ট্রেনে কলকাতা ভ্রমণ টিপস । ভ্রমণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত করণীয় ও বর্জনীয় দেখুন
বহিঃ বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কিছু তথ্য জেনে রাখা ভাল এতে করে ভ্রমণ সুন্দর ও সাবলিল হয় – ট্রেনে কলিকাতা ভ্রমণ টিপস
একা যাবো নাকি গ্রুপে? – প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে, আপনি একা যাবেন না গ্রুপে যাবেন। আমার মতে কয়েকজন মিলে ভ্রমণ করা ভালো। আপনি যাদের সাথে ভ্রমণ করবেন তাদের অবশ্যই সমমনা হতে হবে। শুধু পাসপোর্ট নয়, ভিসাও সংগ্রহ করতে হবে। যে দিন যাবেন তার সাত দিন আগে টিকেট ক্রয় করবেন। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চেয়ার বা কেবিন যেটাতে যেতে ইচ্ছুক সেটার টিকিট সংগ্রহ করবেন। চেয়ার ও কেবিন এর ভাড়া যথাক্রমে ১৬২৩ ও ২৩৮৬ উইথ ট্রাভেল ট্যাক্স।
ভ্রমণে কত ডলার এবং রুপি সংগে নিয়ে ভাল হয়? ভারতে ভ্রমণের জন্য আপনাকে বাধ্যতামূলক ভাবে ২০০ ডলারের এনডোরসমেন্ট করাতে হবে। ইহা আপনার পাসর্পোটে উল্লেখ থাকতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে এই ২০০ ডলার আপনার বৈধ। কিন্তু আপনার কিছু বিশেষ দরকারে আলাদাভাবে কিছু বাংলা টাকা ও রুপি সাথে নিতে হবে। অল্প যেমন ৫০০/-টাকা ও ২০০-৩০০রুপি। রুপি আপনার দরকার হবে রেলস্টেশন থেকে হোটেলে যাওয়ার জন্য। ২০০ ডলারের অতিরিক্ত টাকা, রুপি বা ডলার নিতে চাইলে তা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে রাখবেন। ভয় পাবার কিছু নাই, তারা চেক করবে না।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া কখন শুরু হয়? নির্দিষ্ট সময়ের ১ ঘন্টাপূর্বে ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন চলে আসবেন। আসার পর ইমিগ্রেশনের জন্য আপনাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে। এখান থেকেই আপনার পরিক্ষা শুরু। ভয় পাবেন না, স্মার্টলি প্রশ্নের উত্তর দিবেন। জড়তা দেখাবেন না। যেসব প্রশ্ন করতে পারে, যেমন-আপনি কি ২০০ ডলারের বেশী এনেছেন? উত্তর-না। সাথে টাকা বা রুপি আছে?? উত্তর-না। যদি বলে একদমই কিছুই আনেন নি!! উত্তর-চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য ২০০-৩০০/- আছে।। ইমিগ্রেশন শেষ করার পর আপনার নির্ধারিত বগিতে উঠে পড়ুন এবং আসনে বসে পড়ুন। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ এর মধ্যেই চেকার আসবে আপনার টিকিট ও পাসর্পোট চেক করার জন্য! তাই টিকিট ও পাসর্পোট সযত্নে রাখুন, পাসর্পোট সযত্নে রাখবেন, কারন এটা আপনার ভ্রমণের ছাড়পত্র।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট ক্রয়ের আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে /শুরু থেকে শেষ প্রস্তুতি যেন ভাল হয় সেটিকে নজর দিতে হবে
ফর্ম ফিলাপ করতে হয়? ভারতে প্রবেশ করার পূর্বে বাংলাদেশের শেষ চেক পয়েন্ট দর্শনায় ইমিগ্রেশনের শেষ কিছু ফর্মালিটিস পালন করতে হবে। দর্শনায় ট্রেন থামার পর ট্রেন থেকে নেমে লাইনে দাঁড়িয়ে যান।সাথে টিকিট ও পাসর্পোট নিতে ভুলবেন না। এখানে মূলত এনডোরসমেন্ট এর বিষয়ে কড়াকড়ি ভাবে দেখা হয়। যেমন এনডোরসমেন্ট এর তারিখ ভ্রমণের তারিখের তিন মাসের উর্ধ্বে যেন না যায়। এর তিন মাসের বেশী হলে ইমিগ্রেশনে আপনাকে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। আর এছাড়া ইমিগ্রেশন নিয়ে ঝামলা হলে ভয় পাবার কিছু নাই, প্রব্লেম হলে নিজ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ম্যানেজ করতে হবে। দর্শনায় ইমিগ্রেশন শেষে ট্রেনে উঠে পড়ুন। এরপর ট্রেন গেদেতে মানে ইন্ডিয়ায় প্রবেশ করবে। গেদেতেও একইভাবে ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে। ক্যান্টনমেন্ট এ যে ফর্মটি দিয়েছিল, তা আপনার পাসর্পোট দেখে ফিলাপ করুন। ফর্মে মূলত আপনি কোথায় থাকবেন তা উল্লেখ করতে হয়।
ব্যাগ স্ক্যানিং ও লাল ফরম পূরণ করুন । ভারতীয় রূপি সংগ্রহের সময় ভাল করে চেক করে নিবেন
- ব্যাগ স্ক্যানিং করার পূর্বে একটি লাল কাগজ দিবে, সেটি পূরণ করে ইমিগ্রেশনে জমা দিতে হবে। ইমিগ্রেশনের শেষ ধাপ হল ছবি তোলা, এটা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। এরপর ট্রেনে উঠে যান। গেদেতেও মানি এক্সচেঞ্জ পাবেন, এখান থেকেও ডলার ভাংগাতে পারেন, তবে এখান থেকে না ভাংগানোই ভালো, ভালো মূল্য পাবেন না।। তাই একবারে নিউমার্কেট এ গিয়ে টাকা ভাংগানো ভালো।
- এবার ট্রেন কলিকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। কলিকাতা পৌছাতে ২:৩০-৩:০০ ঘন্টা লাগবে। কলিকাতা ষ্টেশনে পৌছার পর, স্টেশন থেকে বের হয়েই স্টেশনের সামনে Pre-paid taxi station পাবেন। এটা মূলত কলিকাতা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে। এখান থেকে আপনি যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেন। এরা আপনার থেকে ন্যায্য ভাড়া রাখবে। বাইরের ট্যাক্সিওয়ালা থেকে অনেক কমে।
- হোটেলের জন্য নিউমার্কেট এর আশেপাশে অনেক ভালো হোটেল আছে, যাচাই করে নিবেন। ৫০০ রুপি থেকে শুরু। মির্জা গালিব স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, সরদার স্ট্রিট, মার্ককুইজ স্ট্রিট এ ভালো মানের হোটেল ও গেস্ট হাউস পাবেন। হোটেল ঠিক হলে হোটেল কতৃপক্ষ আপনার পাসর্পোটের ফটোকপি বা স্কেনিং করে রাখবে, ফর্মালিটিস হিসাবে। পরে তা আবার ফিরিয়ে দিবে। ভারতের হোটেলের চেক ইন ১১:০০am থেকে পরেরদিন চেক আউট ১১:০০am.
- যেহেতু যেতে যেতে রাত হবে তাই মার্ককুইজ স্ট্রিট এর আশেপাশে রাঁধুনি, প্রিন্স, কস্তুরি, খালেক হোটেল এ রাতের খাবার সেরে নিবেন। খাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে ঘুম দিবেন, সকালে উঠে নাস্তা পর্ব সেরে ডলার ভাংগাতে মার্ককুইজ স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, লিন্ডে স্ট্রিট এ ডলার ভাংগানোর অনেক মানি এক্সচেঞ্জ পাবেন, যাচাই করে নিবেন। আর অবশ্যই ২০০ডলার ভাংগানোর মানি রিসিপ্ট নিয়ে নিবেন। এর জন্য পাসর্পোট ও মানি রিসিপ্ট এর জন্য সার্ভিস চার্জ ৪০-৫০/- দিতে হবে। এই মানি রিসিপ্ট সযত্নে রাখবেন, কারন দেশে আসার সময় অবশ্যই প্রয়োজন।
- ভারতীয় রুপি নেওয়ার সময় ২০০০/ ও ৫০০/ রুপির নোট ভালো করে দেখা নিবেন। ২০০০/ ও ৫০০/ নোটে কনো দাগ বা লিখা থাকলে তা বাতিল বলে গন্য হবে। ডলার ভাংগানোর পর সিম ক্রয় করে নিবেন। SD, ISD ও 2GB net সহ সিম ৩৮০-৪০০/- পরবে।
- কলিকাতা ভ্রমণের সাথে সাথে ফিরতি ট্রেনের টিকিট কাটতে ভুলে যাবেন না। ফিরতি টিকিট পাবেন ফেয়ারলি প্লেস, দাম পরবে ৭৯৫/রুপি। টিকেট সংগ্রহের পর চলে যাবেন হাওড়া ব্রীজ দেখতে।
- শপিং করেন ঠিক আছে, সব টাকা শেষ করবেন না। ১০০০-১২০০ রুপি রাখতে হবে স্টেশনে যাওয়া ও দেশে আসার সময়।
- সব দেশেই ভালো-মন্দ আছে, তাই কোন কিছু জানার বা বুঝার থাকলে লোকাল বা পুলিশকে জিজ্ঞাস করেন। ৩ জনকে জিজ্ঞাস করলে একজন কথা বলবে। নিরাশ হবেন না বা তাদের উপর বিরক্ত হবেন না।
- মেয়েদের সম্মান করুন, খারাপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।
- আপনি ঘুরতে গেছেন, তাই এখানে হিসাব করে চলবেন, কলিকাতায় প্রচুর দালাল রয়েছে, তাই এদের থেকে সাবধান।
ফেরত আসার সময় করণীয় কি?
যাবার পালা-ব্যাগ গুছিয়ে নিন, নির্দিষ্ট সময়ের ১ ঘন্টা পূর্বে ষ্টেশন পৌছান। লাইনে দাঁড়িয়ে আগের মতই সব ফর্মালিটিস পালন করুন। তেমনি কোনো প্রব্লেম এ পড়লে নিজ বুদ্ধি মত্তায় তা ম্যানেজ করুন। কোন কারনে আপনি কলিকাতার পথ ভুলে যান,তাহলে ভয় পাবেন না। যে কাউকে জিজ্ঞাস করে ধর্মতলা চলে আসবেন।এইখান থেকে সব জায়গার বাস পাবেন।কলিকাতা ভ্রমনে ট্যাক্সি থেকে দূরে থাকুন। পায়ে ও বাসে ভ্রমন করেন।রিয়েল মজা এখানে। ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০ টাকা হলে বাস ১০ টাকা। খাওয়া-দাওয়া করবেন স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার পাশের খাবার।কলিকাতার রাস্তার খাবার নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।হোটেলে দুপুরের খাবারের দাম ২৫০ টাকা হলে রাস্তার খাবার ১০০ টাকায় দুইজন খেতে পারবেন। মনে রাখবেন! কলিকাতার মানুষ দোকান খুলে সকাল ১০-১১ টায় আর বন্ধ করে রাত ৮-৯ টায়। তাই এর মধ্যে সব প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিবেন।
ক্রেডিট: Sultan Babu & Tanvir Ahmed