সরকারি কর্মচারীদের বাস্তব চিত্র ২০২৫ । সর্ব‌নিম্ন গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের মূল বেতন ৩০০০০ টাকা হওয়া প্র‌য়োজন? - Technical Alamin
সরকারি আদেশ ও তথ্য

সরকারি কর্মচারীদের বাস্তব চিত্র ২০২৫ । সর্ব‌নিম্ন গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের মূল বেতন ৩০০০০ টাকা হওয়া প্র‌য়োজন?

সূচীপত্র

সরকারি কর্মচারিদের বেতন ভাতাদি নিয়ে একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরলাম খুব স্বাভা‌বিক ভা‌বে ১ জ‌ন মানু‌ষের ৫০ টাকা হা‌রে ৩ বেলা খাওয়া বাবদ খরচ হ‌বে (৫০×৩) = ১৫০ টাক‌া। মা‌সে ৩০ দি‌নে খরচ হ‌বে (১৫০×৩০) = ৪৫০০ টাকা। আনুষা‌ঙ্গিক খরচ গ‌রি‌বি হা‌লে হলেও মা‌সে ৫০০ টাকা। ০১ জন ব্য‌ক্তির এক মা‌সের খাওয়া খরচ সর্ব‌মোট (৪৫০০+৫০০) =৫০০০ টাকা হবে তাহ‌লে ৬ সদস্য বি‌শিষ্ট প‌রিবা‌রের (স্বামী, স্ত্রী, দুই সন্তান এবং চাকুরীজীবীর বাবা ও মা) খরচ (৫০০০×৬) = ৩০০০০ টাকা খরচ হ‌বে- সরকারি কর্মচারীদের বাস্তব চিত্র ২০২৫

সর্বনিম্ন বেতন কত হওয়া উচিত? বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী সর্ব‌নিম্ন গ্রেডভুক্ত প্রজাত‌ন্ত্রের একজন কর্মচারীর মূল বেতন ৩০০০০ টাকা হওয়া প্র‌য়োজন। এখন সময় উপ‌যোগী বা‌ড়িভাড়া, টি‌ফিন ভাতা ও চি‌কিৎসা ভাতা এবং শিক্ষা ভাতা প্র‌য়োজন। মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা, সম্মানিত মন্ত্রী পরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিব এবং নতুন পে কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ নীতি নির্ধারকগণকে এবিষয় গুলো বিবেচনা করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করেছেন জনাব আশিকুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক ১১-২০ ফোরাম ও যুগ্মমহাসচিব বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ।

এশিয়ার মধ্যে কোন দেশের সরকারি কর্মচারীদের বেতন কম?

এশিয়ার মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতনের পরিমাণ দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে এবং তা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রার মান এবং সরকারি বাজেটের উপর নির্ভর করে। তবে তুলনামূলকভাবে যেসব দেশে সরকারি কর্মচারীদের গড় বেতন সবচেয়ে কম, তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দেশ হলো:

📌 ১. বাংলাদেশ- সরকারি কর্মচারীদের প্রারম্ভিক বেতন তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুসারে একজন নবীন কর্মচারীর বেতন প্রায় ৮,২৫০ টাকা (মৌলিক) থেকে শুরু হয় (বর্তমানে কিছুটা বেড়েছে)। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও নতুন পে-স্কেল এখনও কার্যকর হয়নি।

📌 ২. নেপাল- নেপালের সরকারি কর্মচারীদের বেতনও তুলনামূলকভাবে কম। একটি জুনিয়র কর্মচারীর মাসিক বেতন প্রায় ১৫,০০০–২০,০০০ নেপালি রুপি।

📌 ৩. মিয়ানমার- অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সরকারি চাকরির বেতন তুলনামূলক কম। স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে বাস্তব আয়ের মান কমে গেছে।

📌 ৪. কাম্বোডিয়া ও লাওস- সরকারি কর্মচারীদের বেতন এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নিচের সারিতে। মাসিক বেতন অনেক সময় ১৫০–২৫০ মার্কিন ডলার এর মধ্যে থাকে।

নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, কিছু রিপোর্টে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের-এর নাম উঠে এসেছে যেখানে সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মূল্যস্ফিতি বিবেচনায় জাতীয় বেতন কাঠামো ২০২৫ ।  বাংলাদেশের ৯ম পে স্কেল কেমন হওয়া উচিৎ? বাংলাদেশের ৯ম পে স্কেল কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে সরকারি কর্মচারী, অর্থনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা ও প্রত্যাশা রয়েছে। বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে একটি যুগোপযোগী ও বৈষম্যহীন পে স্কেল অত্যন্ত জরুরি।

  1. জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি: মূল্যস্ফীতি সমন্বয়: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির সাথে সঙ্গতি রেখে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা। বিগত পে স্কেল ঘোষণার পর থেকে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে, যার ফলে কর্মচারীদের প্রকৃত আয় কমে গেছে।

  2. ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি: সরকারি কর্মচারীদের (বিশেষ করে নিম্ন গ্রেডের) সর্বনিম্ন বেতন বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে সক্ষম এমন পর্যায়ে নির্ধারণ করা উচিত। বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের দাবি অনুযায়ী, সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজার টাকা বা তার কাছাকাছি হওয়া উচিত। কিছু সূত্র ২৫ হাজার টাকার কথাও উল্লেখ করেছে।

     

  3. গ্রেড সংখ্যা ও বেতন অনুপাত: গ্রেড সংখ্যা কমানো: বর্তমানে ২০টি গ্রেড রয়েছে। এটি কমিয়ে ১২ বা ১০টি গ্রেডে নিয়ে আসা যেতে পারে, যা বেতন বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি প্রশাসনিক জটিলতাও হ্রাস করবে। ১:৫ অনুপাত: প্রথম ও শেষ গ্রেডের বেতনের অনুপাত ১:৫ হওয়া উচিত। অর্থাৎ, সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতনের ৫ গুণ হবে। এটি বেতন বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

     

  4. ইনক্রিমেন্ট ও উচ্চতর গ্রেড: বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট: প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট হারে (যেমন ১০%) বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিত করা, যা কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং তাদের কর্মস্পৃহা বাড়াবে। উচ্চতর গ্রেড/পদোন্নতি: পদোন্নতির সুযোগ না থাকলে অথবা ব্লক পোস্টের ক্ষেত্রে প্রতি ৫ বছর অন্তর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করা উচিত। উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০% বেতন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।

     

  5. বাড়ি ভাড়া: মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ (যেমন ৬০%) বাড়ি ভাড়া হিসেবে প্রদান করা, যা শহর ও গ্রামের জন্য একই হওয়া উচিত। বর্তমান বেতন কাঠামোয় বাড়ি ভাড়ার শতাংশ মূল বেতন বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়, যা ঠিক নয়।

     

  6. চিকিৎসা ভাতা: পুরো পরিবারের (যেমন ৭ জনের) জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা ভাতা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

     

  7. শিক্ষা ভাতা: সন্তানের সংখ্যা অনুযায়ী (যেমন ১ সন্তানের জন্য ৫০০০ টাকা, ২ সন্তানের জন্য ১০০০০ টাকা) শিক্ষা ভাতা প্রদান করা যেতে পারে।

     

  8. উৎসব ভাতা: বছরে দুটি উৎসব ভাতা হিসেবে দুইটি মূল বেতন (মোট চারটি মূল বেতন) প্রদান করা যেতে পারে।

     

  9. নববর্ষ ভাতা: মূল বেতনের ৫০% নববর্ষ ভাতা হিসেবে প্রদান করা যেতে পারে।

     

  10. শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা: তিনটি মূল বেতনের সমান শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা প্রদান করা যেতে পারে।

     

  11. অন্যান্য ভাতা: বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ভ্রমণ ভাতা, টিফিন ও লাঞ্চ ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ানো। পিতা-মাতার ভাতা: পিতা-মাতার জীবিত থাকা সাপেক্ষে মাসিক ভাতা প্রদান করা যেতে পারে।

     

  12. বৈষম্য নিরসন: সচিবালয় ও নন-সচিবালয় বৈষম্য: সচিবালয়ের বাইরে কর্মরত সকল পর্যায়ের কর্মচারীদের পদবি ও বেতন বৈষম্য দূর করা উচিত। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল: টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করা, যা নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি: সকল পদে এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি বাস্তবায়ন করা, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনবে এবং বৈষম্য কমাবে।

     

  13. স্থায়ী পে কমিশন: মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে নিয়মিত বেতন-ভাতা নির্ধারণের জন্য একটি স্থায়ী বেতন কমিশন বা সেল গঠন করা যেতে পারে, যাতে প্রতি বছর নতুন করে পে স্কেল নিয়ে আন্দোলন বা জটিলতার সৃষ্টি না হয়। আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল: আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল করে সকল আউটসোর্সিং কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা। অবসরের বয়সসীমা ও প্রবেশ বয়স: চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর করার দাবি রয়েছে।
  14. সার্বিকভাবে, ৯ম পে স্কেল এমন হওয়া উচিত যা সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে, তাদের মধ্যে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য দূর করবে এবং তাদের কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে সামগ্রিকভাবে সরকারি সেবার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। তবে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক সক্ষমতা এবং অর্থনীতির ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাবও বিবেচনায় রাখা জরুরি।

ঢাকা শহরে ৬ সদস্যের পরিবার চলতে সর্বনিম্ন খরচ কত?

ঢাকা শহরে ৬ সদস্যের পরিবারের জন্য সর্বনিম্ন মাসিক খরচ কত, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন, কারণ এটি জীবনযাত্রার মান, আবাসনের স্থান, খাদ্যাভ্যাস, শিক্ষা এবং অন্যান্য ব্যয়ের উপর নির্ভরশীল। তবে, একটি আনুমানিক ধারণা দেওয়া যেতে পারে। সাধারণভাবে, ঢাকা শহরে একটি পরিবারের জন্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে মাসে প্রায় ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা খরচ হতে পারে। ঢাকা শহরে আবাসনের খরচ অনেক বেশি। ছোট পরিবার হলেও, ভাড়ার জন্য একটি ভালো অঙ্কের টাকা খরচ করতে হতে পারে। খাদ্য খরচ নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার মানের উপর। সাধারণভাবে, একজন ব্যক্তির জন্য মাসে ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা খাদ্য বাবদ খরচ হতে পারে। ৬ জনের পরিবারের জন্য এটি ৩০,০০০ থেকে ৪২,০০০ টাকা হতে পারে। শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহন, পোশাক, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য অতিরিক্ত খরচ যোগ হবে। যদি ৬ সদস্যের পরিবার একটি ছোট ফ্ল্যাটে থাকে, যেখানে ভাড়া ১৫,০০০ টাকা, এবং খাদ্য বাবদ মাসে ৩০,০০০ টাকা খরচ হয়, তাহলে অন্যান্য খরচ সহ তাদের মোট খরচ প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা হতে পারে।

তুলনামূলক তথ্য (আনুমানিক গড় বেতন):

দেশপ্রাথমিক সরকারি বেতন (মাসিক)মন্তব্য
বাংলাদেশ৮,২৫০–২০,০০০ টাকাপুরনো পে-স্কেল, উচ্চ মূল্যস্ফীতি
নেপাল১৫,০০০–৩০,০০০ NPRঅর্থনীতি দুর্বল
মিয়ানমার$50–$100মুদ্রার মূল্য হ্রাস পাচ্ছে
লাওস$100–$200জীবনযাত্রার ব্যয় কম
ভারত₹২৫,০০০+সপ্তম বেতন কমিশন অনুসারে উন্নত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *