জনতা ব্যাংকের আকর্ষণীয় আমানত স্কিমসমূহ ২০২৫ । ‘ডাবল বেনিফিট’ থেকে ‘ডিপোজিট পেনশন’ কোনটিতে বেশি লাভ?
জনতা ব্যাংকে নতুন আমানত ও মুনাফার সুযোগ-জনতা ব্যাংক পিএলসি গ্রাহকদের জন্য একাধিক আকর্ষণীয় আমানত স্কিম নিয়ে এসেছে, যা বিভিন্ন আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘নতুন প্রজন্মের দ্বি-গুণ আমানত স্কিম (NGDBS)’, ‘জনতা ব্যাংক ডিপোজিট পেনশন স্কিম (JBDPS)’, ‘জনতা ব্যাংক মাসিক বেনিফিট স্কিম (JMBS)’ এবং ‘স্পেশাল ফিক্সড ডিপোজিট রেট (SFDR)’।
🚀 নতুন প্রজন্মের দ্বি-গুণ আমানত স্কিম (NGDBS) এই স্কিমটির মূল আকর্ষণ হলো আমানতকে দ্বি-গুণে পরিণত করা।
- সুবিধা:
- ৬ বছর মেয়াদে জমা করা অর্থ দ্বি-গুণ হবে।
- আমানতকারীর আমানতের বিপরীতে ৯০% পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাওয়া যাবে।
- এই স্কিমটি যেকোনো ব্যক্তি, নাবালক, সংস্থা বা কোম্পানির নামে খোলা যেতে পারে।
- বিশেষত্ব: এই স্কিমের বিপরীতে অর্জিত মুনাফা গ্রাহক চাইলে ‘ফার্স্ট ব্লাড’ কর্তৃক পরিচালিত দাতব্য তহবিলে দান করতে পারেন।
📈 জনতা ব্যাংক ডিপোজিট পেনশন স্কিম (JBDPS)
এই স্কিমটি মূলত নিয়মিত ছোট অঙ্কের সঞ্চয়ের মাধ্যমে একটি বড় তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়।
- জমা ও মেয়াদ:
- মাসিক কিস্তির পরিমাণ সর্বনিম্ন ৳৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৳২৫,০০০।
- মেয়াদকাল ৫ বছর থেকে ১০ বছর।
- মুনাফার হার: ১০% পর্যন্ত (যেমনটি অন্যান্য সূত্র দ্বারাও নিশ্চিত হয়েছে)।
- সুবিধা: মেয়াদ শেষে কিস্তির পরিমাণ অনুযায়ী চূড়ান্ত জমার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মাসিক ৳৫,০০০ জমা করে ১০ বছর মেয়াদে চূড়ান্ত জমার পরিমাণ হতে পারে ৳৮,০৫,৩২৯।
- অন্যান্য: গ্রাহকের অনুরোধে যেকোনো সময় স্কিম ভাঙা যাবে।
🗓️ মাসিক বেনিফিট স্কিম (JMBS) এবং ফিক্সড ডিপোজিট (SFDR)
মাসিক বেনিফিট স্কিম (JMBS)-এ ১ বছর থেকে ৩ বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্য আমানত রেখে মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বর্তমান মুনাফার হার ১ বছর মেয়াদে ৭.২৫%।
আকর্ষণীয় রেট মেয়াদি FDR (SFDR)-এ ৩ মাস থেকে ১ বছর বা তার ঊর্ধ্বের জন্য আমানত রেখে মুনাফা অর্জন করা যায়। বর্তমান মুনাফার হারগুলো হলো:
- ৩ মাস: ৭.৭৫%
- ৬ মাস: ৭.৯০%
- ১ বছর ও তদূর্ধ্ব: ৮.০০%
🌟 অন্যান্য সুবিধা
- eJanata ডিজিটাল ব্যাংকিং: গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপ এবং এসএমএস ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে টাকা জমা, অ্যাকাউন্ট খোলা ও নগদ টাকা লেনদেন করতে পারেন।
- ডাবল বেনিফিট স্কিম ও ডিপোজিট পেনশন স্কিমের বিপরীতে ৯৫% পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। জনতা ব্যাংকের এই স্কিমগুলো গ্রাহকদের দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।

জনতা ব্যাংক নাকি দেওলিয়ার পথে?
সাম্প্রতিক সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জনতা ব্যাংক ‘দেউলিয়া’ না হলেও, ব্যাংকটি বর্তমানে গুরুতর আর্থিক সংকটে রয়েছে। সংবাদ সূত্র এবং আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী জনতা ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার কিছু উদ্বেগজনক দিক নিচে তুলে ধরা হলো:
⚠️ জনতা ব্যাংকের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি
| উদ্বেগজনক সূচক | পরিস্থিতি | প্রাসঙ্গিকতা |
| বিশাল লোকসান | ২০২৪ সালে ব্যাংকটি প্রায় ৳৩,০৬৬ কোটি (৩,০৬৬ কোটি টাকা) সমন্বিত লোকসান (Consolidated Loss) করেছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি ৳৬২ কোটি লাভ করেছিল। | লোকসানের এই উল্লম্ফন ব্যাংকটির আয়ের সক্ষমতার ওপর বড় প্রশ্ন সৃষ্টি করে। |
| খেলাপি ঋণ (NPL) | ২০২৪ সাল শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ (Non-Performing Loan – NPL) মোট ঋণের প্রায় ৭২% (অন্যান্য সূত্রমতে মোট শ্রেণিকৃত ঋণ ৳৬৮,০০০ কোটি)। | এটি অত্যন্ত উচ্চ একটি হার, যা ব্যাংকটির আর্থিক ভিত্তিকে চরম দুর্বল করে তুলেছে। |
| মূলধন ঘাটতি | ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল ৳৫২,৮৯০ কোটি। | মূলধন ঘাটতি একটি ব্যাংকের স্থিতিশীলতা ও আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষার জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করে। |
| ঋণ বিতরণ নীতি | ব্যাংকটি উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে নতুন করে ঋণ বিতরণ না করে খেলাপি ঋণ আদায়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। কিছু বড় খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে নতুন ঋণ দিতেও ব্যাংকটি অস্বীকৃতি জানিয়েছে। | এটি ইঙ্গিত দেয় যে ব্যাংক তারল্য ও ঝুঁকির বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় আছে। |
| নিট সুদ আয় (Net Interest Income) | ২০২৩ সালের নিট সুদ আয় ৳২৮২.৩২ কোটি থেকে কমে ২০২৪ সালে ৳৩,০৪২ কোটি নিট সুদ লোকসানে পরিণত হয়েছে। | আমানতের উচ্চ খরচ এবং খেলাপি ঋণের কারণে এই লোকসান হয়েছে। |
| সরকারের হস্তক্ষেপ | ব্যাংকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে থাকা বকেয়া ৳১৮.৩৮ বিলিয়ন ঋণ আদায়ের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। | এটি নির্দেশ করে যে ব্যাংকটি নিজেই কিছু বড় ঋণ পুনরুদ্ধারে অক্ষম। |
🏦 ‘দেউলিয়া’ হওয়া এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পার্থক্য
- সাধারণত, বেসরকারি বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (PLC) দেউলিয়া হলে তার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
- জনতা ব্যাংক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, তাই এর দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ হিসেবে বলা যায়:
- সরকারের সমর্থন: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের মূলধন ঘাটতি দেখা দিলে সরকার ট্যাক্স-দাতার অর্থ দিয়ে ‘পুনর্মূলধনীকরণ’ (Recapitalization) করে।
- জনগণের আস্থা: আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি রোধ করতে এবং দেশের আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার এই ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রাখবে।
জনতা ব্যাংক গুরুতর আর্থিক সংকটে থাকলেও, সরকারি মালিকানার কারণে এটি পুরোপুরি ‘দেউলিয়া’ হওয়ার ঝুঁকিতে নেই। তবে, ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতির চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক, যা দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

