বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত: ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি - Technical Alamin
সরকারি আদেশ ও তথ্য

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত: ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি

বহু প্রতীক্ষিত বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়েছে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণ পৃথক হলো বিচার বিভাগ

এই অধ্যাদেশটি ৩০ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে (১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ) তারিখের অতিরিক্ত সংখ্যা গেজেটে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে এটি সংবিধানের ২২, ১০৯ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণ এবং আপীল বিভাগের ৭৯/১৯৯৯ নম্বর সিভিল আপীলের রায় বাস্তবায়নের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে


গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও কার্যাবলি

অধ্যাদেশের মূল বিধান ও কার্যাবলিগুলো নিম্নরূপ:

  • স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠন ও নিয়ন্ত্রণ: সংবিধানের ২২, ১০৯ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় নামে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠিত হবে এর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির উপর ন্যস্ত থাকবে

  • সচিবের মর্যাদা: সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের সচিব সরকারের সিনিয়র সচিবের সমমর্যাদা ও সুবিধাদি ভোগ করবেন

  • সার্ভিস প্রশাসনের দায়িত্ব: সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় সার্ভিস প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হবে এটি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সার্ভিস সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান সংক্রান্ত কাজে রাষ্ট্রপতির পক্ষে প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে

  • কার্যাবলি: সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে:

    • অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন

    • অধস্তন আদালতের প্রতিষ্ঠা, বিলোপ, সংখ্যা, গঠন ও এখতিয়ার নির্ধারণ

    • বিচারিক কর্মে নিয়োজিত সার্ভিস সদস্যদের পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ও ছুটি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ

    • অধস্তন আদালতের বিচারক এবং ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কর্মের শর্তাবলি নির্ধারণ ও নিয়োগ

    • বাজেট ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, এবং প্রধান বিচারপতির ও বিচারকগণের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান

  • বাজেট ও অর্থ ব্যয়: সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ও ভাতাদি এবং সচিবালয়ের সকল প্রশাসনিক ব্যয় সংযুক্ত তহবিলের উপর দায়যুক্ত ব্যয় হবে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করা আবশ্যক হবে না প্রধান বিচারপতি বাজেট পুনঃউপযোজনের সকল ক্ষমতা এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ হবেন

  • কমিশন ও কমিটি: বিচার প্রশাসনের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতিকে চেয়ারপার্সন করে একটি সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় কমিশন গঠন করা হবে এছাড়া, প্রকল্প সুপারিশের জন্য একটি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি এবং বিচার প্রশাসন সংক্রান্ত অন্যান্য কমিটিও গঠিত হবে

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য এই অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে ৩০ নভেম্বর দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে

সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫


পরবর্তী পদক্ষেপ

এই অধ্যাদেশের ধারা ৭ এর বিধানাবলি সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন সম্পন্ন ও এর কার্যক্রম পূর্ণরূপে চালু হওয়া সাপেক্ষে সরকার, সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে, গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কার্যকর করবে উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত ধারা ব্যতীত অন্যান্য ধারার বিধান অবিলম্বে কার্যকর হইবে

এখন বিচার বিভাগ কি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে?

হ্যাঁ, ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি হওয়ার ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং বিচার বিভাগ আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করা হয়েছে:

  • স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠন: সংবিধানের ২২, ১০৯ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় নামে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে

  • প্রধান বিচারপতির নিয়ন্ত্রণ: সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির উপর ন্যস্ত করা হয়েছে

  • নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথকীকরণ: সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এই অধ্যাদেশটি নির্বাহী বিভাগ হইতে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ বাস্তবায়নকল্পে প্রণীত হয়েছে

  • সার্ভিস প্রশাসন: সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় সার্ভিস প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হবে এবং সার্ভিস সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান সংক্রান্ত কাজে রাষ্ট্রপতির পক্ষে প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে

  • আর্থিক স্বাধীনতা: সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের প্রশাসনিক ব্যয় সংযুক্ত তহবিলের উপর দায়যুক্ত ব্যয় হবে এছাড়া, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করা আবশ্যক হইবে না

এই সমস্ত বিধান বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান সংক্রান্ত বিষয়াদি যথাযথরূপে পালনের জন্য এবং বিচার বিভাগের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা পালনের জন্য একটি স্বাধীন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দিয়েছে

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য এই অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে ৩০ নভেম্বর দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *