বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫ । ১৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে এনইআইআর (NEIR)?
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (NEIR) সিস্টেমটি পুরোপুরি কার্যকর হতে যাচ্ছে।
এই সিস্টেম কার্যকর হলে, ১৫ ডিসেম্বরের পূর্বে নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত সকল মোবাইল হ্যান্ডসেট (যা বৈধ বা অবৈধভাবে দেশে আনা হয়েছে) স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে এবং তা নেটওয়ার্কে সচল থাকবে। তবে ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে শুধুমাত্র নিবন্ধিত মোবাইল হ্যান্ডসেটই নেটওয়ার্কে সচল থাকবে।
📱 মোবাইল হ্যান্ডসেট ক্রয়ের পূর্বে বৈধতা যাচাইয়ের পদ্ধতি
বিটিআরসি সকল গ্রাহককে যেকোনো মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে তার বৈধতা যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বৈধতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়াটি নিচে তুলে ধরা হলো:
১. IMEI নম্বর সংগ্রহ: আপনার হ্যান্ডসেটের IMEI নম্বর জানার জন্য ডায়াল করুন $\text{*}\text{#06\#}$।
২. মেসেজ প্রেরণ: মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে $\text{KYD}$ (স্পেস) ১৫ ডিজিটের IMEI নম্বরটি লিখে $\text{১৬০০২}$ নম্বরে প্রেরণ করুন।
৩. ফলাফল প্রাপ্তি: ফিরতি মেসেজের মাধ্যমে আপনি আপনার মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা বা অবৈধতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
📞 এনইআইআর (NEIR) সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ
এনইআইআর সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য জানার প্রয়োজন হলে বা সাধারণ জিজ্ঞাসা ও সমাধানের জন্য বিটিআরসি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে বলেছে:
বিটিআরসি হেল্পডেস্ক: এনইআইআর সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য জানতে বিটিআরসি’র হেল্পডেস্ক নম্বর $\text{১০০}$ এ কল করুন।
মোবাইল অপারেটর কাস্টমার কেয়ার: যেকোনো অপারেটরের মোবাইল থেকে $\text{*১৬১৬১\#}$ নম্বরে ডায়াল করে অথবা সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ($\text{১২১}$) ডায়াল করে বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে সরাসরি যোগাযোগ করেও এই সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যাবে।
ওয়েবসাইট: এনইআইআর সংক্রান্ত সাধারণ জিজ্ঞাসার সমাধান পেতে ভিজিট করুন: http://neir.btrc.gov.bd।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, $\text{*১৬১৬১\#}$ এই সার্ভিসটি ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে পাওয়া যাবে।

আমাদের দেশের প্রযুক্তি দিয়ে এটি কতটা সম্ভব?
বাংলাদেশে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (NEIR) সিস্টেমটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও অবকাঠামো বর্তমান। সংক্ষেপে বলতে গেলে: হ্যাঁ, বাংলাদেশের বর্তমান প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো দিয়ে NEIR সিস্টেম বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে, এই ব্যবস্থাটি সফল করার জন্য যে প্রযুক্তিগত কাঠামো ব্যবহৃত হচ্ছে, তার প্রধান দিকগুলো এবং দেশের সক্ষমতা নিচে আলোচনা করা হলো:
১. 💻 কেন্দ্রীয় ডাটাবেস এবং সফটওয়্যার (NEIR System)
সক্ষমতা: বিটিআরসি (BTRC) একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেস (NEIR) স্থাপন করেছে। এই ডাটাবেসটিতে দেশের সব বৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের IMEI নম্বর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এই ধরনের বিশাল আকারের ডাটাবেস পরিচালনা করার মতো সফটওয়্যার ও সার্ভার অবকাঠামো বাংলাদেশে বিদ্যমান।
কার্যকারিতা: NEIR সিস্টেমটি প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত IMEI নম্বরকে ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং সক্রিয় সিম কার্ডের (MSISDN) সাথে যুক্ত করে একটি “ট্রি প্লেট” তৈরি করে, যা নকল, চুরি যাওয়া বা অবৈধভাবে আমদানি করা ডিভাইস শনাক্ত করতে সক্ষম।
২. 📶 মোবাইল অপারেটরদের সাথে ইন্টিগ্রেশন
সক্ষমতা: দেশের সকল মোবাইল ফোন অপারেটরের নিজস্ব ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (EIR) আছে। NEIR সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য এই কেন্দ্রীয় NEIR সিস্টেমটি গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটক সহ সকল মোবাইল অপারেটরের EIR-এর সাথে রিয়েল-টাইমে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই সংযোগ স্থাপন করার প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও সক্ষমতা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে রয়েছে।
কার্যকারিতা: এই ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমেই একটি ফোন যখন নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়, তখন সেটি বৈধ কিনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়।
৩. 💬 গ্রাহক যাচাইকরণ পদ্ধতি
সক্ষমতা: গ্রাহকরা যেন সহজেই তাদের হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাই করতে পারে, তার জন্য $\text{১৬০০২}$ নম্বরে এসএমএস (KYD
<space>IMEI) বা $\text{*১৬১৬১\#}$ ইউএসএসডি কোড ব্যবহার করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো মোবাইল নেটওয়ার্কের একটি মৌলিক অংশ, যা বাংলাদেশে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে।কার্যকারিতা: বিদেশ থেকে আনা বা বিশেষ ক্ষেত্রে হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের জন্য অনলাইন পোর্টাল (neir.btrc.gov.bd) চালু করা হয়েছে। অনলাইন সেবাদানেও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট।
৪. 🔒 নিরাপত্তা ও রাজস্ব সুরক্ষা
সক্ষমতা: এই সিস্টেমের মূল উদ্দেশ্য হলো অবৈধ ফোন ব্যবহার বন্ধ করা, যা সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি কমাবে এবং মোবাইল ফোন-ভিত্তিক অপরাধ (যেমন: চুরি, ডিজিটাল প্রতারণা) রোধে সহায়ক হবে। এই ধরনের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি ও পরিচালনার জন্য সাইবার নিরাপত্তা এবং ডাটা এনক্রিপশনের মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে।
মোটকথা, NEIR এর মতো একটি বৃহৎ আকারের প্রযুক্তিগত প্রকল্প সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট, নেটওয়ার্ক ইন্টিগ্রেশন, রিয়েল-টাইম ডেটা প্রসেসিং এবং গ্রাহক ইন্টারফেসের মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাংলাদেশে বিদ্যমান। তবে, যেকোনো নতুন প্রযুক্তির মতোই, এর ব্যাপক ব্যবহারের সময় প্রাথমিক কিছু কারিগরি চ্যালেঞ্জ বা ব্যবহারকারীর সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, যা পর্যায়ক্রমে সমাধান করা জরুরি।

