পেনশন নীতিমালায় শুভঙ্করের ফাঁকি ২০২৫ । ১৫ বছরের গ্যারান্টি সত্ত্বেও ২৫ উর্ধ্ব পুত্র সন্তানের জন্য বন্ধ পারিবারিক পেনশন?
সরকারি কর্মচারীগণের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০-এর অধীনে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য ১৫ বছরের পারিবারিক পেনশনের যে সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছিল, ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে সেই গ্যারান্টি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এই নীতির ফলে পেনশনারের মৃত্যুর পর ১৫ বছরের মেয়াদকাল পূর্তির সময় অবশিষ্ট থাকলেও, প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র সন্তানরা অবশিষ্ট সময়ের জন্য পারিবারিক পেনশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পেনশন নীতিমালার এই স্ব-বিরোধী অবস্থান নিয়ে সরকারি দপ্তরগুলোতেও তৈরি হয়েছে জটিলতা।
আনুতোষিক সমর্পণের বিনিময়ে ১৫ বছরের নিশ্চয়তা
সরকারি কর্মচারীরা তাদের মোট আনুতোষিকের (গ্র্যাচুইটি) একটি অংশ সমর্পণ করে থাকেন এই নিশ্চয়তার ভিত্তিতে যে, অবসরের পর পেনশনার নিজে এবং তার মৃত্যুর পর পরিবার অন্তত ১৫ বছর পর্যন্ত মাসিক পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। এটিই সরকারি পেনশনের একটি প্রধান সুবিধা হিসেবে বিবেচিত।
নীতির মূল কথা ও বাস্তবায়নের জটিলতা
‘সরকারি কর্মচারীগণের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০’ এর ৩.০৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল যে, পারিবারিক পেনশনের ক্ষেত্রে পুত্র সন্তানের বয়সসীমা সাধারণত ২৫ বছর। তবে, যদি পেনশনারের অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে মোট ১৫ বছরের মেয়াদকাল পূর্তির কোনো সময় অবশিষ্ট থাকে, তবে বয়স নির্বিশেষে শুধু সেই অবশিষ্ট সময়টুকু পর্যন্ত পুত্র সন্তান পারিবারিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। এই বিধানটি ১৫ বছরের গ্যারান্টিকে শক্তিশালী করেছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত এক নির্দেশনায় এই নীতিতে ভিন্নতা আসে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি অনুবিভাগের ০৯/০৯/২০২১ তারিখের একটি সিদ্ধান্তের (স্মারক) কারণে ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে জ্যেষ্ঠ পুত্র ১৫ বছরের অবশিষ্ট সময়ের জন্য পারিবারিক পেনশন প্রাপ্য হবেন না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অর্থাৎ, সরকার যখন ১৫ বছরের জন্য পেনশন নিশ্চিত করে আনুতোষিকের অংশ নিয়ে নিচ্ছে, তখন পেনশনারের মৃত্যুর পর তার ২৫ উর্ধ্ব পুত্রকে ১৫ বছরের অবশিষ্ট সময়ের জন্য পারিবারিক পেনশন দিতে অস্বীকার করা হচ্ছে।
বাস্তবে জটিলতা ও কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ
পেনশন নীতিমালার এই দুই ধরনের নির্দেশের কারণে মাঠ পর্যায়ের হিসাবরক্ষণ অফিসগুলোতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রাক্তন অডিটর জনাব শাহানা আক্তার পেনশন ভোগরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সৈয়দ মাহমুদ আল হাসান (যাঁর বয়স ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে) অবশিষ্ট সময়ের জন্য মাসিক পেনশনের আবেদন করলে বিষয়টি সামনে আসে।
এ প্রেক্ষিতে হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিজিএ) এর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে এই সাংঘর্ষিক আদেশাবলীর জটিলতা নিরসনকল্পে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন কোনো সরকারি কর্মচারী তার আনুতোষিক সমর্পণ করছেন, তখন ১৫ বছরের সুবিধাটি তার আইনি প্রাপ্য। উত্তরাধিকারীকে তার প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হলে তা ওই সমর্পিত অর্থের বিনিময়ে পাওয়া নিশ্চয়তার লঙ্ঘন। অবিলম্বে এই নীতিগত অসঙ্গতি দূর করে পেনশনারের উত্তরাধিকারীদের জন্য ১৫ বছরের পারিবারিক পেনশনের সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

https://bdservicerules.info/family-pension-new-order-bangladesh/

