প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আয় করছে। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, গুগল যে পাবলিশার বা বিভিন্ন ওয়েব সাইট মালিকদের মাসে হাজার হাজার, কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে ” এত টাকা গুগল কোথা থেকে পাচ্ছে।
তাদের আয়ের উৎস কি? হ্যাঁ এ প্রশ্নটি আমার মনেও জেগেছে, আমি গুগল সার্চ করে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে জেনেছি এবং এটিই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আজ। প্রথমেই ক্লিয়ার করি যে, গুগল তাদের আয়ের অংশ আমাদের দিচ্ছে তারা নিজের পকেট থেকে না নিজেদের বিজনেস থেকে নয় বরং আয়কর অর্থে অংশ দিচ্ছে তারা।
প্রথমেই আমি গুগল কে এবং google.com এটি কি?
গুগল হচ্ছে একটি সার্চ ইঞ্চিন। বাংলাদেশও গুগলের মত পিপিলিকা নামে একটি সার্চ ইঞ্চিন খুলেছে কিন্তু বাঙ্গালীদের নিকট সেটি তেমন জনপ্রিয় হতে পারে নাই। যাহোক গুগলের প্রতিদ্বন্ধী আরও কিছু সার্চ ইঞ্চিন রয়েছে যার মধ্যে Yahoo.com এবং Being.com সার্চ ইঞ্চিন। গুগল একটি রোবট ভিত্তিক সার্চ ইঞ্চিন। গুগল একটি কোম্পানির ম্যাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অনেকগুলো অ্যালগারিদম কোডিং রোবট তৈরি করেছে যা দ্বারা আপনার সার্চ করা তথ্য গুলে তাদের সার্চ পেইজে প্রর্দশন করে থাকে। গুগল সার্চ ইঞ্চিন এমন একটি সার্চ ইঞ্চিন যেখানে আপনি ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে এড্রেস বারে গুগল ডট কম লিখে সার্চ দিলেই আপনার কাঙ্খিত তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে গুগল নিজেকে এমনভাবে আপডেট করে নিয়েছে যে, সার্চ করলে মনে হয় ঠিক আমার মনের কথাগুলো গুগল খুজে দিচ্ছে। গুগল কে অনেকে মামা বলেও সম্ভোধন করেন এই বলে যে, যা চাওয়া যায় তাই পাওয়া যায় গুগল থেকে। এই সবজান্তা সমশেরকে আজ সকলেই চিনে ২০০৬ সালের পূর্বেও গুগল নয় Yahoo.com একটি সুপরিচিত সার্চ ইঞ্চিন ছিল। নতুন বা তরুনদের অনেকেই অন্য কোন সার্চ ইঞ্চিন চিনে বললেই চলে, সার্চ করা মানেই এখন গুগল করা।
গুগল এত তথ্য কিভাবে সংরক্ষণ করে রাখে
গুগল মূলত নিজে কোন তথ্য তাদের সার্ভারে সংরক্ষিত রাখে না। গুগল বিভিন্ন ওয়েব সাইট হতে তথ্য ক্রাউলিং করে লিংক তৈরি করে রাখে। ব্যক্তিগত বা অব্যক্তিগত বিভিন্ন ওয়েবসাইট যখন অনলাইনে লাইভ থাকে তখন গুগল তথ্য গুলো দিয়ে একটি জালিকা বিন্যাস তৈরি করে রাখে। যখন কেউ গুগলে কোন তথ্য সার্চ করে তখন গুগল তার জালিকা বিন্যাসের মেমরি হতে তার সার্চ পেইজে সম্ভাব্য তথ্যগুলো তুলে ধরে, ইউজার তার কাঙ্খিত তথ্যে ক্লিক করলে গুগল ইউজারকে নির্ধারিত লিংকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ওয়েব সাইটে নিয়ে যায়। তাই বিভিন্ন ওয়েব সাইট নির্মাতা বা ওয়েব সাইটের মালিক কষ্ট করে কন্টেন্ট লিখে রাখে যা দিয়ে গুগল পোদ্দারি করে থাকে। তাই একথা বলাই যায় গুগল নিজের ধনে নয়, অন্যের ধরে পোদ্দারী করে।
এখন আসি গুগল এত টাকা কোথায় পায়
একটা সময় ছিল যখন পত্রিকার রাজত্ব ছিল প্রতি এক ইঞ্চি বিজ্ঞানের জন্য হাজার টাকা গুণতে হতো। একদিন একটি বিজ্ঞাপন কোন পত্রিকায় প্রকাশ করতে ৩০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। মানুষ এখন পত্রিকা মুখী নয়, অনলাইন মুখী বলতে পারেন। গাড়ি বাড়ি রাস্তা-ঘাটে সব স্থানে মোবাইল হাতে নিত্য নতুন তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। জেগে থাকার বেশিভাগ সময়ই মানুষ মোবাইল বা অন্য কোন গেজেটের দিকে তাকিয়ে থাকছে। কেউ গুগল সার্চ করছে, কেউ বা কোন ওয়েব সাইট ভিজিট করছে আবার কেউ পত্রিকা পড়ছে। এত কিছুর মাঝে গুগল আয় করে যাচ্ছে সাথে ব্যয় করছে কোটি কোটি টাকা।
গুগল তার সার্চ পেইজের প্রথম দিকে কোন ওয়েব সাইটকে প্রদর্শনের জন্য প্রতিদিন ১-৫ ডলার পর্যন্ত অর্থ নিচ্ছে। প্রতিটি ইউজারদের সার্চ রেজাল্টে হাতে কাছে প্রথম সারিয়ে অর্থ দেওয়া বা বিজ্ঞাপনের জন্য চাঁদা দেওয়া ওয়েব সাইট গুলো শুরুতে রাখছে। গুগল কারও ওয়েব সাইটকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে। ইউজারদের সামনে রেখে পরিচিত করিয়ে এবং ওয়েব সাইট ভিজিট করিয়ে আয় করছে হাজার হাজার ডলার। নিচের সার্চটিতে খেয়াল করলে বিজ্ঞাপন লেখা লিংক গুলো পেইড সার্চ।
প্রথম তিনটি সার্চ রেজাল্ট পেইড সার্চ, ৪র্থ সার্চ রেজাল্টটি অর্গানিক সার্চ রিজাল্ট। hostgator.com হতে অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে গুগল তাকে সার্চ পেইজের প্রথম দিকে রাখছে। ফলে হাজার হাজার ভিজিটর ও ডোমেইন হোস্টিং ক্রেতা পাচ্ছে hostgator.com। ফলে তাদের সেলস বাড়ছে এবং বাড়ছে রেভিনিউ। সেখান থেকে আয়ের অর্থ বা লভ্যাংশ হতেই গুগল আয় করছে। এবার আসুন দ্বিতীয় ধাপে আর কিভাবে গুগল আয় করছে…
বিজ্ঞাপন হতে গুগলের অর্থ আয়
অতীতে প্রথম আলো পত্রিকায় ভিশন ও এশিয়ান পেইন্ট বিজ্ঞাপন ছাপতে হাজার হাজার টাকা খরচ করতো, এখন ভিশন তার ফ্রিজের বিজ্ঞাপন এই প্রথম আলোর মত হাজারো পত্রিকাতে প্রকাশ করছে কিন্তু হাজার হাজার টাকা দিয়ে নয় বরং গুগলকে মাত্র ১-৩ ডলার অর্থ প্রদান করে গুগলের মাধ্যমে প্রথম আলো, ইত্তেফাক, যুগান্তর ইত্যাদি পত্রিকায় সারাদিন বিভিন্ন সময় অর্থ কিছুক্ষণ সময়ের জন্য সারাদিন স্বল্প অর্থে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। আসুন আরও একটু ক্লিয়ার হয়ে নিই। ভিশন কোম্পানি বা এশিয়ান পেইন্ট কোম্পনি এখন আর প্রথম আলো পত্রিকা অফিসে বিজ্ঞাপন বাবদ কোন অর্থ প্রদান করছে না। তারা বিদেশী কোম্পানি গুগলকে সারাদিন ১-২ লক্ষ মানুষের কাছে তাদের বিজ্ঞাপন পৌছে দেয়ার শর্তে ১-৩ ডলার ব্যয় করছে সারা দিনের জন্য, গুগল বিভিন্ন বাংলাদেশী পত্রিকাকে হায়ার করছে বাংলাদেশের ভিশন বা এশিয়ান পেইন্টের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে। অর্থাৎ যে অর্থ প্রথম আলো নিজে একা আয় করতো তা এখন তৃতীয় পক্ষ গুগলের মাধ্যমে সামান্য হারে গ্রহণ করে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।
আসুন আরও একটু পরিস্কার হয়ে নিই, গুগল বিজ্ঞাপন বাবদ ভিশন ও এশিয়ান পেইন্ট এর নিকট হতে দৈনিক ১-৩ ডলার নিচ্ছে। ১ ডলার আয় রেখে গুগল ১-২ ডলার ব্যয় করে একটি নয় দেশের হাজারো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এখনে প্রথম আলো কাগজি পত্রিকায় ১-৩ ডলার পুরোটা আয় করতো কিন্তু এখন ১-৩ সেন্ট পাচ্ছে বিজ্ঞাপন প্রচার করার জন্য। অর্থ এক ডলারের স্থানে ১০ পয়সা আয় করছে প্রথম আলোর মত একটি পত্রিকা।
হ্যাঁ, ডিজিটাল যুগে হাজার হাজার ডলার অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপন বাবদ বিভিন্ন নামীদামী বা বেনামী ওয়েব সাইটগুলো হাজার হাজার টাকা আয় করছে। যদি দেশে ওয়েব সাইট কম থাকে তবে অধিক অর্থ বিদেশে পড়ে থাকবে, আবার খুব বেশি অনলাইন পোর্টাল বা পত্রিকা থাকলে বিজ্ঞাপনের মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। একটি সময় আসবে যখন আর অফলাইন পত্রিকা বাংলাদেশীরা পড়বে না, গেজেট বা মোবাইলেই সেরে নিবে পত্রিকা পড়ার কাজ। রঙিন পেইজে হয়তো আর মুখ গুজে কেউ পত্রিকা পড়ে না।
শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনা হতে এটি পরিস্কার যে, অনলাইন প্রাপ্তি ও ব্যয়ের পার্থক্য হতেই গুগল কোটি কোটি ডলারের মালিক হচ্ছে। বাংলাদেশ সহ বিদেশী অনেক তরুণ এখন গুগলে কাজ করছে। ডিজিটাল যুগে মোবাইল এ্যাপ এবং ওয়েব সাইট তৈরি করে একজন সাধারণ তরুণও অনলাইন হতে গুগল এ্যাডসেন্সের বদৌলতে দেশে টাকা আনছে। যার ফলে বৈদেশিক রেমিট্যান্সও বৃদ্ধি পাচ্ছে।