ভোগান্তি কমাতে সকল এমএফএস-এর জন্য উন্মুক্ত ২০২৫ । প্রাথমিক উপবৃত্তি বিতরণে বিকাশ নগদ ছাড়াও যে কোন একাউন্ট ব্যবহার করা যাবে?
স্বস্তিতে ১ কোটি ৪০ লাখ পরিবার- প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি বিতরণ কার্যক্রমে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে সরকার। এখন থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের পছন্দের যেকোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০২১ (সংশোধিত)’-এ এই বিধান রাখা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
২. ‘জিটুপি’ পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও সুবিধা বৃদ্ধি
সরকার থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে (Government to Person – G2P) অর্থ পরিশোধের আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর আগে, উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য অভিভাবকদের একটি নির্দিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট খুলতে হতো, যা অনেকের জন্য ঝামেলার কারণ ছিল। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত সকল সক্রিয় MFS প্রতিষ্ঠান— যেমন বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়, ট্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ করা সম্ভব হবে।
সুবিধাগুলো:
- ভোগান্তি হ্রাস: নতুন করে হিসাব খোলার প্রয়োজন নেই, অভিভাবকরা তাদের বিদ্যমান সক্রিয় MFS অ্যাকাউন্টে টাকা পাবেন।
- স্বাধীনভাবে নির্বাচন: অভিভাবকরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো MFS সেবাদাতা নির্বাচন করতে পারবেন।
- অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার: সরকারের লক্ষ্য হলো উপবৃত্তির অর্থের শতভাগ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমানো।
৩. বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু: একক বনাম একাধিক সেবাদাতা
যদিও নির্দেশিকায় সকল এমএফএস-এর জন্য উপবৃত্তি কার্যক্রম উন্মুক্ত রাখার কথা বলা হয়েছে, তবে বাস্তবায়ন নিয়ে সম্প্রতি একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (DPE) ২০২২-২৩ অর্থ বছরেও উপবৃত্তি বিতরণের জন্য পূর্বে চুক্তিবদ্ধ একটি একক এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে (নগদ) নির্বাচন করার জন্য সুপারিশ করেছিল। অধিদপ্তরের যুক্তি ছিল, এতে সরকারের খরচ কম হবে এবং দ্রুততার সাথে বিতরণ করা সম্ভব হবে।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ এই একক অপারেটর নির্বাচনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁদের মতে, কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ছাড়া একক সেবাদাতা নির্বাচন করলে প্রশ্ন ও বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। বরং অভিভাবকদের পছন্দের যেকোনো এমএফএস-এর মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণ করাই অধিকতর স্বচ্ছ ও বিতর্কমুক্ত হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, উপবৃত্তি বিতরণে ‘পছন্দের এমএফএস’ ব্যবহারের সুযোগ বহাল রাখতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
৪. উপবৃত্তির বর্তমান হার
শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমাতে এবং তাদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখতে সরকার এই উপবৃত্তি প্রদান করে আসছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভেদে মাসিক উপবৃত্তির হার নিম্নরূপ:
| শ্রেণি | প্রতি শিক্ষার্থীর মাসিক উপবৃত্তি (টাকা) | একই পরিবারের দুই শিক্ষার্থীর মাসিক উপবৃত্তি (টাকা) |
| প্রাক-প্রাথমিক | ৭৫ | – |
| ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি | ১৫০ | ৩০০ |
| ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি | ২০০ | ৪০০ |
এই উন্মুক্ত বিতরণ ব্যবস্থার ফলে সারাদেশের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার আর্থিক সহায়তা গ্রহণ আরও সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


