বাড়ির মালিকদের আয়কর নির্ণয় ২০২৫ । ভাড়া থেকে আয়ের উপর কিভাবে কর ধার্য্য করা হয়? - Technical Alamin
সরকারি আদেশ ও তথ্য

বাড়ির মালিকদের আয়কর নির্ণয় ২০২৫ । ভাড়া থেকে আয়ের উপর কিভাবে কর ধার্য্য করা হয়?

সূচীপত্র

২০২৫-২০২৬ কর বছরের জন্য বাড়ির মালিকদের আয়কর নির্ধারণ এবং ভাড়া থেকে আয়ের ওপর কর ধার্যের পদ্ধতি নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। মনে রাখা উচিত, কর আইন ও হার সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়, তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইট বা একজন পেশাদার কর উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যাবশ্যক– বাড়ির মালিকদের আয়কর নির্ণয় ২০২৫

ভাড়া থেকে আয় কীভাবে নির্ধারণ করা হয়? আপনার বাড়ি বা সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত মোট ভাড়ার ওপর সরাসরি কর ধার্য করা হয় না। বরং, মোট ভাড়া থেকে কিছু অনুমোদিত খরচ বাদ দিয়ে নিট ভাড়া আয় (Net Rental Income) বের করা হয়, এবং এই নিট আয়ের ওপরই কর দিতে হয়। আপনার বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এক বছরে প্রাপ্ত মোট ভাড়া। এর মধ্যে অগ্রিম, বকেয়া বা অন্য কোনো প্রাপ্তিও অন্তর্ভুক্ত হবে।

অনুমোদিত খরচ কত টাকা? মোট ভাড়া থেকে আপনি নিম্নলিখিত খরচগুলো বাদ দিতে পারবেন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ আপনার সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য একটি নির্দিষ্ট শতাংশ (স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন) স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ দেওয়া হয়।

  • আবাসিক সম্পত্তির জন্য: মোট ভাড়ার ২৫%।
  • বাণিজ্যিক সম্পত্তির জন্য: মোট ভাড়ার ৩০%।

হোল্ডিং ট্যাক্স ও অন্যান্য কর: সম্পত্তির ওপর যে হোল্ডিং ট্যাক্স, পৌরকর বা ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া হয়, তা বাদ যাবে।

বীমা প্রিমিয়াম: যদি সম্পত্তির জন্য কোনো বীমা করা হয়ে থাকে, তার প্রিমিয়াম।

ঋণের সুদ: যদি সম্পত্তিটি কেনা বা নির্মাণের জন্য কোনো ঋণ নেওয়া হয়ে থাকে, সেই ঋণের ওপর পরিশোধিত সুদ।

অন্যান্য খরচ: পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য সেবার জন্য ভাড়াটিয়া থেকে প্রাপ্ত সার্ভিস চার্জ বাদ দেওয়া যাবে। মোট ভাড়া থেকে উপরের খরচগুলো বাদ দিলে যে পরিমাণ অর্থ থাকে, তা-ই হলো আপনার নিট ভাড়া আয়। এই আয়ের সঙ্গে আপনার অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় (যেমন: বেতন, ব্যবসা, ইত্যাদি) যোগ করে মোট করযোগ্য আয় হিসাব করা হয়।

আপনার বাড়ি বা সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত মোট ভাড়ার ওপর সরাসরি কর ধার্য করা হয় না। বরং, মোট ভাড়া থেকে কিছু অনুমোদিত খরচ বাদ দিয়ে নিট ভাড়া আয় বের করা হয় এবং এই নিট আয়ের ওপরই কর দিতে হয়।

মোট ভাড়া আয় থেকে যা বাদ দেওয়া যাবে: মোট ভাড়া আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ হিসাবে বাদ দেওয়া হয়।আবাসিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে: মোট ভাড়ার ২৫% বাণিজ্যিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে: মোট ভাড়ার ৩০% সম্পত্তির কর: সম্পত্তি বা হোল্ডিং ট্যাক্স এবং পৌরকর। বীমা খরচ: সম্পত্তির জন্য যদি কোনো বীমা করা হয়, তার প্রিমিয়াম। ঋণের সুদ: বাড়ি কেনা বা তৈরির জন্য যদি কোনো ঋণ নেওয়া হয়ে থাকে, তবে সেই ঋণের উপর প্রদত্ত সুদ। এই অনুমোদিত খরচগুলো বাদ দেওয়ার পর যা থাকে, তা-ই হলো আপনার নিট ভাড়া আয়। এই আয়ের সঙ্গে আপনার অন্যান্য আয় (যেমন: চাকরি, ব্যবসা, ইত্যাদি) যোগ করে মোট করযোগ্য আয় হিসাব করা হয়।

Caption: আয়কর নির্দেশিকা (২০২৪-২০২৫)

২০২৫-২০২৬ কর বছরের জন্য আয়করের হার । ২০২৫-২০২৬ কর বছরের জন্য সাধারণ ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য আয়করের হার নিম্নরূপ:

  1. প্রথম ৳৩,৫০,০০০ পর্যন্ত আয়ে: শূন্য (কোনো কর নেই)

     

  2. পরবর্তী ৳১,০০,০০০ পর্যন্ত আয়ে: ৫%

     

  3. পরবর্তী ৳৪,০০,০০০ পর্যন্ত আয়ে: ১০%

     

  4. পরবর্তী ৳৫,০০,০০০ পর্যন্ত আয়ে: ১৫%

     

  5. পরবর্তী ৳৫,০০,০০০ পর্যন্ত আয়ে: ২০%

     

  6. পরবর্তী ৳২০,০০,০০০ পর্যন্ত আয়ে: ২৫%

     

  7. অবশিষ্ট আয়ের ওপর: ৩০%

     

  8. বিশেষ ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা: মহিলা ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী জ্যেষ্ঠ নাগরিক: ৳৪,০০,০০০

     

     

  9. প্রতিবন্ধী ব্যক্তি: ৳৪,৭৫,০০০

     

  10. গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: ৳৫,০০,০০০

     

  11. তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা: ৳৪,৭৫,০০০

     

  12. উপরোক্ত সীমাগুলো অতিক্রম করলে ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হবে। ন্যূনতম করের পরিমাণ এলাকাভেদে ৳৩,০০০ থেকে ৳৫,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

১ লাখ টাকা নীট আয় হলে কর কত আসবে?

একজন সাধারণ করদাতা (পুরুষ) ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে (২০২৫-২০২৬ কর বছরের জন্য) বাড়ি ভাড়া থেকে নিট আয় করেছেন ৳১০,০০,০০০ এবং তার অন্য কোনো আয় নেই।

  • প্রথম ৳৩,৫০,০০০: কর শূন্য
  • পরবর্তী ৳১,০০,০০০: ৫% = ৳৫,০০০
  • পরবর্তী ৳৪,০০,০০০: ১০% = ৳৪০,০০০
  • অবশিষ্ট ৳১,৫০,০০০: ১৫% = ৳২২,৫০০
  • মোট কর: ৳৫,০০০ + ৳৪০,০০০ + ৳২২,৫০০ = ৳৬৭,৫০০

এই করের পরিমাণ বিনিয়োগজনিত রেয়াত (যদি থাকে) বিবেচনার পর চূড়ান্ত করা হবে। ২০২৫-২০২৬ কর বছর থেকে সকল ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কর সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য সরাসরি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা তাদের প্রকাশিত নির্দেশিকা (Income Tax Nirdeshika) অনুসরণ করা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। আপনার পরিস্থিতি যদি জটিল হয়, তাহলে একজন অভিজ্ঞ আয়কর উপদেষ্টার সাহায্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

বাড়ি ভাড়ার রিটার্ন কি অনলাইনে দেওয়া যাবে? ২০২৫-২০২৬ কর বছর থেকে বাড়ি ভাড়াসহ সকল ধরনের আয়ের অনলাইন রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন থেকে, আপনি বাড়ি ভাড়ার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করতে পারবেন।

অনলাইন রিটার্ন দাখিলের সুবিধা:

  • সহজ এবং দ্রুত: ঘরে বসেই যেকোনো সময় রিটার্ন দাখিল করা যায়।
  • ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম: সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব-নিকাশ করে, ফলে ভুলের সম্ভাবনা কমে যায়।
  • সময় সাশ্রয়: আয়কর অফিসে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না।
  • সহজে প্রমাণ সংরক্ষণ: দাখিলকৃত রিটার্ন, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র এবং অন্যান্য নথি ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ করা যায়।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:

  • অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার সময় আপনাকে কিছু তথ্য এবং নথি হাতে রাখতে হবে, যেমন:
  • আপনার মোট বাড়ি ভাড়া আয়।
  • বাড়ি বা সম্পত্তির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ (স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন)।
  • হোল্ডিং ট্যাক্স, বীমা প্রিমিয়াম, ঋণের সুদ ইত্যাদি পরিশোধের প্রমাণপত্র।
  • আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর।
  • ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন নাম, ঠিকানা, পেশা ইত্যাদি।
  • অন্যান্য আয়ের উৎস থাকলে সেগুলোর বিবরণ।
১. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.nbr.gov.bd/) গিয়ে অনলাইন আয়কর রিটার্ন পোর্টালে (Online Income Tax Return Portal) প্রবেশ করতে হবে।২. আপনার ই-টিআইএন (e-TIN) ব্যবহার করে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।৩. প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
৪. সফলভাবে দাখিল করার পর আপনি একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র (acknowledgement receipt) পাবেন, যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।যেকোনো ধরনের সমস্যার জন্য NBR-এর হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা একজন পেশাদার কর উপদেষ্টার সাহায্য নিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *