স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের উপবৃত্তি প্রদান নির্দেশিকা ২০২২
অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বৃত্তি প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ এপ্রিল, ২০১০ খ্রি: তারিখে একটি ট্রাস্ট ফাণ্ড গঠনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে একটি লিখিত নির্দেশনা প্রদান করেন। এ ফাণ্ড গঠনের সম্ভাব্যতা পরীক্ষাপূর্বক প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রীকে আহবায়ক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কে আহবায়ক করে ট্রাস্ট ফাণ্ড গঠন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট বাড়ি নং-৪৪, সড়ক নং-১২/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯
নং-৩৭.২৪.০০০০.০৩.০২৮.০০১.২১-৮৪ তারিখ: ২৪ এপ্রিল ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
বিষয়: স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের উধৃত্তি প্রদান নির্দেশিকা, ২০২২
অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযােগ বঞ্চিত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের লক্ষ্য। ট্রাস্টের মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি প্রদান করা হচ্ছে। উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি, ঝরে পড়ার হার রােধ, নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যাসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে ট্রাস্ট সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সারাদেশ জুড়ে চলমান এ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিম্নোক্ত নির্দেশিকা (guideline) জারি করা হলাে:
২। শিরােনাম: এ নির্দেশিকা “স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের উপবৃত্তি প্রদান নির্দেশিকা, ২০২২” নামে অভিহিত হবে। ৩াপ্রয়ােগ ও প্রবর্তন:
ক) এ নির্দেশিকা জারির তারিখ হতে কার্যকর হবে; এবং খ) স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এ নির্দেশিকা প্রযােজ্য হবে।
৪। সংজ্ঞা: বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোনাে কিছু না থাকলে এ নির্দেশিকায়:
ক) শিক্ষার্থী’ অর্থ – স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী;
খ) “উপবৃত্তি’ অর্থ – নির্বাচিত শিক্ষার্থীদেরকে প্রদত্ত অর্থ সহায়তা;
গ) ‘টিউশন ফি’ অর্থ – বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত অর্থ;
ঘ) আবেদনপত্র” অর্থ – ট্রাস্ট কর্তৃক আবেদনের নির্ধারিত ফরম;
ঙ) দরিদ্র’ অর্থ – স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের পিতা/মাতা/অভিভাবকের বার্ষিক আয় দুইলক্ষ টাকার কম (বেসামরিক চাকুরিজীবী পিতা/মাতা/অভিভাবকের ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী গ্রেড ১৩ থেকে ২০);
চ) মেধাবী’ অর্থ – পূর্বের পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে শতকরা ন্যূনতম ৬০ ভাগ নম্বরপ্রাপ্ত/জিপিএ ৫.০০ স্কেলে ৩.৭৫/সিজিপিএ ৪.০০ স্কেলে ৩.০০ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী;
ছ) বাছাই কমিটি’ অর্থ – উপবৃত্তি প্রদানের জন্য প্রাপ্ত আবেদনপত্র বাছাইয়ের লক্ষ্যে এ নির্দেশিকার ১২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত কমিটি; এবং
জ) ‘ট্রাস্ট’ অর্থ – প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট।
৫। তহবিলের উৎস ও ব্যবস্থাপনা: ট্রাস্টের এফ.ডি.আরকৃত সিডমানির লভ্যাংশ থেকে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অর্থ এবং দেশি-বিদেশি অনুদানের অর্থ এ তহবিলে যুক্ত হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একক স্বাক্ষরে এ তহবিল পরিচালিত হবে।
৬। উপবৃত্তি প্রাপ্তির শর্তাবলি:
ক) স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে অধ্যয়নরত নিয়মিত শিক্ষার্থী হতে হবে;
খ) শ্রেণিকক্ষে কমপক্ষে ৭০% উপস্থিতি থাকতে হবে;
গ) শিক্ষার্থীকে পূর্বের পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে শতকরা ন্যূনতম ৬০ ভাগ নম্বরপ্রাপ্ত/জিপিএ ৫.০০ স্কেলে ৩.৭৫/সিজিপিএ ৪.০০ স্কেলে ৩.০০ প্রাপ্ত হতে হবে;
ঘ) পিতা/মাতা/অভিভাবকের বাৎসরিক আয় ২ (দুই) লক্ষ টাকার কম হতে হবে;
ঙ) প্রজাতন্ত্রের বেসামরিক কর্মে নিয়ােজিত সকল সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের সকল কর্মচারীর সন্তান উপবৃত্তি প্রাপ্তির যােগ্য বিবেচিত হবে; এবং চ) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী, এতিম শিক্ষার্থী, তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থী, ভূমিহীন পরিবারের সন্তান, বীর। মুক্তিযােদ্ধার সন্তান/সন্তানের সন্তান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এবং দুস্থ পরিবারের সন্তান উপবৃত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
৭। উপবৃত্তি ও টিউশন ফি’র হার:
ক) উপবৃত্তির পরিমাণ: একজন শিক্ষার্থী বছরে এককালীন ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা উপবৃত্তি প্রাপ্ত হবেন। নিম্নে এর বিস্তারিত বিভাজন দেয়া হলাে:
*৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদি কোর্সের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হবে।
উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীর হার ৪০:৬০ অনুপাতে নির্দিষ্টকরণ [অর্থাৎ, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকাকে ১০০% ধরে তার মধ্যে হতে ৪০% ছাত্রকে এবং ৬০% ছাত্রীকে উপবৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হবে।
খ) টিউশন ফি’র পরিমাণ: বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত প্রতি শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাসিক ৬০ (ষাট) টাকা হারে বছরে ৭২০ (সাতশত বিশ) টাকা টিউশন ফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রদান করা হবে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে টিউশন ফি প্রদান করা হবে না।
৮। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও আবেদন প্রক্রিয়া:
ক) প্রতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে কমপক্ষে ২ (দুই)টি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক (১টি ইংরেজিসহ) | পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে অনলাইনে দরখাস্ত আহবান করা হবে; খ) বিজ্ঞপ্তির কপি ব্যাপক প্রচারণার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধিনস্থ দপ্তর/পরিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরণ করা হবে; এবং
গ) শিক্ষার্থী সরাসরি অনলাইনে নির্ধারিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য আবেদন করবেন। আবেদনপত্রের লিংক ট্রাস্টের ওয়েবসাইট (www.pmeat.gov.bd)-এ সংরক্ষিত থাকবে।
৯। শিক্ষার্থী নির্বাচন কমিটি
ক) শিক্ষার্থী নির্বাচনের জন্য সরকারি/বেসরকারি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দু’টি ভিন্ন কমিটি থাকবে;
অ. সরকারি/বেসরকারি কলেজের জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন কমিটি
আ. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থী নির্বাচন কমিটি:
*2-৪ ক্রমের সদস্যগণ রেজিস্ট্রার কর্তৃক মনােনীত হবেন।
খ) এ নির্দেশিকার ৬নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত উপবৃত্তি প্রাপ্তির শর্তাবলি বিবেচনা করে অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিটি উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করবেন। তালিকা প্রস্তুতকালে নির্বাচন কমিটি ট্রাস্টের নির্ধারিত ফরম্যাটে একটি রেজুলেশন করবেন।
১০। প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব:
ক) প্রতিষ্ঠান প্রধান (বা তাঁর পক্ষে কোন প্রতিনিধি) রেজুলেশনে প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী | নির্বাচনকালে রেজুলেশনের কপি স্ক্যান করে অনলাইনে নির্ধারিত সফটওয়্যারে সংযুক্ত করবেন;
খ) নির্বাচিত শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির শতকরা হার সফটওয়্যারে ইনপুট দিবেন; এবং গ) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ সফটওয়্যারের নির্ধারিত অংশে ব্যাংক একাউন্ট সংক্রান্ত তথ্যাবলি আবশ্যিকভাবে সংযুক্ত করবেন।
১১। শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব:
ক) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিজের এখতিয়ারভুক্ত এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তি সংক্রান্ত | সকল কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও উপবৃত্তি সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করবেন; এবং খ) জেলা শিক্ষা অফিসার এ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ ও সমন্বয় করবেন।
১২। বাছাই কমিটি
১৩। বাছাই কমিটির কার্যপরিধি:
ক) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদনসমূহ যাচাই-বাছাই করে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি’র জন্য চূড়ান্ত। | শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করা;
খ) নির্দেশিকায় বিদ্যমান শর্তের আলােকে উপবৃত্তির জন্য মনােনীত ছাত্র -ছাত্রীর হার নির্দিষ্টকরণ; এবং গ) কমিটি প্রয়ােজনে যে কোনাে কর্মকর্তাকে কমিটির সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করতে পারবে।
১৪। উপবৃত্তি ও টিউশন ফি প্রদান প্রক্রিয়া:
ক) উপবৃত্তির অর্থ অনলাইন/মােবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করা হবে; এবং খ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাংক হিসাবে টিউশন ফি’র অর্থ প্রেরণ করা হবে।
১৫। সংশােধনী:
ট্রাস্ট প্রয়ােজন মনে করলে এ নির্দেশিকার যে কোনাে অংশ সংশােধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করতে পারবে। নির্দেশিকায় কোনাে বাক্য বা শব্দের অস্পষ্টতা থাকলে বা কোনাে ব্যাখ্যার প্রয়ােজন হলে ট্রাস্ট ব্যাখ্যা প্রদান করবে।
(নাসরীন আফরোজ) )
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)
ফোন : ০২-৫৫০০০৪২৩
ই-মেইল : md@pmeat.gov.bd
স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের উধৃত্তি প্রদান নির্দেশিকা, ২০২২ : ডাউনলোড