Taka Banking Instruction Bangladesh Bank 2025 । টাকার উপর লেখা, সীল ও স্ট্যাপলিং বন্ধের কঠোর নির্দেশ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক? - Technical Alamin
Latest News

Taka Banking Instruction Bangladesh Bank 2025 । টাকার উপর লেখা, সীল ও স্ট্যাপলিং বন্ধের কঠোর নির্দেশ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক?

সূচীপত্র

দেশের তফসিলি ব্যাংকসমূহের জন্য নতুন ও পুনঃপ্রচলনযোগ্য ব্যাংক নোটের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)। সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে যে, নোট গণনাকারীরা টাকার উপর সরাসরি সংখ্যা, তারিখ লেখা, সীল প্রদান, স্বাক্ষর এবং এমনকি স্ট্যাপলিং (১০০০ টাকা মূল্যমান নোট ব্যতীত) করছেন, যা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নির্দেশনার লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সী ম্যানেজমেন্ট (ডিসিএম) কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলার লেটার নং- ০৪/২০২১-এ বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রতি এই নির্দেশনা কঠোরভাবে পরিপালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

⚠️ যেসব বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা হলো:

  • টাকার উপর লেখা ও সীল পরিহার: সরাসরি টাকার উপর কোনো ধরনের সংখ্যা ও তারিখ লেখা, শাখার সীল, স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর প্রদান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

  • স্ট্যাপলিং পরিহার: নোটের প্যাকেটে স্ট্যাপলিং করা থেকে বিরত থাকতে হবে (তবে ১০০০ টাকা মূল্যমান নোটের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না)।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই অনিয়মের কারণে নোটসমূহ অপেক্ষাকৃত কম সময়ে অপ্রচলনযোগ্য হয়ে পড়ছে এবং গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এটি রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্লিন নোট পলিসি’ বাস্তবায়নে অন্যতম অন্তরায়।

🚨 নোট জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম:

সার্কুলারে তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকে কারেন্সী/ব্যাংক নোট জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি গুরুতর অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়েছে:

১. পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটের প্যাকেটে অন্য নোটের উপস্থিতি: পুনঃপ্রচলনযোগ্য (Reissuable) নোটের প্যাকেটে Mutilated Note, Non-issue Note, Claims Note, Soiled Note, Built-up Note, Mismatched Note ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। ২. গণনার ভুল: গণনাকৃত প্যাকেটে সঠিক সংখ্যার চেয়ে নোট কম থাকা। ৩. মূল্যমানের ভুল: উচ্চ মূল্যমান নোটের প্যাকেটে কম মূল্যমানের নোট থাকা। ৪. অবৈধ ‘Built-up Note’ তৈরি: উচ্চমূল্যের ভিন্ন ভিন্ন সিরিয়ালের দুটি ‘claim notes’-এর অংশ নিখুঁতভাবে জোড়া দিয়ে ‘built-up note’ তৈরি করে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটের প্যাকেটে রাখা। ৫. জাল নোটের উপস্থিতি: পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটের প্যাকেটে জাল নোট থাকা।

সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণের নির্দেশ:

বর্ণিত প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্বের নির্দেশনাগুলো (ডিসিএম সার্কুলার নং-০১/২০১৫, নং-০৬/২০১৯ ইত্যাদি) কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছে। এখন থেকে, ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই গণনাকালে নোটের উপর লেখা, স্বাক্ষর, সীল ও স্ট্যাপলিং থেকে বিরত থাকতে হবে এবং:

  • নোটের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

  • প্যাকেট ব্যান্ডিং করার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখার নাম, সীল, নোট গণনাকারীর স্বাক্ষর ও তারিখ সম্বলিত লেবেল/ফ্ল্যাইলিফ লাগানোর বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

এই নির্দেশনা ব্যাংক কোম্পানী আইন-১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জারি করা হয়েছে এবং সকল ব্যাংককে বিধি-বিধান ও নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য পুনরায় তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

টাকা নষ্ট হওয়ার মূল কারণ কি স্ট্যাপলিং?

টাকা নষ্ট হওয়ার মূল কারণগুলির মধ্যে স্ট্যাপলিং অন্যতম, তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার এবং সাধারণ পর্যবেক্ষণ থেকে টাকা নষ্ট হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা যায়:

স্ট্যাপলিং: একটি প্রধান কারণ

যখন টাকার বান্ডিলে স্ট্যাপল পিন ব্যবহার করা হয়, তখন এটি কাগজের নোটের মধ্যে ছিদ্র করে। এই ছিদ্রগুলি সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকে, যার ফলে নোট দুর্বল হয়ে যায় এবং সহজে ছিঁড়ে যায়। বিশেষ করে যখন নোটগুলি বারবার গণনা করা হয় বা এক হাত থেকে অন্য হাতে যায়, তখন এই ছিদ্রগুলি নোটের আয়ু কমিয়ে দেয়।

টাকা নষ্ট হওয়ার অন্যান্য কারণ:

  1. নোটের উপর লেখা ও সীল মারা: নোটের উপর কলম দিয়ে লেখা, সীল মারা বা স্বাক্ষর করার কারণে নোটের উপরিভাগের কালি ছড়িয়ে পড়ে, যা নোটের মসৃণতা নষ্ট করে এবং এটিকে দ্রুত নোংরা করে তোলে। এছাড়া, এসব লেখা নোটের আসল পরিচয়কে ঢাকা দিতে পারে।

  2. ময়লা ও অপরিচ্ছন্নতা: নোটের উপর কাদা, তেল, খাবার বা অন্য কোনো ময়লা লেগে থাকলে তা নোটকে অপরিষ্কার করে তোলে। ময়লাযুক্ত নোট সাধারণত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং এর উপরিভাগ নষ্ট হয়ে যায়।

  3. ছিঁড়ে যাওয়া বা টুকরা হয়ে যাওয়া: নোটের উপর বারবার ভাঁজ পড়া, ছিঁড়ে যাওয়া বা টুকরা হয়ে যাওয়া নোট নষ্ট হওয়ার একটি প্রধান কারণ। এগুলি সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে বা অসাবধানতার কারণে ঘটে।

  4. পানিতে ভেজা: টাকা পানিতে ভিজে গেলে তার কাগজের গুণমান নষ্ট হয়ে যায় এবং এটি সহজে ছিঁড়ে যেতে পারে। ভেজা টাকা শুকানোর পরেও এর টেক্সচার ও দৃঢ়তা আগের মতো থাকে না।

  5. পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটের প্যাকেটে ত্রুটিপূর্ণ নোট: বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে, পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটের প্যাকেটে Mutilated Note (বিকৃত নোট), Non-issue Note (অপ্রচলনযোগ্য নোট), Claims Note (দাবিকৃত নোট), Soiled Note (ময়লা নোট), Built-up Note (জোড়া লাগানো নোট) এবং Mismatched Note (অমিল নোট) পাওয়া যাচ্ছে। এসব ত্রুটিপূর্ণ নোট যখন ভালো নোটের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়, তখন পুরো বান্ডিলের নোটের মান কমে যায় এবং সেগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

  6. জাল নোটের উপস্থিতি: জাল নোট যখন আসল নোটের সাথে মিশে যায়, তখন এটি লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে এবং সামগ্রিকভাবে নোটের প্রতি বিশ্বাস কমিয়ে দেয়।

  7. অপর্যাপ্ত সংরক্ষণ: ব্যাংক বা ব্যক্তিদের দ্বারা নোট সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হলে, যেমন আর্দ্র পরিবেশে বা সুরক্ষাহীন স্থানে রাখলে নোট দ্রুত নষ্ট হতে পারে।

উপসংহারে বলা যায়, স্ট্যাপলিং নিঃসন্দেহে একটি বড় কারণ যা নোটের ক্ষতি করে, তবে বিভিন্ন ধরনের অপব্যবহার, অসাবধানতা এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনাও টাকা নষ্ট হওয়ার পেছনে দায়ী। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্য হলো এসব কারণ দূর করে একটি ‘ক্লিন নোট পলিসি’ বাস্তবায়ন করা, যাতে নোটের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায় এবং জনসাধারণ স্বচ্ছন্দ্যে পরিচ্ছন্ন নোট ব্যবহার করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *