সরকারি কর্মচারীদের জন্য নবম পে স্কেল ২০২৫ । নিম্নগ্রেডের কর্মচারীদের প্রত্যাশা, দাবি ও আর্থিক প্রেক্ষাপট? - Technical Alamin
সরকারি আদেশ ও তথ্য

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নবম পে স্কেল ২০২৫ । নিম্নগ্রেডের কর্মচারীদের প্রত্যাশা, দাবি ও আর্থিক প্রেক্ষাপট?

সরকারি কর্মচারীদের মাঝে নবম পে স্কেল নিয়ে ক্রমবর্ধমান আলোচনা ও দাবি এখন তুঙ্গে। বিগত ৫৪ বছরে এত দীর্ঘ সময় পে স্কেলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি উল্লেখ করে, কর্মচারী সংগঠনগুলো সরকারের কাছে দ্রুত নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছে। তাদের যুক্তি অনুযায়ী, বিগত দশ বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পেলেও, বেতন কাঠামো সেই অনুপাতে বাড়েনি, যার ফলে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আর্থিক প্রেক্ষাপট ও দাবির যৌক্তিকতা:

কর্মচারীদের হিসাব অনুযায়ী, যদি যথাসময়ে পে স্কেল কার্যকর হতো, তাহলে ২০২০ সালে সর্বনিম্ন গ্রেড (২০তম গ্রেড)-এর বেতন হতো ১৬,৫০০ টাকা (৮২৫০x২), এবং ২০২৫ সাল নাগাদ তা বেড়ে ৩৩,০০০ টাকা হতো। এই যুক্তিতে, নবম পে স্কেলে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করাকে তারা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছেন।

মূল দাবিসমূহ:

নবম পে স্কেল ঘোষণার পাশাপাশি, সরকারি কর্মচারীরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেছেন, যা তাদের মতে, দীর্ঘদিনের বঞ্চনা দূর করবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। এই দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে:

১. টাইম স্কেল পূর্ণ বহাল: কর্মচারীরা টাইম স্কেল ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে বহাল করার দাবি জানিয়েছেন, যা তাদের পদোন্নতি বা আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তিতে সহায়তা করবে।

২. পূর্বের ন্যায় সম্পূর্ণ পেনশন এককালীন পরিশোধ: পেনশন পরিশোধের বর্তমান নিয়মকে কর্মচারীগণ আর্থিক ক্ষতির কারণ বলে মনে করছেন। তাদের যুক্তি অনুযায়ী, একজন কর্মচারীর ৩২,০০০ টাকা মূল বেতনের ক্ষেত্রে বর্তমান নিয়মে এককালীন পেনশন (আনুতোষিক) পাওয়া যায় মাত্র ৩৩,১২,০০০ টাকা, যেখানে পূর্বে নিয়মে পাওয়া যেত ৬৬,২৪,০০০ টাকা। এর অর্ধেক টাকা (৩৩,১২,০০০) পেনশন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে মাসে ৩২,৪৯৯ টাকা লভ্যাংশ পাওয়া যেত, যা বর্তমান মাসিক পেনশনের (১৪,৪০০ টাকা) চেয়ে ১৮,০৯৯ টাকা বেশি। তাই, পেনশনের অবশিষ্ট টাকা সংশ্লিষ্ট কর্মচারী এবং তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের পরিশোধ অথবা পূর্বের পেনশন পদ্ধতি পূর্ণ বহাল করার দাবি জানানো হয়েছে, যা পেনশনারদের শেষ জীবনের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করবে।

৩. বেতনের অনুপাত ১:৪ করা: কর্মচারীরা সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ করার দাবি জানিয়েছেন, যা বেতন বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে।

৪. পেনশন ও আনুতোষিক ৯০% থেকে ১০০% করা: পেনশনের হার ৯০% থেকে বাড়িয়ে ১০০% করার দাবি জানানো হয়েছে, যা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের আরও বেশি আর্থিক নিরাপত্তা দেবে।

৫. পেনশনের হার ২৩০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা করা: পেনশনের হিসাবের ক্ষেত্রে ১ টাকার পরিবর্তে ২৩০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে, যা পেনশনভোগীদের প্রাপ্য অর্থ বৃদ্ধি করবে।

৬. চিকিৎসা ভাতা ১০,০০০ টাকা করা: বর্তমান চিকিৎসা ভাতা অপ্রতুল হওয়ায়, এটি বাড়িয়ে ১০,০০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে।

৭. বৈশাখী ভাতা মূল বেতনের ৫০% করা: সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বৈশাখী ভাতাকে মূল বেতনের ৫০% করার দাবি করা হয়েছে, যা কর্মচারীদের উৎসব পালনে সহায়তা করবে।

৮. টিফিন ভাতার পরিবর্তে ল্যান্স ভাতা: টিফিন ভাতার পরিবর্তে কর্মকালীন প্রতিদিন ১৫০ টাকা হারে ল্যান্স ভাতা প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে, যা দুপুরের খাবারের খরচ বহন করতে সহায়ক হবে।

সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলো আশা করছে, সরকার তাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং আগামী ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে নবম পে স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করবে। এ বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের দিকে এখন দেশের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারী তাকিয়ে আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *