বাড়ি নির্মাণে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে লিখিত চুক্তিনামা: ভবিষ্যতের সুরক্ষা ও স্বচ্ছতার চাবিকাঠি - Technical Alamin
বিবিধ তথ্য দেখুন

বাড়ি নির্মাণে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে লিখিত চুক্তিনামা: ভবিষ্যতের সুরক্ষা ও স্বচ্ছতার চাবিকাঠি

একটি স্বপ্নীল বাড়ি নির্মাণের শুরুতেই মালিক এবং নির্মাণ শ্রমিকের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ও আইনি ভিত্তি সম্পন্ন চুক্তিনামা থাকা অপরিহার্য অনেক ক্ষেত্রে মৌখিক চুক্তিতে কাজ শুরু করার পর কাজের মান, সময়সীমা বা আর্থিক লেনদেন নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় । এসব জটিলতা এড়াতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তিনামায় সাধারণত নিচের বিষয়গুলো থাকা জরুরি।

মালিক ও ঠিকাদারের দায়িত্ব বণ্টন

চুক্তিনামা অনুযায়ী, বাড়ির মালিক (প্রথম পক্ষ) ইট, বালি, রড ও সিমেন্টের মতো প্রধান সরঞ্জাম সরবরাহ করবেন অন্যদিকে, ঠিকাদার বা মিস্ত্রি (দ্বিতীয় পক্ষ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন: ভাইব্রেটর, মিক্সার মেশিন, কাঠ ও বাঁশ নিজ দায়িত্বে আনবেন এছাড়াও শ্রমিকের বাসস্থান ও বাথরুমের সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব থাকে মালিকের ওপর

কাজের ধরণ ও বাজার দর

নির্মাণ কাজের দরের ক্ষেত্রে এলাকা ও দক্ষতা ভেদে ভিন্নতা থাকতে পারে । নথিতে দেখা যায়:

  • ফ্লোর লেভেল পর্যন্ত: ছাদের স্কয়ার ফুট অনুযায়ী মাটি কাটা ও গ্রেড বীমসহ অন্যান্য কাজের দর প্রতি স্কয়ার ফুট ১৮০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে

  • ফ্লোরের উপরের কাজ: কলাম, ছাদ ও গাঁথুনিসহ কাজের দর প্রতি স্কয়ার ফুট ২৬০ টাকা নির্ধারিত হতে পারে

  • তলাভিত্তিক বৃদ্ধি: সাধারণত দ্বিতীয় তলা থেকে পরবর্তী প্রতি তলার কাজের দর ৫% হারে বৃদ্ধি পায়

কাজের গুণমান ও কিউরিং

নির্মাণ কাজে কিউরিং (পানি দেওয়া) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তিনামা অনুযায়ী, মিস্ত্রিকে নির্দিষ্ট মেয়াদে সঠিক নিয়মে কিউরিং করতে হবে এছাড়া মিস্ত্রির ভুলের কারণে কোনো কাজ নষ্ট হলে তা নিজ খরচে ঠিক করে দিতে তিনি বাধ্য থাকবেন একইভাবে ১৮ বছরের নিচে কাউকে নির্মাণ কাজে নিয়োগ দেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ

পেমেন্ট ও চুক্তি বাতিল পদ্ধতি

কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর মাপ অনুযায়ী পেমেন্ট করার নিয়ম রাখা হয়েছে যদি কোনো কারণে কাজের মান সন্তোষজনক না হয়, তবে মালিক পক্ষ নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে চুক্তি বাতিলের অধিকার রাখেন । অন্যদিকে, ঠিকাদার কাজ বন্ধ করতে চাইলে অবশ্যই আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে; বিনা নোটিশে কাজ বন্ধ করা চুক্তি ভঙ্গের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে

আইনি সুরক্ষা

চুক্তিনামাটি আরও শক্তিশালী করতে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে নোটারি পাবলিক নিবন্ধন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এতে করে কোনো পক্ষ শর্ত ভঙ্গ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হয়

পরিশেষে, বাড়ি নির্মাণে শুধু পরিচিতির ওপর নির্ভর না করে প্রতিটি কাজের বিবরণ লিখিত রাখা এবং উভয় পক্ষের স্বাক্ষর সম্বলিত দলিল ভবিষ্যতের আর্থিক ও মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করে

রাজমিস্ত্রির সাথে বাড়ি নির্মাণ কাজের চুক্তিনামা

রাজমিস্ত্রিীর সাথে চুক্তিপত্র না করলে কি সমস্যা হতে পারে?

রাজমিস্ত্রির সাথে লিখিত চুক্তিপত্র না করলে বাড়ি নির্মাণের সময় নানাবিধ জটিলতা ও আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। আপনার সরবরাহকৃত চুক্তিনামার তথ্যানুযায়ী, লিখিত চুক্তি না থাকলে যে সমস্যাগুলো হতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হলো:

  • কাজের দরের স্বচ্ছতা হারানো: লিখিত চুক্তি না থাকলে কাজের রেট নিয়ে পরবর্তীতে বিতর্ক হতে পারে; যেখানে চুক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ থাকে ফ্লোর লেভেল পর্যন্ত প্রতি স্কয়ার ফুট ১৮০/- টাকা এবং ফ্লোরের ওপর থেকে ২৬০/- টাকা

  • অতিরিক্ত খরচের বোঝা: চুক্তি না থাকলে ২য় তলা থেকে পরবর্তী তলাগুলোতে কাজের মজুরি কত বৃদ্ধি পাবে (যেমন ৫% বৃদ্ধি) তা নিয়ে মালিক ও মিস্ত্রির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে

  • কাজের গুণগত মান নিশ্চিত না হওয়া: প্লাস্টার বা গাঁথুনির বালি কতবার চালতে হবে বা ইট কতক্ষণ আগে ভিজাতে হবে, এসব প্রযুক্তিগত শর্ত না থাকলে মিস্ত্রি দায়সারা কাজ করতে পারেন

  • ভুল কাজের দায়ভার: চুক্তিনামা থাকলে মিস্ত্রির ভুলের কারণে কোনো কাজ নষ্ট হলে তিনি তা নিজ খরচে করে দিতে বাধ্য থাকেন । চুক্তি না থাকলে এই ক্ষতির ভার মালিকের ওপর পড়তে পারে।

  • সরঞ্জাম সরবরাহ নিয়ে দ্বন্দ্ব: ভাইব্রেটর, মিক্সার মেশিন বা মাচানের বাঁশ কে বহন করবে তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে, যা চুক্তিতে মিস্ত্রির দায়িত্ব হিসেবে নির্দিষ্ট করা থাকে

  • পেমেন্ট নিয়ে জটিলতা: কাজ কতদিন অন্তর মেপে পেমেন্ট করা হবে (সপ্তাহ বা ১৫ দিন) এবং হিসাবের স্বচ্ছতা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে

  • ডিজাইন পরিবর্তন: লিখিত নির্দেশনা না থাকলে মিস্ত্রি অনেক সময় নিজের ইচ্ছামতো ডিজাইন পরিবর্তন করতে পারেন, যা ভবনের কাঠামোগত ক্ষতি করতে পারে

  • আইনি সুরক্ষার অভাব: কোনো পক্ষ শর্ত ভঙ্গ করলে বা কাজ মাঝপথে বন্ধ করে দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে যদি তা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নিবন্ধিত না থাকে

  • মালামালের অপচয়: মিস্ত্রি বা শ্রমিকরা মালামাল অপচয় করলে তার ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোনো আইনি ভিত্তি থাকে না

এই সমস্যাগুলো এড়াতে এবং একটি নিয়মনীতির মধ্যে নির্মাণ কাজ সুসম্পন্ন করতে লিখিত চুক্তি করা অত্যন্ত জরুরি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *