পল্লী বিদ্যুতের কয়েকটি নিয়ম ২০২৫ । একজন ব্যক্তি কয়টি মিটার নিতে পারবে?
একটি পরিবারের জন্য একটি মিটার বরাদ্দ- তবে একজন ব্যক্তির নামে একাধিক মিটার থাকতে পারে বা নিতে পারবেন-যেমন, কোন একজন ব্যক্তির একটা পাঁচতলা বিল্ডিং আছে, বা একটা মার্কেট আছে। সেই বিল্ডিং বা মার্কেটে অসংখ্য ভাড়াটিয়া আছে। এখন ওই ব্যক্তি তার চাহিদা অনুযায়ী অসংখ্য মিটার নিতে পারবেন। অর্থাৎ প্রত্যেক ভাড়াটিয়ার জন্য আলাদা আলাদা মিটার নিতে পারবেন-নতুন বিদ্যুৎ মিটার আবেদন ২০২৫
শুনলাম ৪টি মিটার নেয়া যায়? হ্যাঁ। যদি আলাদাভাবে সিঙ্গেল ফেস মিটার নেয় তাহলে একটা বিল্ডিং বাড়ি বা মার্কেটের জন্য সর্বোচ্চ চারটা মিটার নিতে পারবে।তবে বিল্ডিংয়ে বা মার্কেটে যদি আরও বেশি মিটারের প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে উক্ত গ্রাহককে একটা ৩ ফেজ মাদার মিটার নিতে হবে। এবং সেই মাদার মিটারের আওতায় গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী অসংখ্য সাব মিটার নিতে পারবেন।
বাসা বাড়িতে একাধিক মিটার থাকলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে কেন? বাসা বাড়ি বা বিল্ডিংয়ে একসাথে দুইটা বা এর বেশি মিটার থাকলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে যে ভুলের কারণে তা হলো ঘরের ভিতরে ওয়্যারিংয়ে কমন নিউট্রাল জনিত সমস্যা থাকলে অর্থাৎ মিটার স্থাপনের পর মেইন সুইচ থেকে ঘরের ভেতরে প্রত্যেকটা মিটারের জন্য আলাদা ফেজ ও নিউট্রাল তারের ব্যবস্থা করতে হয়। যদি কোন এক মিটারের লোড সাইডের নিউট্রাল তারের সাথে আরেক মিটারের লোড সাইডের নিউট্রাল তারের সংযোগ থেকে থাকে তাহলেই বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে।
ওয়্যারিং করতে দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান কেন লাগবে? একজন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান এর সহযোগিতা নিয়ে ঘরের হাউস ওয়্যারিং চেক করাবেন, এবং ঘরের ভিতরে যদি কোথাও কমন নিউট্রালের সংযোগ থেকে থাকে অর্থাৎ অন্য কোন বাসার নিউট্রাল আপনার বাসার নিউট্রালের সাথে একত্রে সংযোগ থেকে থাকলে তাহলে সেটা সম্পূর্ণ আলাদা করে দিতে হবে। তাহলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আসবে না। ঝড় বৃষ্টিতে মিটারের সার্ভিস তার নষ্ট হয়ে গেলে গ্রাহককে সার্ভিস তারের মূল্য দিতে হবে না। গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ অফিস থেকে সার্ভিস তার দেয়া হবে। আর্থিং তারের ভুল সংযোগের কারণে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। যখন আর্থিং তারের সংযোগ মেইন সুইজে নিউট্রাল তারের সাথে একত্রে দেয়া থাকে তখনই বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে।
বিদ্যুতের সার্ভিস নিতে কি গ্রাহককে টাকা দিতে হয়? না। বিদ্যুৎ অফিস থেকে গ্রাহককে বিনামূল্যে সার্ভিস তার দেয়া হবে। বিদ্যুৎ বিল এর কাগজ নিয়ে গ্রাহককে সশরীরে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে তার পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হবে। অফিসে আবেদন ফি জমা দিতে হবে। তবে তারের মূল্য দেয়া লাগবেনা। বিদ্যুৎ অফিস থেকে তার ফ্রী পাবেন। যদি কোন গ্রাহক নিজে অফিসে না গিয়ে এই কাজ অন্য কাউকে কন্টাক্ট দিয়ে করাতে চায় তাহলে কিন্তু প্রতারণা শিকার হতে পারেন। বিদ্যুতের সকল কাজ যদি গ্রাহক নিজে সরাসরি অফিসে গিয়ে করে তাহলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অফিসের রশিদ ব্যতীত কাউকে কোন টাকা দিবেন না।
নির্দিষ্ট তারিখের ভিতরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পারলে মোট বিলের ৫% বিলম্ব মাশুল ফি দিতে হয় । বিদ্যুৎ বিল বেশি আসার কারণে মিটার পরিবর্তন করার পরেও যদি আপনার বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে তাহলে দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে ঘরের ওয়্যারিং চেক করান।
নতুন সংযোগে খুঁটির জন্য আবেদন করতে কি কি লাগে? নতুন মিটার সংযোগের জন্য খুঁটির প্রয়োজন হলে খুঁটির জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, দুই কপি ছবি, জমির খতিয়ানের ফটোকপি, প্রতিবেশীর একটি বিদ্যুৎ বিলের কাগজ লাগে। এ সকল ডকুমেন্ট নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে।এক্ষেত্রে আবেদন ফি ১২৫ টাকা মাত্র।
পল্লী বিদ্যুতের কয়েকটি নিয়ম ২০২৫
বিদ্যুৎ বিল কমানোর কয়েকটি টেকনিক ২০২৫ । বিদ্যুৎ বিল চাইলেই আপনি কিছুটা কমাতে পারেন।
- বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া বা বিদ্যুৎ অপচয় না করা। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে এমনিতেই বিদ্যুৎ ব্যবহার কম হবে তখন বিদ্যুতের রেট কমে যাবে, এতে বিদ্যুৎ বিলও তুলনামূলক ভাবে কম আসবে।
- বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইলেকট্রনিক পণ্য ব্যবহার করা। বর্তমানে আধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইলেকট্রনিক্স পণ্য বের হয়েছে। এতে তুলনামূলকভাবে বিদ্যুৎ কম খরচ হয়। যার ফলে বিদ্যুৎ বিল কম আসে।
- ভালো মানের তার দিয়ে ঘরের ওয়ারিং সম্পূর্ণ করা। এতে বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
- ফ্রিজ, এসি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা। অকারনে এসি চালিয়ে রাখবেন না এবং অকারনে বারবার ফ্রিজের দরজা খুলবেন না। এতে করে বিদ্যুৎ বিল কমে যাবে।
- ফ্রিজের ভিতরে বরফ যদি বেশি পরিমাণে জমে তাহলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে। আপনার ফ্রিজে বরফ বেশি পরিমাণে জমলে ফ্রিজের টেকনিশিয়ান দেখিয়ে এই সমস্যার সমাধান করাবেন তাহলে বিদ্যুৎ বিল কমে যাবে।
- পানির মোটরে পানি কম উঠলে আপনার পানির ট্যাংক ভর্তি হতে বেশি সময় লাগবে যার ফলে বিদ্যুৎ বেশি সময় ধরে ব্যবহার হবে এবং বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে। এরকম সমস্যা হলে ভালো মানের মোটর টেকনিশিয়ান দেখিয়ে মোটরের সমস্যার সমাধান করাবেন। তাহলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
- মিটার নষ্ট হয়েও বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। যদি আপনার মিটারে বিল বেশি আসে তাহলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দেখবেন মিটারের রিডিং বাড়ে কিনা, অথবা মেইন সুইস বন্ধ অবস্থায় মিটারে পাস বাতি জ্বলে কিনা। যদি মেইন সুইচ বন্ধ অবস্থায় মিটারের পালস বাতি জ্বলে এর মানে হচ্ছে আপনার মিটার নষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। তখন বিদ্যুৎ বিলের কপি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে মিটার পরিবর্তন করে নিবেন। তাহলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসা বন্ধ হয়ে যাবে।
- দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে ঘরের ওয়ারিং সম্পন্ন করবেন ইলেকট্রনিক কাজ করাবেন। যদি অদক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে ঘরের ওয়ারিং এর কাজ করা তাহলে কাজের ভুল ত্রুটি হতে পারে যার ফলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে।
- আর্থিং তারের সংযোগ ঘরের ভিতরে নিউট্রাল তারের সাথে একত্রে দেয়া থাকলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। যাদের এরকম সমস্যা রয়েছে তারা দক্ষ ইলেক্ট্রিশিয়ান দিয়ে আর্থিং তারের সংযোগ ঘরের ভিতর নিউট্রাল তার থেকে খুলে দিয়ে সার্ভিস তারের নিউট্রালে সাথে পেঁচিয়ে দিবেন তাহলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
- বাসা বাড়িতে যদি একাধিক মিটার থাকে এবং ঘরের ভিতরে যদি ২ মিটারের নিউট্রাল তারের সংযোগ কমন হয়ে যায় তাহলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। যাদের এরকম সমস্যা রয়েছে তারা দক্ষ ইলেক্ট্রিশিয়ান দিয়ে ঘরের ভেতরের কমন নিউট্রাল আলাদা করে দিবেন তাহলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
ওয়ারিশসূত্রে মিটারের নাম পরিবর্তন করবেন কিভাবে?
মায়ের নামের মিটার ওয়ারিশ সূত্রে ছেলের নামে করার জন্য সর্বপ্রথম আপনার মায়ের সকল সন্তান বা ওয়ারিশগনের কাছ থেকে না-দাবি সনদ নিতে হবে। যেমন আপনার ভাই, বোন তাদের কাছ থেকে না দাবি সনদ নিতে হবে এবং উক্ত না দাবি সনদটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দ্বারা সত্যায়িত করে নিতে হবে। আপনার যে সকল কাগজপত্র বা ডকুমেন্টস লাগবে-দুই কপি ছবি, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, জমির খতিয়ানের ফটোকপি, বিদ্যুৎ বিলের কাগজ এবং না দাবি সনদ। এসকল ডকুমেন্টস নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে আবেদনর টাকা অফিসের ক্যাশে জমা দিতে হবে। এর পরে বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃক তদন্ত সাপেক্ষে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মিটারের মালিকানা নাম পরিবর্তন হয়ে যাবে। এই পদ্ধতিতে আপনার মায়ের নামের মিটার ওয়ারিশ সূত্রে ছেলের নামে মালিকানা নাম পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
মিটারে Alarm বাতি জ্বললেই বিল বেশি আসবে? হ্যাঁ। এটা মিটারের কোন সমস্যা না। এটা আপনার ঘরের ভিতর ওয়ারিং এর সমস্যা। ঘরের ভিতরে ওয়ারিং এর সমস্যা থাকলেই বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে এবং মিটার তখন এই সংকেত দিয়ে আপনাকে এই সমস্যার সমাধান করার জন্য বলে। অর্থাৎ আপনাকে সতর্ক করে। যখন আপনার ঘরের হাউজ ওয়ারিং এর সমস্যা থাকবে তখনই আপনার বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে। আর তখন আপনাকে সচেতন করার জন্যই মিটারের Alarm বাতি জ্বলে আপনাকে সংকেত দিয়ে বলে এই সমস্যার সমাধান করতে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যা সমাধান করা না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত আপনার বিদ্যুৎ বিল বেশি আসতেই থাকবে। সাধারণত এই সমস্যা হয়ে থাকে, যখন আপনার ঘরে আর্থিং তারের সংযোগটা নিউট্রাল তারের সাথে একত্রে দেয়া থাকে। আবার যদি অন্য কোন ঘরের নিউট্রালের সাথে আপনার ঘরের নিউট্রাল কমন সংযোগ থাকে। আর এই সমস্যা সমাধান করতে হলে আপনাকে একজন দক্ষ ইলেকট্রনিশিয়ান এর সহযোগিতা নিয়ে আপনার সম্পূর্ণ ঘরের হাউস ওয়ারিং ভালো করে চেক করাতে হবে এবং যেখানে যেখানে ত্রুটি আছে সেগুলো সমাধান করাতে হবে। আর্থিং তারের সংযোগ নিউট্রাল পয়েন্ট থেকে খুলে আলাদা করে দিতে হবে এবং অন্য ঘরের নিউট্রালের সাথে যদি আপনার ঘরের নিউট্রালের কমন সংযোগ থাকে সেই কমন নিউট্রাল সংযোগ আলাদা করে দিতে হবে। এই কাজগুলো করলেই দেখবেন মিটারের Alarm বাতিটি আর জ্বলবে না। আর যখন মিটারে Alarm বাতি আর জ্বলবে না তার মানে আপনার এই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এতে করে আপনার আর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আসবে না।
যদি কোনো ব্যক্তি একাধিক মিটার নিতে চান, তবে তাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে
১. আবেদন: একাধিক মিটারের জন্য আবেদন করতে হবে এবং আবেদনপত্রে কারণ উল্লেখ করতে হবে।
২. ফি: প্রতিটি মিটারের জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে।
৩. লোড : প্রতিটি মিটারের জন্য প্রয়োজনীয় লোড (বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ) উল্লেখ করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে মিটার সরবরাহ করা হবে।
৪. সংযোগ : প্রতিটি মিটারের জন্য আলাদা সংযোগ লাইন স্থাপন করতে হবে।
৫. নিয়ম : পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে।
যদি কোনো গ্রাহক একাধিক মিটারের জন্য আবেদন করেন, তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের আবেদন বিবেচনা করবে এবং সমিতির নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যক্তি একটি বাণিজ্যিক ভবনে একাধিক দোকান বা ফ্লোরের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে চান, তবে তাকে প্রতিটি ইউনিটের জন্য আলাদা মিটারের জন্য আবেদন করতে হতে পারে। সুতরাং, এটি স্পষ্ট যে, একজন ব্যক্তি একাধিক মিটার নিতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করে তার আবেদনের যৌক্তিকতা এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়মের উপর।