দলিল রেজিস্ট্রেশন ডকুমেন্টস । জমি রেজিস্ট্রেশন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে?
দলিল লেখার জন্য কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন পড়ে যা ছাড়া ক্রেতা ও বিক্রেতার তথ্য পাওয়া যাবে না-কৃত জমির প্রয়োজনীয় তথ্য যে ডকুমেন্টে থাকে – দলিল রেজিস্ট্রেশন ডকুমেন্টস
রেজিস্ট্রি অফিসে ‘রেজিস্ট্রির জন্য দলিল গ্রহণ’ ও ‘দলিল রেজিস্ট্রি’ একই বিষয় নয়। রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে যে দলিলটি গৃহিত হলো তা রেজিস্ট্রি করতে অফিসভেদে দুই-তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। রেজিস্ট্রির জন্য গৃহিত দলিলে প্রথমে দলিল দাখিলকারী, সম্পাদনকারী, সনাক্তকারী, দলিল দাখিলের সময়-তারিখ, পরিশোধকৃত ফি, কর ও শুল্ক ইত্যাদি বিষয়ে পৃষ্টাঙ্কন ও সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষরের পর দলিলটি বালাম (ভলিউম) বহিতে ধারাবাহিকভাবে নকল করা হয়। এরপর মূল দলিলের শেষ পৃষ্টার উলটো পার্শ্বে ‘দলিলটি কত সালের, কত নম্বর বালাম বহির, কত পৃষ্টা থেকে কত পৃষ্টায় নকল করা হয়েছে’ তা লিখে সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করা হয়। দলিলটি বালাম বহিতে নকলকরা এবং সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করার নাম দলিল রেজিস্ট্রি। দলিলটির রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হলে দলিলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ (দাতা/বিক্রেতা-গ্রহিতার নাম, মৌজার নাম, দাগ নম্বর ইত্যাদি) নিয়ে ‘সূচিবহি’ তৈরি করা হয়, যাতে দলিলটি ভবিষ্যতে সহজেই খুজে পাওয়া যায়।
সাধারণ নাগরিক কি দলিল লিখতে পারবে? না। দলিল লেখক হতে নির্ধারিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং সাব-রেজিস্টারের নিকট হতে সনদ গ্রহণ করতে হবে। চাইলেই নিজের দলিল নিজে লেখা যায় না। আপনি কোর্টে নিজের কেস নিজেই লড়তে পারবেন কিন্তু দলিল লেখক বা ভেন্ডার না হলে আপনি নিজের জমির দলিল নিজে লিখতে পারবেন না। পূর্বে নিজের হাতের লেখা দলিলের গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও এখন বিনা রেজিস্ট্রেশন দলিলের কোন মূল্য বা গ্রহণযোগ্যতা নেই।
দলিল রেজিস্ট্রেশন না করলে কি কোন সমস্যা? অবশ্যই সমস্যা। ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যেকোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যে দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক অথচ রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি, তখন সেই দলিল নিয়ে আপনি কোনো দাবি করতে পারবেন না। সাব-কবলা দলিল, হেবা বা দানপত্র, বন্ধকি দলিল, বায়না দলিল, বণ্টননামা দলিলসহ বিভিন্ন হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। দলিলের বিষয়বস্তু যে এলাকার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেই এলাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে।
দলিল রেজিস্ট্রি করতে খরচ কেমন? সম্পত্তির মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি ৫০০ টাকা। পাঁচ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম হলে ফি এক হাজার টাকা। মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে দুই হাজার টাকা। বন্ধকি অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি বন্ধকি অর্থের ১ শতাংশ এবং ২০০ টাকার নিচে ও ৫০০ টাকার বেশি নয়। অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কিন্তু ২০ লাখ টাকার নিচে হলে বন্ধকি অর্থের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে তা এক হাজার ৫০০ টাকার কম নয় এবং দুই হাজার টাকার বেশিনয়।
নিবন্ধন আইন, ১৯০৮ এর ধারা ৫২ক, ধারা ২২ক(১), ধারা ২২ক(২), ধারা ২২ক(৩) অনুযায়ী দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিম্নলিখিত কাগজ-পত্রাদি আবশ্যিকভাবে প্রয়োজন
জমির চৌহদ্দি কি? সুশোভনসম্পাদনা চৌহদ্দি শব্দটি বিশেষ্য। এর অর্থ চারপাশের জমি। তবে কোন ব্যাক্তির জমি বোঝাতে এটি সরকারি দলিলে ব্যবহৃত হয়। মোট কথা আশে পাশের জমির বর্ণনা দিয়ে বিক্রিত বা ক্রয় করা জমি শনাক্ত করা হয়।
Caption: Source of information
দলিল করতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট । কোন ডকুমেন্ট কোথায় সংগ্রহ করবেন?
- জমির সিএস/এসএ/আরএস/বিএস/বিআরএস অথবা নামজারি খতিয়ানের মূল কপি অথবা সহি মোহরীয় নকল। এটি পাওয়ার জন্য www.land.gov.bd ভিজিট করে সংগ্রহ করতে হবে অথবা ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে আবেদন করতে হবে। জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম থেকে খতিয়ান/পর্চা সংগ্রহ করুন।
- হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের রশিদ (দাখিলা)। এটি পাওয়ার জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিস (তহশিল অফিস) অথবা জেলা সাব-রেজিস্টারের কার্যালয় হতে সংগ্রহ করতে পারবেন।
- ক্রেতা এবং বিক্রেতাগণের জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদ/পাসপোর্ট এর কপি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন, ইউপি এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তর হতে সংগ্রহ করা যাবে।
- উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার/ওয়ারিশ সনদ। ওয়ারিশ সনদ স্থানীয় পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় হতে সংগ্রহ করতে পারবেন।
- ক্রেতা এবং বিক্রেতাগণের সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। কোন ফটোস্টুডিও হতে সংগ্রহ করা যাবে।
- প্রয়োজনীয় বায়া দলিল সমূহের মূল কপি অথবা সার্টিফাইড কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় অথবা পুরনো দলিলের ক্ষেত্রে জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় (সদর রেজিস্ট্রেশন রেকর্ডরুম) হতে সংগ্রহ করা যাবে। ইউনিয়ন ভূমি অফস হতেও কিছু ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
- সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং জেলা সদরের পৌরসভার অধীন ১ লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিলের ক্রেতা এবং বিক্রেতার E-TIN। এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড – www.nbr.gov.bd এ যোগাযোগ করতে হবে। তবে অনলাইনে হতে কম্পিউটারের যে কোন দোকান হতে রেজিস্ট্রেশন করে সংগ্রহ করা যায়।
কত দিন অতিবাহিত হলে দলিল আর পাওয়া যাবে না?
দলিলের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হলে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল দাখিলের সময় প্রদানকৃত ‘৫২ ধারার রশিদ’ জমা দিয়ে দাখিলকারী বা তার মনোনীত ব্যক্তি মূল দলিল গ্রহন করতে পারেন। দলিল ফেরত গ্রহনের নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে মুল দলিল ফেরত না নিলে পরবর্তী প্রতি মাস বা তার অংশ বিশেষের জন্য ৫ টাকা হারে জরিমানা আদায় করা হয়। তবে বিলম্ব যত মাসই হোক না কেন, জরিমানা ১০০ টাকা এর বেশী আদায়ের বিধান নাই। রেজিস্ট্রি শেষ হওয়ার পর কোন দলিল দাবীবিহীন অবস্থায় ২ (দুই) বছরের বেশি রেজিস্ট্রি অফিসে পরে থাকলে “রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮” এর ৮৫ ধারার বিধান মতে, রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের পূর্ব অনুমোদনক্রমে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা যায়। সুতরাং সময়মত মূল দলিল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ প্রয়োজন।