জমি কেনার পর করণীয় ২০২৩ । জমি কিনতে কি কি কাগজ লাগে?
জমি কেনার আগে ও পরে করণীয় কিছু আছে যা জানতে হবে- জমি কেনার সময় কিছু প্রাথমিক সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। তা নাহলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা তৈরী হতে পারে। মামলা মোকদ্দমাসহ জমি পর্যন্ত বেহাত হয়ে যেতে পারে। আপনি প্রতারিত হতেপারেন –জমি কেনার পর করণীয় ২০২৩
জমি কেনার সময় কী কী বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে? প্রথমেই প্রস্তাবিত জমিটি সরেজমিনে যেয়ে দেখতে হবে। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন জমিটি আসলে কেমন। আদৌ ভাল জমি নাকি ডোবা-নালা-পুকুর। সংলগ্ন জমির মালিক বা এলাকাবাসীর নিকট হতে জমির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে হবে। এরাই আপনাকে জমির বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারবেন। বিক্রেতার কাছ থেকে তার মালিকানার প্রমাণস্বরূপ দলিলাদি ও অন্যান্য কাগজপত্রের ফটোকপি চেয়ে নিতে হবে। জমির দলিল, ওয়ারিশ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), সিএস/ এসএ/ আরএস/ মহানগর/ মিউটেশন পড়চা, ডিসিআর, খাজনার দাখিলা ইত্যাদির ফটোকপি সংগ্রহের চেষ্টা করতে হবে। বিক্রেতা এসব কাগজপত্র দিতে গড়িমসি করলে তাকে যতদূর সম্ভব চাপ দিতে হবে। সংগৃহীত কাগজপত্র নিয়েসরাসরি তহসিল বা ভূমি অফিসে যেতে হবে। তহসিল অফিসে কর্মরত কাউকে কাগজপত্রগুলো যাচাইয়ের জন্য সহায়তা করতে অনুরোধ করতে পারেন। কোন জমির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্যকেবলমাত্র তহসিল অফিস থেকেই পেতে পারেন। অর্থাৎ খাজনার রশিদটি সঠিক কি না, প্রস্তাবিত দাগ খতিয়ানের জমির প্রকৃত মালিক কে, জমিতে কোন সরকারি স্বার্থ (খাস, ভিপি, পরিত্যাক্ত, অধিগ্রহণ বাএ্যাকুইজিশনকৃত, কোর্ট অব ওয়ার্ডস, ওয়াকফ ইত্যাদি) জড়িত কি না ইত্যাদি বিষয়ে তহসিল অফিসই আপনাকে প্রকৃত তথ্য দিতে পারে।
এসি (ল্যান্ড) অফিস থেকে পূর্ব মালিকের অর্থাৎ বিক্রেতার নামে মিউটেশনের কাগজপত্র (মিউটেশন পড়চা, ডিসিআর) সঠিক আছে কি না তা যাচাই করে নিতে হবে। যে জমিটি কিনতে চাচ্ছেন তাবিক্রেতার নামে অবশ্যই মিউটেশন করা থাকতে হবে। বিক্রেতার নামে মিউটেশন না থাকলে জমি রেজিস্ট্রেশন হবে না। জমিটির কাগজপত্র যাচাইয়ে সন্তুষ্ট হয়ে কেনার বিষয়ে মনস্থির করলে বা বায়না করলে আপনার নাম, ঠিকানা, জমির দাগ-খতিয়ান উল্লেখ করে জমিতে একটি সাইনবোর্ড দিন। একইসাথে পত্রিকায় ছোটআকারের হলেও একটি বিজ্ঞাপন দিন। এতে পড়ে কোন সমস্যা হলেও আপনি আইনগত সুবিধা পাবেন। তাছাড়া, এই জমির অন্য কোন দাবীদার বা ওয়ারিশ থাকলে, মামলা মোকদ্দমাসহ অন্য কোন সমস্যাথাকলে তা প্রকাশিত হবে এবং আপনি ভবিষ্যতের একটি স্থায়ী ও জটিল সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন। প্রয়োজনে এবং অবস্থা বুঝে আপনার জমি কেনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন।
আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রশিদ নেয়ার এবং সাক্ষী রাখার চেষ্টা করবেন। যতটা সম্ভব চেক বা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা-পয়সা লেনদেন করবেন। জমি কেনার ক্ষেত্রে সরাসরি জমির প্রকৃত মালিকের সাথেই আলোচনা করা উচিৎ। মধ্যস্বত্ত্বভোগী বা ভায়া মিডিয়ার মাধ্যমে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের আলোচনা যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া ভাল। এতে যেমনজমির নিষ্কন্টকতার বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন, তেমনি দাম-দরের ক্ষেত্রেও প্রতারণার শিকার হতে পারেন। মনে রাখবেন, জমি কেনার সময় কখনই তাড়াহুড়ো করবেন না। কমদামে কেনার আকর্ষণে ভালভাবে যাচাই না করে জমি কিনতে গিয়ে সর্বসান্ত হয়ে যেতে পারেন।
নিরাপদে জমি কেনার উপায় । ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক সাইনবোর্ড । জমি ক্রয়ের নিয়মাবলী
যে কোন দলিলের মাধ্যমে বা উত্তরাধিকার সুত্রে জমি প্রাপ্তির পর কাজ শেষ হয়ে যায় না। জমি ক্রয়ের পরে/মালিকানা অর্জন করার পর কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। তা না হলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।
Caption: ekhotiancoxsbazarsadar.gov.bd
জমি কেনার পর করণীয় ২০২৩ । জমি ক্রয়ের আগে যেমন কিছু করণীয় আছে তেমনি জমি কেনার পর করণীয় কি কি
- জমি পরিমাপ করে চৌহদ্দি বুঝে নিনঃ জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলে একজন অভিজ্ঞ আমিন দ্বারা সম্পূর্ণ জমি পরিমাপ করে জমির পূর্বের মালিকের কাছ থেকে দখল বুঝে নিতে হবে। জমি মাপার সময় ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয় সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে।
- জমির দখল প্রতিষ্ঠা করুনঃ জমির মালিকানা নিশ্চিতকরণের জন্য তথা জমিতে আপনার দখল প্রতিষ্ঠার জন্য জমির প্রকৃত ব্যবহার তথা চাষাবাদ, গাছপালা রোপন, ঘরবাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি করুন।এমনকি সাইনবোর্ড দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে, আমি এই জমির বর্তমান মালিক।
- দলিল সংগ্রহ করুনঃ রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল সংগ্রহ করতে হবে এই ক্ষেত্রে মূল দলিল পেতে দেরি হতে পারে। এজন্য যতক্ষণ না মূল দলিল হাতে পাওয়া যায় তার পূর্বে মূল দলিলের অনুলিপি বা নকল এর সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে নিতে হবে।
- নামজারির আবেদন করুনঃ আপনি জমি ক্রয়ের পরেও জমির মূল মালিকের নাম কিন্তু বিক্রেতার নাম ই থেকে যায়। এই জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল নামজারির(mutation) আবেদন করতে হবে।দলিলের নকল প্রাপ্তির পর দ্রুত সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আবেদন করে নিজ নামে নামজারি/খারিজ (মিউটেশন) করুন, কারন দখল এবং নামজারি করতে দেরি করলে অসাধু বিক্রেতা আপনার ক্রয়কৃত জমি অন্যত্র বিক্রয় করতে পারে।
- নামজারি খতিয়ান, ডিসিআর, কর কপি সংগ্রহ করুনঃ সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারি হলে নামজারি খতিয়ান নিতে হবে। সরকারি অন্যান্য খরচ বাবদ যে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে তার ডি,সি,আর(DCR) রশিদ এবং নতুন হোল্ডিং এ ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করে তার দাখিলার কপি সংগ্রহ করতে হবে। এইসব কাগজ এবং দলিলপত্র শুধু সংগ্রহ করলেই হবে না তা সংরক্ষণও করতে হবে।
- খাজনা পরিশোধ করুনঃ নিয়মিতভাবে প্রতিবছর ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করুন।
- মূল মালিক মারা গেলে ওয়ারিশগণ বন্টননামা করে নামজারী নিশ্চিত করুনঃ সম্পত্তির মূল মালিক মারা গেলে মৃত ব্যক্তির জীবিত ওয়ারিশগণ সম্পত্তির নিজ নিজ অংশ পৃথকীকরনের জন্য নিজেদের মধ্যে ‘বন্টননামা’ দলিল প্রস্তুত করে রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি এবং ভূমি অফিসে নামজারী করুন।
জমি কিনতে কি কি কাগজ লাগে?
জমির দলিল, ওয়ারিশ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), সিএস/এসএ/আরএস/ মহানগর/মিউটেশন পর্চা, ডিসিআর, খাজনার দাখিলা ইত্যাদির ফটোকপি সংগ্রহের চেষ্টা করতে হবে। বিক্রেতা এসব কাগজপত্র দিতে গড়িমসি করলে তাকে যতদূর সম্ভব চাপ দিতে হবে। সংগৃহীত কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি তহশীল বা ভূমি অফিসে যেতে হবে।