ফিতরার পরিমাণ ২০২৩ । ফিতরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা ও সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা

ফিতরার পরিমাণ ২০২৩ । ফিতরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা ও সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা

ফিতরা কত দিতে হবে তা স্থানীয় বাজার দরের উপর নির্ভর করে-ঢাকা হারই চূড়ান্ত নহে – ফিতরার পরিমাণ ২০২৩

ফিতরা কি?–ফিতরা হল ইসলামিক ধর্মের একটি ধর্মীয় উৎসব। এটি মুসলিমদের রমজান মাসের শেষের দিনে পালন করা হয়। এই উৎসবে মুসলিম লোকরা একটি সাদা কাপড় পরে ইদ গাহে প্রদর্শন করে নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর নাম গুণগান করে। এরপর লোকরা পরস্পরে সম্পর্ক মোটামুটি করে এবং একটি ধর্মীয় উপহার অথবা চাঁদার দান করে। ফিতরা ইসলামিক সংস্কৃতির গৌরবময় উৎসব হিসাবে পরিচিত।

১৪৪৪ হিজরি সনের সাদাকাতুল ফিতর-এর হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ (২ এপ্রিল, রবিবার) সকাল ১১ টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন |
সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ইসলামী শরীয়াহ মতে, আটা, যব, কিসমিস, খেজুর ও পনির ইত্যাদি পণ্যগুলোর যে কোন একটি দ্বারা ফিতরা প্রদান করা যায়। গম বা আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬শ’ ৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১১৫ (একশত পনের) টাকা প্রদান করতে হবে।

যব দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩ শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৩৯৬ (তিনশ ছিয়ানব্বই) টাকা, কিসমিস দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১,৬৫০ (এক হাজার ছয়শত পঞ্চাশ) টাকা, খেজুর দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩ শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১,৯৮০ (এক হাজার নয়শ আশি) টাকা ও পনির দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩ শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২,৬৪০ (দুই হাজার ছয়শত চল্লিশ) টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে। দেশের সকল বিভাগ থেকে সংগৃহীত আটা, যব, খেজুর, কিসমিস ও পনিরের বাজার মূল্যের ভিত্তিতে এই ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে। মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উপর্যুক্ত পণ্যগুলোর যে কোন একটি পণ্য বা এর বাজার মূল্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন। উল্লেখ্য, উপর্যুক্ত পণ্যসমূহের স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যের তারতম্য রয়েছে। তদনুযায়ী স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।

চলতি বছর ফিতরা হার নির্ধারণ করা হয়েছে / ফিতরা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না

কাজের লোককে ফিতরা দেয়া সম্পর্কে কি বক্তব্য? বেতনভুক্ত কাজের ব্যক্তির পক্ষে ফিতরা প্রদান করা মালিকের উপর আবশ্যক নয়। তবে মালিক ইচ্ছে করলে কাজের লোককে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন। তবে তিনি বেতন বা পারিশ্রমিক হিসেবে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন না ।

ফিতরার পরিমাণ ২০২৩ । ফিতরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা ও সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা

কে ফিতরা পাবে? গরীব, দুঃস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্থ ব্যক্তিকে ফিতরা প্রদান করা যাবে।

ফিতরার বিধান । কে ফিতরা দেবে?

  • ছাদাক্বাতুল ফিতর মুসলমান নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, সকলের জন্য আদায় করা ওয়াজিব। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,
  • عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمَرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْحُرِّ وَالْعَبْدِ وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ.
  • ইবনে ওমর বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সকলের উপর মাথা পিছু এক ছা‘ পরিমাণ খেজুর বা যব যাকাতুল ফিৎর হিসাবে ওয়াজিব করেছেন এবং তা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন’।
  • যদি কোনো ব্যক্তি ঈদের দিন সুবহে সাদেকের পূর্বে মারা যায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। এভাবে যদি সুবহে সাদেকের পরে কোনো বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে তার পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়।
  • তবে যদি কোনো ব্যক্তি সুবহে সাদেকের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে বা কোনো বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে তাহলে তাদের ওপরও ফিতরা ওয়াজিব।
  • ছাদাক্বাতুল ফিতর হ’ল জানের ছাদাক্বা, মালের নয়। বিধায় জীবিত সকল মুসলিমের জানের ছাদাক্বা আদায় করা ওয়াজিব। কোন ব্যক্তি ছিয়াম পালনে সক্ষম না হ’লেও তার জন্য ফিৎরা ওয়াজিব।

সভায় কে কে উপস্থিত ছিলেন?

সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর মাওলানা মুহাম্মদ কাফিলুদ্দীন সরকার, মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, জামিয়া শরীয়াহ এর ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি নজরুল ইসলাম, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রধান মুফতি মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোঃ আনিছুর রহমান সরকার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. মুফতি ওয়ালীয়ুর রহমান খান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা মুহাম্মদ আবু সালেহ পাটোয়ারী, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিউদ্দিন কাসেমসহ বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন। (জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে নয়)

ফিতরা হিসেবে টাকা ছাড়া আর কি কি দেওয়া যাবে?

অর্ধ ছা‘ ফিতরা আদায় করা সুন্নাত বিরোধী কাজ। মু‘আবিয়া -এর যুগে মদীনায় গম ছিল না। সিরিয়া হ’তে গম আমদানী করা হ’ত। তাই উচ্চ মূল্যের বিবেচনায় তিনি অর্ধ ছা‘ গম দ্বারা ফিৎরা দিতে বলেন। কিন্তু বিশিষ্ট ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী সহ অন্যান্য ছাহাবীগণ মু‘আবিয়া -এর এই ইজতিহাদী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশ ও প্রথম যুগের আমলের উপরেই কায়েম থাকেন। যারা অর্ধ ছা‘ গম দ্বারা ফিৎরা আদায় করেন, তারা মু‘আবিয়া -এর রায়ের অনুসরণ করেন মাত্র। ইমাম নবভী বলেন, সুতরাং অর্ধ ছা‘ ফিৎরা আদায় করা সুন্নাহর খেলাপ। রাসূল (ছাঃ) যাকাতের ও ফিতরার যে হার নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা রদবদল করার অধিকার কারো নেই। এ ব্যাপারে ওমর একটি ফরমান লিখে আমর ইবনে হাযম -এর নিকটে পাঠান যে, যাকাতের নিছাব ও প্রত্যেক নিছাবে যাকাতের যে, হার তা চির দিনের জন্য আল্লাহ তার রাসূলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এতে কোন যুগে, কোন দেশে কমবেশি অথবা রদবদল করার অধিকার কারো নেই।

ফিতরা কত টাকা ২০২৩ । ফিতরা কি দ্বারা আদায় করতে হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *