আউটসোর্সিং সেবা নবায়নে নতুন সরলীকরণ ২০২৫ । অর্থ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্পষ্টীকরণে সাধারণত ২ বছর মেয়াদ?
নির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত জনবলের মেয়াদ বৃদ্ধিতে জটিলতা হ্রাস-আউটসোর্সিং হলো একটি সেবাকে সাময়িক চুক্তির ভিত্তিতে বাইরে থেকে কিনে নেওয়া। তাই আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত কর্মীদের চাকরির মেয়াদ বা সুবিধা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চুক্তির ওপর নির্ভরশীল, যা স্থায়ী বা নিয়মিত সরকারি চাকরির মতো নিশ্চয়তা দেয় না।
ঢাকা: ২ অক্টোবর ২০২৫— অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক সম্প্রতি জারি করা এক নির্দেশিকায় ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০২৫’ (যা সারক নং অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল জারি হয়েছিল)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা স্পষ্ট করা হয়েছে। এই স্পষ্টীকরণের ফলে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগকৃত জনবল বা সেবার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে সরলীকরণ হলো, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে (১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ) অর্থ বিভাগের বাজেট-১১ শাখা থেকে সারক নং-০৭.১১১.০০১.০৬.০০.০৩৬.২০২৩-৪০০-এর মাধ্যমে এই নির্দেশনা জারি করা হয়।
স্পষ্টীকরণের মূল বিষয়বস্তু
‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০২৫’-এর ২(গ) অনুচ্ছেদে বলা ছিল, “সেবা গ্রহণের মেয়াদ অর্থ বিভাগের অনুমতিক্রমে নির্ধারিত হবে এবং সাধারণত সেবা গ্রহণের মেয়াদ দুই বছর হবে, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের সম্মতি সাপেক্ষে উক্ত মেয়াদ হ্রাস/বৃদ্ধি করা যাবে।”
নতুন স্পষ্টীকরণে বলা হয়েছে:
“উন্নয়ন প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের সুবিধার্থে চলমান উন্নয়ন পদের/জনবলের ধরন ও সংখ্যা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২২/০৩/২০০০ তারিখের সাবি/কবিঃশা/সক-০৫/২০০৩/২৬ সংখ্যক প্রজ্ঞাপনসমূহে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশক্রমে নিয়োজিত আউটসোর্সিং সেবা নবায়নের ক্ষেত্রে পরবর্তী নির্দেশ জারি না করা পর্যন্ত অর্থ বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না।”
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এর প্রভাব
এই স্পষ্টীকরণের মাধ্যমে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত জনবলের মেয়াদ নবায়ন বা মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রশাসনিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা অনেকাংশে কমে আসবে।
১. প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বৃদ্ধি: উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সাধারণত সময়বদ্ধ হয়ে থাকে। নিয়োজিত জনবলের মেয়াদ বারবার অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিতে গেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। নতুন নিয়মে, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে একবার নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর, অর্থ বিভাগের পরবর্তী কোনো নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সেবার মেয়াদ নবায়নে অতিরিক্ত অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। ফলে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হবে।
২. প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস: এখন থেকে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার সাথে সাথে আউটসোর্সিং সেবার মেয়াদও সহজে নবায়ন করা যাবে। এতে করে অর্থ বিভাগে প্রতিবার ফাইল পাঠানোর চাপ কমবে এবং সামগ্রিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হবে।
৩. নিয়োজিত জনবলের স্থিতিশীলতা: যারা আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত আছেন, তাদের চাকরির স্থিতিশীলতা কিছুটা বাড়বে। ঘন ঘন মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদনের জন্য অনিশ্চয়তায় ভুগতে হবে না।
এই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন অর্থ বিভাগের যুগ্নসচিব (বাজেট-৪) মোঃ তারিকুল ইসলাম খান। এই পদক্ষেপটি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

আউটসোর্সিং চাকরি কি স্থায়ী চাকরি?
না, আউটসোর্সিং চাকরি স্থায়ী চাকরি (Permanent Job) নয়।
আউটসোর্সিং এবং স্থায়ী চাকরির মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
সংক্ষেপে: আউটসোর্সিং হলো একটি সেবাকে সাময়িক চুক্তির ভিত্তিতে বাইরে থেকে কিনে নেওয়া। তাই আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত কর্মীদের চাকরির মেয়াদ বা সুবিধা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চুক্তির ওপর নির্ভরশীল, যা স্থায়ী বা নিয়মিত সরকারি চাকরির মতো নিশ্চয়তা দেয় না।
অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০২৫’ জারি, সুবিধাভোগীরা পাবেন সর্বজনীন পেনশন
ঢাকা: ২ অক্টোবর ২০২৫— সরকারি দপ্তর, সংবিধিবদ্ধ, স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণকে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে। এই নীতিমালার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (DPE) সকল বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের দপ্তরে স্মারকটি প্রেরণ করেছে ।
প্রাথমিক শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২২ মে ২০২৫ তারিখের স্মারকের (নম্বর-৩৮.০০.০০০০.০০২.৯৯.০১৬.২০২৪-৭৬৪) পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২৪ মে ২০২৫ তারিখে (১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে ।
নতুন নীতিমালার মূল বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তনসমূহ
অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৩ শাখা থেকে ১৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে (স্মারক নং-০৭.০০.০০০০.০০০.১৫৩.৯৯.০০০১.২১-১৭৮) জারি করা এই নীতিমালার মাধ্যমে
আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালা, ২০১৮ রহিত করা হয়েছে ।
নতুন নীতিমালার মূল লক্ষ্য হলো দৈনন্দিন কাজে গতিশীলতা আনা, স্বল্পতম সময়ে সেবা গ্রহণ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে মানসম্মত সেবা ক্রয় করা ।
১. বেতন ও আর্থিক সুবিধাসমূহ:
আউটসোর্সিং কর্মীদের জন্য মাসিক সেবামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পদ ও এলাকাভিত্তিক ভিন্ন ।
- প্রণোদনা (Incentive): সেবাকর্মী প্রতি বছর দুটি উৎসব প্রণোদনা হিসাবে এক (০১) মাসের সমপরিমাণ সেবামূল্যের অর্ধেক (৫০%) হারে এবং বৈশাখী প্রণোদনা হিসাবে মাসিক সেবামূল্যের এক-পঞ্চমাংশ (২০%) হারে প্রণোদনা সেবামূল্য পাবেন ।
- অতিরিক্ত সেবামূল্য: শুধু গাড়িচালকগণের অতিরিক্ত কাজের জন্য প্রতি ঘণ্টা ৮০ টাকা হিসাবে অতিরিক্ত সেবামূল্য প্রদান করা যাবে, তবে মাসিক সর্বোচ্চ ১০০ ঘণ্টার বেশি নয় ।
- পেনশন ও ছুটি: সেবাকর্মীকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে । তারা প্রতি পঞ্জিকা বর্ষে ১৫ দিন ছুটি এবং নারী সেবাকর্মীরা ৪৫ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রাপ্য হবেন ।
২. নিয়োগের ক্ষেত্র ও পদ্ধতি:
- আউটসোর্সিংয়ের আওতাভুক্ত পদ: অফিস সহায়ক ও টিওএন্ডইভুক্ত গাড়ির ড্রাইভার ব্যতীত গ্রেড ১৬ থেকে গ্রেড ২০ পর্যন্ত পদসমূহ আউটসোর্সিংয়ের জন্য বিবেচনাযোগ্য হবে ।
- আউটসোর্সিংয়ের আওতাভুক্ত সেবাসমূহ: নিরাপত্তা ও পাহারা, পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা, বাগান পরিচর্যা, পরিবহণ সেবা, কুকিং, হাউজ কিপিং, হাসপাতাল সেবা, লিফট অপারেটিং, জেনারেটর অপারেটিং এবং বিভিন্ন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সেবাসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত ।
- যোগ্যতা: আগ্রহী সেবাকর্মীর বয়সসীমা ১৮ থেকে ৬০ বছর হতে হবে ।
- নিয়োগের মাধ্যম: আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস, ২০০৮ এর আলোকে সেবা সরবরাহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে । বিশেষ ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের সম্মতিক্রমে সরাসরি ব্যক্তির সেবা ক্রয় করা যেতে পারে ।
- অগ্রাধিকার: পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে হরিজন সম্প্রদায়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং নিরাপত্তা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যের সেবা ক্রয় করতে হবে ।
৩. মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ:
- আউটসোর্সিং কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানভিত্তিক একটি ‘আউটসোর্সিং সেবা পরিবীক্ষণ কমিটি’ গঠন করতে হবে ।
- এই কমিটি সেবার ধরন, সংখ্যা নির্ধারণ এবং নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে ।
- সেবা গ্রহণের মেয়াদ সাধারণত দুই বছর হবে, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের সম্মতিসাপেক্ষে উক্ত মেয়াদ হ্রাস/বৃদ্ধি করা যাবে ।
এই নতুন নীতিমালার মাধ্যমে সরকারি দপ্তরগুলোতে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত সেবাকর্মীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
https://bdservicerules.info/outsourcing-job-rules/

