নিরাপদ বিনিয়োগ ও বেশি লাভের মাধ্যম কি কি? – ঝুঁকি বিহীন বিনিয়োগ মাধ্যমগুলো হলো জমি, গোল্ড, সঞ্চয়পত্র, এফডিআর এবং শেয়ার বাজার – আপনি এই ৫টি মাধ্যমের উপর নিরাপদে এবং নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে পারেন। যদি আপনি ব্যবসায়ী হউন তবে আপনার জন্য এসব মাধ্যম নয়, ব্যবসায়ের চেয়ে উত্তম মাধ্যমে আর নেই। তবে আপনি যদি টাকা ব্যবসায়ে খাটাতে না জানেন বা কোন চাকরি করেন তবে আপনার জন্য উপরোক্ত ৫টি মাধ্যমের মধ্যে কোনটি বেষ্ট সেটি নিয়েই আজ আলোচনা করবো।

প্রথমেই আসি জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে, জমি ক্রয় খুবই কঠিন কাজ, জমির খোজ খবর নিয়ে দক্ষ আইনজীবীর মাধ্যমে কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করে জমি ক্রয় করতে হয়। হুট করে কম দামে পেলেই দ্রুত জমি কিনতে যাবেন না। এতে করে খোয়াতে পারেন আপনার কস্টার্জিত অর্থ। চলুন আমরা জমির অতীত ইতিহাস জেনে নি। ব্যাংকগুলো যেহেতু ১১-১২ বছর অর্থাৎ যুগে ডাবল বেনিফিট স্কিম দিচ্ছে এবং মিলিওনিয়ার স্কীমও প্রায় ১ যুগ ধরে অর্থ গচ্ছিত রাখলে দ্বিগুন আমানত সুবিধা দিচ্ছে তাই আমরা গত ১২ বছর বা একযুগে জমির মূল্যে কি ধরনের পরিবর্তন এসেছে সেটি দেখবো।

২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকার জমির দাম পুনর্নির্ধারণ করে। সরকারি হিসাব মতে, গত সেপ্টেম্বর থেকে মতিঝিলে প্রতি কাঠা জমির দাম ৩১ লাখ ৬০ হাজার, ধানমণ্ডিতে ২৭ লাখ ৬০ হাজার, ইস্কাটনে ২২ লাখ ৪০ হাজার, মিরপুরে ছয় লাখ ২৮ হাজার, সূত্রাপুরে ১৬ লাখ ৬০ হাজার এবং বেগুনবাড়ীতে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।

উত্তরা প্রথম পর্বে ৭ কোটি ২০ লাখ, মতিঝিল ও মহাখালীতে ৬ কোটি, নিকুঞ্জে ৬ কোটি ১২ লাখ, উত্তরা দ্বিতীয় পর্বে ৪ কোটি ৪২ লাখ, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, বাংলামোটর, পান্থপথ, কাকরাইলে ২ কোটি ৪০ লাখ, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা, গেন্ডারিয়া ও বাড্ডায় ১ কোটি ৪৪ লাখ ও পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় প্রতি কাঠা জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মতিঝিলে গত ১২ বছরে জমির দাম ২০ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। জমি কিনতে যেহেতু বড় ধরনের বিনিয়োগ লাগে তাই আপনার স্বল্প বিনিয়োগ থাকলে আপনি জমি কেনার আইডিয়াটি বাদ দিতে পারেন।

হ্যাঁ গোল্ডের ক্ষেত্রে গত ১২ বছরে দাম বেড়েছে ৪ গুন। যদি আপনি স্বর্ণে বিনিয়োগ করে তবে তা ১২ বছরে অন্তত চারগুন বেড়ে যেতে পারে। তাই নিশ্চিন্তের স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে পারেন। যদিও আমাদের দেশে স্বর্ণের ক্ষেত্রে সঠিক বিক্রয় ভেল্যু পাওয়া যায় না কারণ স্বর্ণের বার ক্রয় বিক্রয় ব্যক্তি পর্যায়ে করা যায় না। স্বর্ণালংকার ক্রয় করলে নিখাত স্বর্ণ পাওয়া যায় না বিধায় অলংকার বিক্রিতে ঘাটতি দেখা দেয় তাই ক্রয়মূল্য চড়া হলেও বিক্রয়মূল্য বাজুজ কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য পাওয়া যায় না। তবুও নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বর্ণ একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। যে কোন সময় টাকায় রূপান্তর করা যায়। তবে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একযুগ করে ৮০ হাজারও হবে গ্যারন্টি নেই।

দুই দশকে ঢাকার জমির মূল্য বৃদ্ধির হার ১৩৫৪ দশমিক ৭১ শতাংশ/জমির সরকারি মূল্য তালিকা ঢাকা

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীন বিভিন্ন হাউজিং এস্টেটের জমির মূল্য তালিকা ও সেবা ফি

 জমির সরকারি মূল্য তালিকা ঢাকা

Caption: 1 katha land price in bangladesh

এফডিআর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা কত হবে?

স্থায়ী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে মুনাফা ৭% হলেও বিভিন্ন ব্যাংকগুলো ডাবল বেনিফিট স্কিমগুলোতে ১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগে ১১ বছর বা সারে এগারো বছর পরে দ্বিগুণ আমানত ফেরতের নিশ্চিয়তা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি আমরা ১২ বছর ধরি তবে সেটি ২.১ গুন মুনাফা হতে পারে। মুনাফা থেকে যেহেতু উৎসে কর কেটে রাখা হবে তাই ২ গুনই বলা যেতে পারে।

শেয়ার বাজার বিনিয়োগও কি লাভজনক হতে পারে?

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শেয়ার, স্টক, ডিভেঞ্চারে বিনিয়োগ অত্যন্ত লাভজনক হলেও বাংলাদেশে বেশ ঝুকিঁপূর্ণ তবুও যদি আমরা একটি পরিসংখ্যা দেখে নিই যে, একযুগে ঠিক কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে। Square Pharmaceuticals Ltd (SQPH) শেয়ার যদি ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডাটা দেখি তবে দেখবো যে, ৬৪ টাকার শেয়ারের বর্তমান মূল্য ২১২ টাকা তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ২১২-৬৪ = ১৪৮ টাকা বেড়েছে। তাহলে ৩.৩১ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে মূল্য বা বিনিয়োগ বৃদ্ধি হার খুব একটা কম নয়।

সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ কতটা লাভজনক?

সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার গড়ে ১১% – ১১% মুনাফা ধরে যদি আপনি ১২ বছর বিনিয়োগ করে থাকেন তবে সেটি হিসাব করলে বের হবে তা কতটা নিরাপদ ও মুনাফা পাওয়া যায়। ১ লক্ষ টাকায় ৯৬০*১২*১২ = ১,৩৮,২৪০ টাকা। মুনাফাকে যদি পুন: বিনিয়োগ করা হয় তবে সেটি ১৫ লক্ষ টাকা হয়ে যাবে। ১২ বছর মুনাফাসহ সেটি ২.৫ গুণ হবে।

তাহলে স্বল্প বা বেশি অর্থ ঠিক কোথায় বিনিয়োগ করবেন আপনি নিজেই কিন্তু এখন ভেবে দেখতে পারেন। প্রথম বেশি অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জমি, অতপর গোল্ড এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে লং টার্ম শেয়ার বাজার এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে সঞ্চয়পত্র। সর্বশেষ পর্যায়ে রয়েছেে এফডিআর বা ফিক্স ডিপোজিট। তাই নিরাপদ বিনিয়োগ এবং ভাল বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগ করুন। বিনিয়োগে রিটার্ণের হার যদি মূল্যস্ফিতির চেয়ে কম হয় তবে আপনার টাকার পরিমাণ কিন্তু কমে যাবে যদিও টাকা কিভাবে কমে সেটি বুঝতে হলে আপনাকে মুদ্রা বিনিময় হার ও মূল্যস্ফিতি বিষয়টি বুঝতে হবে।