অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাধ্যতামূলক ২০২৫ । সরকারি হাসপাতালে টিকিট পেতে নতুন নিয়ম কি? - Technical Alamin
সরকারি আদেশ ও তথ্য

অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাধ্যতামূলক ২০২৫ । সরকারি হাসপাতালে টিকিট পেতে নতুন নিয়ম কি?

সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে (ফুলবাড়িয়া, ঢাকা) বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে। আগামী ৮ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখ থেকে পূর্বনির্ধারিত অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া কোনো রোগীকে বহির্বিভাগের টিকিট দেওয়া হবে না। রোগী ভোগান্তি কমাতে এবং চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই নতুন নিয়ম চালু করছে।

রবিবার (২৬ অক্টোবর, ২০২৫) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নির্ধারিত তারিখ থেকে বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক দেখানো বা চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য অবশ্যই অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে।

কারা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন এবং নিয়মাবলি:

  • সরকারি সুবিধাভোগী: সরকারি কর্মচারী, তাঁদের পরিবারের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং হাসপাতালের আউটসোর্সিং স্টাফ—এঁদের অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হলে পূর্বে হাসপাতালে নিবন্ধিত থাকতে হবে। অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করতে হবে।
  • প্রথমবার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে: যারা এখনো নিবন্ধিত নন, তারা প্রথমবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ হাসপাতালে এসে নিবন্ধন করে সেই দিনের জন্য সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন। তবে পরবর্তীতে তাঁদের অবশ্যই অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
  • বেসরকারি ব্যক্তি: বেসরকারি ব্যক্তি হিসাবে চিকিৎসা সেবা গ্রহনের ক্ষেত্রে পূর্বে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়।
  • জরুরি বিভাগ: জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্টের কোনো প্রয়োজন নেই।
  • রেফার করা রোগী: হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বা অন্তঃবিভাগ থেকে বহির্বিভাগে রেফার করা রোগীদের ক্ষেত্রে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রয়োজন হবে না।
  • অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ পদ্ধতি: প্রত্যাশিত দিনের ৬ দিন আগে থেকে এবং নির্ধারিত দিনে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত হাসপাতালের ওয়েবসাইট (www.skh.gov.bd)-এ প্রবেশ করে “অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট” মেনু থেকে এই সেবা গ্রহণ করা যাবে।
  • সময়সীমা: দুপুর ১টার পর টিকিট কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট দেওয়া হবে না।

কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই পদক্ষেপের ফলে রোগীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহের ঝামেলা এড়াতে পারবেন এবং সুশৃঙ্খলভাবে নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে সক্ষম হবেন। এই উদ্যোগ সরকারি হাসপাতালগুলোতে উন্নত ও সময়োপযোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত করার পর মোবাইলে প্রাপ্ত মেসেজ বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আইডি দেখিয়ে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করে পুনরায় নেওয়াও যাবে।

অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার পদ্ধকি জটিলতা বাড়িয়ে দিল?

হ্যাঁ, অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্টের নতুন নিয়মটি অনেক রোগীর জন্য প্রাথমিকভাবে জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে যারা প্রযুক্তির ব্যবহারে অভ্যস্ত নন বা হাসপাতালে প্রথমবার চিকিৎসা নিতে আসছেন।

নতুন নিয়মটি মূলত সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে বহির্বিভাগে টিকিট সংগ্রহকে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্টের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করেছে।

নিচের বিষয়গুলো এই জটিলতাগুলো তুলে ধরে:


১. প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ

  • ডিজিটাল বিভেদ: বয়স্ক বা কম শিক্ষিত রোগীদের জন্য ইন্টারনেটে প্রবেশ করা, হাসপাতালের ওয়েবসাইটে যাওয়া এবং সঠিকভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফর্ম পূরণ করা কঠিন হতে পারে।
  • নির্ভরশীলতা: অনেকেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য পরিবারের বা অন্য কারো সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন।

২. পূর্ব-নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা

  • সরকারি কর্মচারী/সুবিধাভোগীদের জন্য: এই ক্যাটাগরির রোগীদের অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই হাসপাতালে নিবন্ধিত থাকতে হবে। যারা আগে নিবন্ধিত নন, তাদের প্রথমবার কাগজপত্র নিয়ে হাসপাতালে এসে নিবন্ধন ও সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। এই দুই ধাপে কাজ করার প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ ও বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

৩. মোবাইল নম্বরের ব্যবহার

  • নির্দিষ্ট নম্বর: অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিই ব্যবহার করতে হবে। অন্য নম্বর ব্যবহার করলে যাচাইয়ে ভিন্নতা দেখা দিলে সরকারি কর্মচারী হিসেবে চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে মোবাইল নম্বর পরিবর্তনকারীদের বা ভুল নম্বর ব্যবহারকারীদের অতিরিক্ত ভোগান্তি হবে।

৪. অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল ও পুনরায় গ্রহণ

  • অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করার এবং পুনরায় নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার পদ্ধতিও অনেক রোগীর কাছে অপরিচিত ও জটিল মনে হতে পারে।

তবে, দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা:

এই প্রাথমিক জটিলতাগুলো থাকা সত্ত্বেও, একবার এই সিস্টেমে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এটি সময় সাশ্রয় ও ভোগান্তি কমাবে:

  • লাইনে দাঁড়ানো থেকে মুক্তি: রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হবে না।
  • সুশৃঙ্খল সেবা: পূর্বনির্ধারিত সময়ে ডাক্তার দেখাতে পারায় হাসপাতালের বহির্বিভাগে অযথা ভিড় কমবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সুশৃঙ্খল হবে।
  • তথ্য সংরক্ষণ: রোগীর তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ হওয়ায় ভবিষ্যতে চিকিৎসা সেবার মান আরও উন্নত হবে।

সংক্ষেপে, এই পদ্ধতিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় অগ্রগতি হলেও, সাধারণ মানুষের জন্য এটিকে সহজ করতে আরও ব্যাপক প্রচার ও সহায়ক ব্যবস্থার (যেমন হেল্প ডেস্ক বা সহজ অ্যাপ) প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *