জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকা ২০২৪ । অকটেনের দাম ডিজেল থেকে কত বেশি থাকবে?

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকা ২০২৪ । অকটেনের দাম ডিজেল থেকে কত বেশি থাকবে?

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে থাকে-জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকা ২০২৪

জ্বালানি তেল বলতে কোন কোন উপাদানকে বুঝায়? – বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এ্যাক্ট, ১৯৭৪ ও পেট্রোলিয়াম আইন, ২০১৬ এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আইন, ২০১৬ অনুযায়ী বাংলাদেশে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের আমদানি, রপ্তানি, মজুদ, প্রক্রিয়াকরণ, বিপণন ও বিতরণ ইত্যাদি কার্যাদি সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর উপর ন্যস্ত। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) দেশের চাহিদা বিবেচনায় জ্বালানি তেল ও জ্বালানি পণ্য আমদানি ও ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয় করে থাকে। বিপিসি বিভিন্ন দেশ ও ও স্থানীয় উৎস হতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) আমদানি/ ক্রয়ের মাধ্যমে এবং ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড (ইআরএল) কর্তৃক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার জ্বালানি পণ্য (ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, মেরিন ফুয়েল ইত্যাদি) উৎপাদন/ সংগ্রহ/ বিপণন করে থাকে।

জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে কি কি বিষয় বিবেচনা করা হয়? সরকার দেশের প্রধান ও বহুল ব্যবহার্য জ্বালানি পণ্য (ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, কেরোসিন) এর মূল্য সময়ে সময়ে নির্ধারণ করে থাকে এবং বিপিসি অন্যান্য জ্বালানি পণ্য (ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, মেরিন ফুয়েল ইত্যাদি) এর মূল্য নিয়মিত ভিত্তিতে বিশ্ববাজারের মূল্যের সাথে সমন্বয় করে নির্ধারণ করে থাকে। বিপিসির সরবরাহকৃত জ্বালানি তেলের সিংহভাগ আমদানি নির্ভর হওয়ার ফলে স্থানীয় পর্যায়ে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য প্রতিনিয়ত হ্রাস/বৃদ্ধি ঘটে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য, পরিবহণ, ইন্স্যুরেন্স, মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বার জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।

নতুন মূল্য কবে থেকে কার্যকর? এ নির্দেশিকা “জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকা” নামে অভিহিত হবে এবং তা দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে সর্বাধিক ব্যবহৃত পেট্রোলিয়াম পণ্য তথা সরকার যে সকল গ্রেডের জ্বালানি তেলের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে থাকে যেমন: ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোল এর জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে সরকার/ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) প্রয়োজন মনে করলে অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রেও শর্ত সাপেক্ষে উক্ত নির্দেশনা প্রয়োগ করা যাবে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে প্রাথমিকভাবে প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি মার্চ 2014 থেকে কার্যকর হবে।

জ্বালানি তেলের রেট কি প্রকাশিত হয়েছে? / না। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে

আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য (International Price): আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বলতে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে Platts S&P Global এ প্রকাশিত Mean of Platts Arab Gulf (MOPAG) অনুযায়ী বিপিসির আমদানিকৃত বিভিন্ন গ্রেডের জ্বালানি তেলের মূল্যকে বুঝাবে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) এর ক্ষেত্রে ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড (ইআরএল) এর ব্যবহৃত ক্রুড অয়েলের মূল্যকে বুঝাবে।

জ্বালানি তেলের মূল্য নির্দেশিকা

Caption: Full pdf download link

জ্বালানি তেলের নতুন রেট ২০২৪ । যে বিষয়গুলো বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মূল্য সমন্বয় করা হবে

  1. গড় মূল্য নির্ধারণ: চলমান গড় মূল্য বলতে আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের প্রতিদিনের প্লাটস (Platts Publications) এ প্রকাশিত মূল্যের চলমান গড়কে বুঝাবে। তবে যে সকল পণ্য ইস্টার্ণ রিফাইনারীতে উৎপাদিত হয়, সে সকল ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে ইআরএল-এ উৎপাদিত ও আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় মূল্যের ভিত্তিতে নিরূপিত মূল্যকে বুঝাবে।
  2. প্রিমিয়াম (Premium): পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির মূল্য ব্যতীত ব্যয় যেমন: জাহাজ ভাড়া, ইন্স্যুরেন্স, সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীর মার্জিন ইত্যাদির সমন্বিত ব্যয়কে প্রিমিয়াম বুঝাবে।
  3. অপারেশনাল ব্যয় (Operational Expenses): আমদানিকৃত জ্বালানি তেল জাহাজযোগে লোড পোর্ট থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আগমন, খালাস, মজুদ ও সরবরাহের লক্ষ্যে সৃষ্ট ব্যয় অর্থাৎ হ্যান্ডলিং কমিশন, রিভার ডিউস, সার্ভে ফি, এলসি কমিশন, ওশান লস/ ট্রানজিট লস, ক্রুড অয়েল এর ক্ষেত্রে প্রসেসিং খরচ ইত্যাদি ব্যয়ের সমষ্টিকে অপারেশনাল ব্যয় বুঝাবে ।
  4. আর্থিক, প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় (Financing, Administrative and Maintanance Expences): জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয়িত অর্থের ইন্টারেস্ট/ Opportunity Cost, প্রশাসনিক ব্যয় ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন/ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের সমষ্টিকে বুঝাবে।
  5. ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (Trade VAT): জ্বালানি তেল এর খুচরা বিক্রয় মূল্যের উপর ব্যবসায়ী পর্যায়ে পরিশোধিত মূসক-কে বুঝাবে।
  6. ফ্রেইটগুল (Freight Pool): ফ্রেইটপুল বলতে চট্টগ্রাম প্রধান স্থাপনা হতে সারাদেশে ডিপোসমূহে জ্বালানি তেল পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত পরিবহণ ভাড়ার পুল-কে বুঝাবে। ফ্রেইটপুল খাত হতে সারাদেশে জ্বালানি তেল পরিবহণের ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
  7. ডিলার/এজেন্টস কমিশন ও পরিবহণ (Dealers Commission & Transportation): জ্বালানি তেল বিপণনের ক্ষেত্রে পেট্রোল পাম্প ডিলার/ এজেন্টকে (প্যাক্ড পয়েন্ট ডিলারসহ) খুচরা পর্যায়ে জ্বালানি তেল বিক্রয়ের জন্য লিটার প্রতি যে কমিশন প্রদান করা হয় তাকে ডিলার/ এজেন্টস কমিশন বুঝাবে। সরকার কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী ডিলার/ এজেন্টস কমিশন এর মধ্যে অবচয় ও অন্যান্য সকল খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ডিলার/ এজেন্টস ট্যাংকলরীর ভাড়া হিসেবে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে পরিবহণ খরচ প্রাইসিং ফর্মুলায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
  8. উন্নয়ন তহবিল (Development Fund) : জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে জ্বালানি তেলের অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ব্যয়িত অর্থ রিকভারি এবং বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পের আর্থিক সংস্থানের জন্য সংগৃহীত তহবিলকে বুঝাবে।
  9. কোম্পানি মার্জিন (Company Margin): সারাদেশে সরকার নির্ধারিত মূল্যে জ্বালানি তেল বিক্রয়ের জন্য তেল বিপণন কোম্পানিসমূহকে লিটার প্রতি প্রদত্ত মার্জিন বুঝাবে।

স্বয়ংক্রিয় মূল্য কাঠামো বলতে কি বুঝায়?

স্বয়ংক্রিয় মূল্য কাঠামো বলতে পূর্ববর্তী মাসের বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চলমান গড় (Moving Average) এর ভিত্তিতে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয়, সংশ্লিষ্ট সময়ের মার্কিন ডলারের গড় বিনিময় হার, শুল্ক-করাদি, বিপিসির মার্জিন ও আনুষঙ্গিক ব্যয় যুক্ত করে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের নিমিত্ত প্রণীত মূল্য কাঠামোকে বুঝাবে।

ডিজেল ও কেরোসিনের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির সূত্র কি? ডিজেল ও কেরোসিন এর স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে আমদানিকৃত পরিশোধিত ডিজেলের কস্ট কম্পোনেন্টসমূহের পাশাপাশি ইস্টার্ণ রিফাইনারীতে ক্রুড অয়েল থেকে উৎপাদিত ডিজেলের কস্ট কম্পোনেন্টসমূহ অন্তর্ভুক্ত হবে। এ দুই ধরনের জ্বালানি তেলের কস্ট  ম্পোনেন্টসমূহ বিবেচনা করে নিম্নরূপভাবে ডিজেল ও কেরোসিনের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ করা হবে: ডিজেলের স্বয়ংক্রিয় বিক্রয় মূল্য (H)= পণ্য মূল্য (A) + আমদানি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট (B) + অপারেশনাল ব্যয় (C) + আর্থিক, প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় (D) + বিপিসির মার্জিন (E) + ভ্যাট (F4) + বিক্রয় ও বিতরণ খরচ (G)।যেখানে, পণ্য মূল্য (A) : এবং a) বিপিসির আমদানিকৃত ডিজেল এর চলমান গড় মূল্য ও তার সাথে সম্পর্কিত প্রিমিয়াম। b) ক্রুড অয়েলের Free on Board (FOB) মূল্য ও তার সাথে সম্পর্কিত জাহাজ ভাড়া, লাইটারেজ চার্জ ও ইন্সুরেন্স খরচ।

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *