকে ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত একাউন্টটি একটিভ করার জন্য আপনি যে ইমেইল আইডিটি আগে প্রদান করেছিলেন তাতে একটি মেইল যাবে। ওই মেইলে প্রদত্ত লিঙ্ক এ ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার ই-পাসপোর্ট একাউন্টটি একটিভ হয়ে যাবে এবং Enter Online Regestration Portal অপশন আসবে। যেখানে আপনার ইমেইল আইডি এবং সেটকৃত পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন Login করতে হবে। login করার পর Apply for new e-passport অপশনে ক্লিক করতে হবে। তারপর নতুন একটি পেইজ অপেন হবে। নতুন পেইজটিতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করার কয়েকটি অপশন থাকবে। এখানে আপনি আপনার নিজের জন্য অথবা পরিবারের অন্য সদস্য এর জন্য ই-পাসপোর্ট এর আবেদন করতে পারবেন। ধরুন আপনি নিজের জন্যই ই-পাসপোর্ট তৈরি করতে চাচ্ছেন।
সেক্ষেত্রে প্রথমেই I apply for mesefl অপশটিতে টিক মার্ক করে দিতে হবে। তারপর Gender(Male /Female/Other) সিলেক্ট করতে হবে। তারপর আপনার পেশা। এখানে প্রায় সকল ধরণের পেশার নামই যুক্ত করা আছে তা থেকে আপনি আপনারটা সিল্কেট করে নিবেন। তারপর সিল্কেট করতে হবে ধর্ম Select Relegion অপশন থেকে আপনি কোন ধর্মের তা নির্বাচন করুন। এখন দিতে হবে আপনার জন্মগত তথ্য কোন দেশে জন্ম গ্রহণ করেছেন, কোন জেলায় এবং তারিখ কত। তার পরের অপশনটিতে আপনাকে সিল্কেট করতে হবে আপনিকি জন্ম সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক কি না। তারপর আপনার অন্য কোন দেশের পাসপোর্ট আসে কিনা সেটা সিল্কেট করে দিতে হবে। যদি থাকে তাহলে সেই পাসপোর্ট এর তথ্য এখানে দিতে হবে আর না থাকলে No, I don’t have সিল্কেট করে দিতে হবে। এখন দিতে হবে আপনার National ID Card নম্বর। সকল তথ্য দিয়ে Save and continue বাটনে ক্লিক করলে নতুন একটি পেইজ আসবে।
এই পেইজে আপনাকে দিতে হবে আপনার পুরাতন পাসপোর্ট এর তথ্য। যদি Machine Readable/E Pasport থেকে থাকে তাহলে তার সঠিক তথ্য দিয়ে Save and continue বাটনে ক্লিক করতে হবে।
নতুন যে পেইজটি আসবে তাতে আপনার স্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে। আপনার যদি জাতীয় পরিচয় কার্ড থাকে হবে সে অনুযায়ী আপনি তথ্যগুলো পূরণ করবেন। আর যদি জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধন কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী তথ্য দিতে হবে। তারপর দিতে হবে বর্তমান ঠিকানা। বর্তমানে আপনি যেখানে আছেন সেই ঠিকানার তথ্য দিয়ে দিতে হবে। এখানে বলে রাখা ভাল যদি আপনি স্থায়ী আর বর্তমান ঠিকানা ভিন্ন ঠিকানা হয় তাহলে পুলিশ ভেরিফিকেশন দুই ঠিকানা তেই হবে। তাতে শুধু ঝামেলাই বারবে। এই জন্য বর্তমান ঠিকানাও স্থায়ী ঠিকানা একই রাখবেন। এখানে বর্তান ঠিকানায় Present address is the same as Permanent অপশনটিতে টিক মার্ক করে দিতে হবে।
Save and Continue তে ক্লিক করলে আসবে Parental Information পেইজটি। এই পেইজে দিতে হবে পিতামার তথ্য। পিতার নাম (জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী), পেশা, কোন দেশের নাগরিক এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিতে হবে। ঠিক একই ভাবে মাতার তথ্য দিতে হবে। তারপর দিতে হবে আপনার অভিবাবকের তথ্য। যদি কোন অভিবাবক থাকে তাহলে তার তথ্য দিতে পারেন। না দিতে চাইলে নাও দিতে পারেন। Save and Continue দিবেন।
এই পেইজটিতে আপনার বৈবাহিক অবস্থার তথ্য দিতে হবে। আপনি যদি অবিবাহিত হন তাহলে Single আর বিবাহিত হলে আপনার স্ত্রীর তথ্য দিতে হবে। তারপর Save করার পর আসবে জরুরী নম্বর প্রদানের অপশন যেখানে আপনি আপনার পিতা/মাতা, ভাই/বোন, স্ত্রী বা অন্য কারো তথ্য দিতে পারেন। সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে দিবেন। তথ্য পূরণ করা হলে Save and Continue দিবেন।
নতুন যে পেইজটি আসবে এখানে আপনাকে সিল্কেট করতে হবে আপনি পাসপোর্টটি কত পেইজের চান। পাসপোর্ট এর পেইজ এবং সময় (বছর) এর উপর নির্ভর করে এর ফি কম/বেশি হবে। ৪৮ পেইজের ৫ বছরের নিলে এক ফি আবার ১০ বছরের নিলে বেশি ফি দিতে হবে। আপনার যদি বেশি পেইজ এর প্রয়োজন হয় তাহলে বেশি পেইজের জন্য আবেদন করতে পারেন। যেমনঃ ৪৮ পেইজ ৫ বছরের জন্য ফি আসবে ৪০৫০ টাকা। Save and Continue দিবেন। এবার আসবে Delivery Option। আপনি পাসপোর্ট Regular Delivery নিবেন নাকি Express Delivery নিবেন। Regular নিলে ২১ দিনে পাসপোর্ট পাবেন আর Express নিলে ১৫ দিনে পাসপোর্ট হাতে পাবেন। এখানে বলে রাখি Express নিলে কিন্তু পাসপোর্ট ফি বেড়ে যাবে। অপশন সিল্কেট করে Save and Continue দিবেন।
নতুন পেইটিতে আপনি যে তথ্য গুলো এখন পর্যন্ত দিয়েছেন সেই তথ্য গুলো চলে আসবে। পাসপোর্ট তৈরিতে অবশ্যই কোন ভুল তথ্য প্রদান করা যাবে। তাই আপনার দেয়া তথ্য গুলো ৩/৪ ভাল করে চেক করে নিবেন। দেখে নিবেন কোন ভুল তথ্য ইনপুট করেছেন কিনা। যদি ভুল থাকে তাহলে ইডিট করে নিবেন। নিজের নাম বানান, পিতা/মাতার নামের বানান, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি রিচেক করে নিতে হবে। যদি সকল তথ্য ঠিক থাকে তহালে Conrim and proseed to Payment এ ক্লিক করবেন।
এখন আসবে পেমেন্টে অপশন। পেমেন্ট আপনি দুই ভাবে করতে পারবেন। অনলাইনে করতে পারেন আবার অফলাইনেও করতে পারেন। অফলাইনে আপনি নির্ধারতি ব্যাংকের ব্রান্স সশরিরে গিয়ে টাকা জমা দিতে পারেন। অনলাইনে আপনি বিকাশ/নগদ অথবা ভিসা কার্ড এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে পারেন।
এখন আপনাকে একটি সিডিউল নিতে হবে। আপনি কোন তারিখে গিয়ে ফরমটি জমা দিবেন সেই তারিখ নির্বাচন করতে হবে এবং কখন জমা দিবেন সেই সময়টি নির্বাচন করে দিতে হবে। যেই তারিখ এবং সময় নির্বাচন করবেন সেই সময় গিয়ে আপনি আপনার কাগজপত্র জমা দিবেন তারপর Confirm করে দিবেন। অবশ্যই সরকারী ছুটির বাদ দিয়ে সিডিউল নিতে হবে।
Confirm করার পর আপনার Application টি ডাউনলোড করতে হবে। ডাউনলোডকৃত ফরমটিতে সকল তথ্য থাকবে। আপনি সকল তথ্য আবার চেক করে নিবেন। এখন ফরমটিতে আরেও কিছু তথ্য দিতে হবে। যদি আপনি Pre-Police Clearance নিয়ে থাকেন তাহলে Police Clearanc রেফারেন্স নাম্বার এবং তারিখ দিতে হবে। হারানো/চুরি যাওয়া পাসপোর্ট এর তথ্য যেমন জিডি নং এবং তারিখ কোন জেলায় ও থানায় জিডি করা হয়েছে এই তথ্য গুলো হাতে লিখে দিতে হবে।
Bank Payment Information (ফি সংক্রান্ত তথ্য)
এখানে ব্যাংকের নাম, ফির রেফারেন্স নং, ফি প্রদানের তারিখ এবং জমাকৃত ফি এর তথ্য হাতে লিখে দিতে হবে।
সবশেষে বলে দিচ্ছি ই-পাসপোর্ট এর আবেদনের সাথে কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি অথবা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি, পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকপি, যদি আবেদনে বিবাহিত উল্লেখ্য করে থাকেন তাহলে নিকাহনামার ফোটকপি, কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে থাকলে ঔ প্রতিষ্ঠানের NOC প্রযোয্য ক্ষেত্রে, GO (সরকারি ভাবে কোথাও গেলে আদেশের কপি), সরকারি চাকরি করে থাকলে অবসর গ্রহণের প্রমানপত্র, আবেদনের আগেই প্রাক পুলিশ প্রতিবেদন নিয়ে থাকলে তার মূলকপি, পাসপোর্ট হাড়িয়ে গেলে তার জিডির মূলকপি এবং অন্যান কাজগপত্রাদির কপি।
সবশেষে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে স্বাক্ষর ও তারিখ দিয়ে আপনার সিডিউল অনুযায়ী আবেদনে উল্লেখিত পাসপোর্ট অফিসে জমা প্রদান করতে হবে। সিডিউল তারিখে পাসপোর্ট অফিস আপনার ছবি গ্রহণ, হাতের ছাপ এবং চোখের স্ক্যান সম্পন্ন করবেন। পাসপোর্ট অফিস নির্দিষ্ট সময় শেষে আপনাকে এসএমএস/মেইল এর মাধ্যমে পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ ও সময় জানিয়ে দিবে।
Pingback: পাসপোর্ট ও জন্ম সনদে ভুল থাকলে করণীয় ২০২৩ । জন্ম নিবন্ধন নাম কমপক্ষে ২ শব্দ বিশিষ্ট হতে হবে কেন? - Te