ভূমি ব্যবস্থাপনার লুকানো দলিল ২০২৫ । আপনার খতিয়ানের ভুল শোধরাতে পারে 'ওয়ার্কিং ভলিউম' - Technical Alamin
ভূমি সেবা অনলাইন

ভূমি ব্যবস্থাপনার লুকানো দলিল ২০২৫ । আপনার খতিয়ানের ভুল শোধরাতে পারে ‘ওয়ার্কিং ভলিউম’

সূচীপত্র

বাংলাদেশের ভূমি রেকর্ডে যেকোনো ভুল, অসঙ্গতি বা মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এক নীরব সাক্ষী হিসেবে কাজ করে ‘ওয়ার্কিং ভলিউম’। ভূমি ব্যবস্থাপনায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাধারণ জনগণের কাছে শব্দটি অনেকটাই অপরিচিত। সম্প্রতি জমি-জমা সংক্রান্ত মামলা এবং খতিয়ানে তথ্যগত ত্রুটির ক্রমবর্ধমান সমস্যার প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা এই ‘ওয়ার্কিং ভলিউম’ পরীক্ষা করার ওপর জোর দিচ্ছেন।

👀 কী এই ‘ওয়ার্কিং ভলিউম’, যা আপনার জানা প্রয়োজন?

সাধারণভাবে আমরা যে খতিয়ান (পর্চা) হাতে পাই, তা হলো একটি প্রক্রিয়াজাত চূড়ান্ত ফল। কিন্তু এই ফলটি তৈরির পেছনে যে ব্যাপক যাচাই-বাছাই, সংশোধন, আপত্তি গ্রহণ এবং মাঠ পর্যায়ের তথ্যের হিসাব নিকাশ রয়েছে, সেটিই লিপিবদ্ধ থাকে একটি খসড়া খাতায়, যার নাম ‘ওয়ার্কিং ভলিউম’। এটিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার খতিয়ান প্রস্তুতের ‘অফিসিয়াল খসড়া খাতা’ বা ‘প্রসেসিং রেকর্ড বুক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

সহজ কথায়, এটি আপনার জমির মালিকানার চূড়ান্ত রেকর্ডের (খতিয়ানের) ‘পেছনের গল্প’

🔑 খতিয়ানে ভুল, কিন্তু কেন?

ভূমি জরিপ চলাকালীন সময়ে অনেক সময় সামান্য অসাবধানতা, মৌখিক তথ্যের ভুল বোঝাবুঝি, বা অন্য কোনো কারণে খতিয়ানে ভুল তথ্য চলে আসতে পারে। যেমন:

  • মালিকের নাম/ঠিকানায় ভুল: টাইপিং ত্রুটি বা তথ্য সরবরাহকারীর ভুল।

  • দাগ নম্বর বা জমির পরিমাণে গরমিল: মাঠ পর্যায়ের পরিমাপে ভুল।

  • অংশীদারের তথ্যে অস্পষ্টতা: শরিকদের সঠিক হিস্যা রেকর্ডে না আসা।

যদি আপনার প্রকাশিত খতিয়ানে (RS, SA বা CS) এমন কোনো ভুল থাকে, তবে ওয়ার্কিং ভলিউমই প্রমাণ করতে পারে যে আসল তথ্য কী ছিল এবং কী প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত খতিয়ানটি তৈরি হয়েছিল।

⚖️ বিরোধ নিষ্পত্তিতে কার্যকরী প্রমাণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমির মালিকানা নিয়ে যদি আদালতে কোনো মামলা দায়ের হয়, তবে ওয়ার্কিং ভলিউম একটি ‘কার্যকরী প্রমাণ’ হিসেবে বিবেচিত হয়। যেহেতু এটি সরাসরি ভূমি জরিপ কর্মকর্তার মন্তব্য, সুপারিশ, এবং আপত্তির শুনানির বিবরণ বহন করে, তাই আদালত এই দলিলকে জমির ইতিহাসের মূল উৎস হিসেবে গ্রহণ করে।

  • মূল তথ্য যাচাই: এটি জমির মালিক/দাবিদারের নাম, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণের মতো কোর ডেটা যাচাই করতে সহায়তা করে।

  • আপত্তি ট্র্যাকিং: কোনো ব্যক্তি যদি জরিপের সময় আপত্তি জানিয়ে থাকেন, তার বিস্তারিত বিবরণ এখানে পাওয়া যায়।

  • পুরনো রেকর্ড ট্রেসিং: এটি CS, SA, RS-এর মতো পুরনো জরিপের ধারাবাহিকতা বুঝতেও অপরিহার্য।

📍 কোথায় মিলবে এই গুরুত্বপূর্ণ দলিল?

এই দলিলটি সাধারণত জেলা রেকর্ড রুম (জেলা ভূমি অফিস), উপজেলা ভূমি অফিস, বা সংশ্লিষ্ট জরিপ অফিস (সেটেলমেন্ট অফিস)-এ সংরক্ষিত থাকে।

তবে সাধারণ মানুষের জন্য এটি সরাসরি হাতে পাওয়া সহজ নয়, কারণ এটি একটি সরকারি গোপনীয় নথি। তবে আইন অনুযায়ী, নাগরিকরা তথ্য জানার অধিকার (RTI) আইনে আবেদন করে এটি দেখতে পারেন অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী নকল উত্তোলনের আবেদন করতে পারেন। মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনে কোর্টের আদেশে সনদ/তথ্য নেওয়া সম্ভব।

📢 সচেতনতার আহ্বান

ভূমি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, যারা জমির জটিলতা নিয়ে ভুগছেন, তাদের উচিত শুধু প্রকাশিত সার্টিফিকেট কপি নয়, বরং ওয়ার্কিং ভলিউমটিও যাচাই করার উদ্যোগ নেওয়া। এই ভলিউম বিশ্লেষণ করলে জমির ইতিহাসের অনেক অজানা অধ্যায় ও তথ্যের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়, যা আইনি লড়াইয়ে আপনার অবস্থানকে সুসংহত করতে পারে।

সুতরাং, আপনার জমির কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে, চূড়ান্ত রেকর্ডের ‘পেছনের দলিল’ বা ‘ওয়ার্কিং ভলিউম’ পরীক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।

ওয়ার্কিং ভলিউম কি?

খতিয়ানের ‘ওয়ার্কিং ভলিউম’ হলো বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল খসড়া খাতা বা দলিল

সহজভাবে বললে, এটি হলো চূড়ান্ত খতিয়ান (পর্চা) তৈরির আগের মূল তথ্য ও হিসাব নিকাশের রেকর্ড বুক

📑 ওয়ার্কিং ভলিউমের মূল পরিচয়:

  • নাম: এটি ‘প্রসেসিং রেকর্ড বুক’ বা ‘অফিসিয়াল খসড়া খাতা’ নামেও পরিচিত।

  • সংজ্ঞা: এটি সেই নথি, যেখানে ভূমি জরিপ চলাকালীন সময়ে মাঠ পর্যায়ের সব যাচাই-বাছাই, সংশোধনী, আপত্তির শুনানি এবং ভূমি জরিপ কর্মকর্তার মন্তব্য ও সুপারিশ বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ থাকে।

  • গুরুত্ব: খতিয়ানে যদি কোনো ভুল, অসঙ্গতি বা মালিকানা নিয়ে জটিলতা থাকে, তবে আসল তথ্য ও সেই ভুল সংশোধনের ভিত্তি এই ওয়ার্কিং ভলিউমেই পাওয়া যায়। আদালতে জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে এটি একটি শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।

📘 ওয়ার্কিং ভলিউমে সাধারণত যা থাকে:

  1. জমির মালিক বা দাবিদারের নাম ও ঠিকানা

  2. দাগ নম্বর এবং জমির সঠিক পরিমাণ

  3. একই দাগে অন্যান্য অংশীদারের তথ্য

  4. কোনো আপত্তি, আপিল বা দখল সংক্রান্ত বিরোধের বিবরণ

  5. রেকর্ডের সংশোধনের কারণ ও ভিত্তি

  6. ভূমি জরিপ বা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার মন্তব্য বা সুপারিশ

সংক্ষেপে, এটি আপনার জমির ইতিহাসের মূল উৎস এবং চূড়ান্ত রেকর্ডের (খতিয়ানের) ভিত্তি।

কিভাবে খতিয়ানে রেকর্ড করা হল তার বিস্তারিত বিবরণ লিখা থাকে তাকে ওয়াকিং খতিয়ান বলে এটি পাবেন। জেলা রেকর্ড রোমে, সেটেলমেন্ট অফিস, ভুমি জরিপ অধিদপ্তর ঢাকা তেজগাঁও যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *