স্বর্ণের দাম ২০২৫ – সপ্তাহের শুরুতেই সোনার বাজারে নেমে এলো আরও এক ধাপ স্বস্তির বার্তা। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের পতন অব্যাহত থাকায় দেশের বাজারেও মূল্যবান এই ধাতুর মূল্য আবারও কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট (হলমার্ককৃত) স্বর্ণের দাম সম্প্রতি ভরিতে (১১.৬৬৪ গ্রাম) কমানো হয়েছে।

সর্বশেষ মূল্য সমন্বয় অনুযায়ী, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের নতুন দাম হলো: নতুন দাম: ১,৯৩,৮০৯ টাকা (প্রতি ভরি) । হ্রাসের পরিমাণ: ১০,৪৭৪ টাকা (প্রতি ভরিতে)। এই নতুন মূল্য ২৯ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

অন্যান্য দেশের থেকে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম এত বেশি কেন? স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে সরকার-নির্ধারিত শুল্ক (Duty), মূল্য সংযোজন কর (VAT) এবং অন্যান্য করের হার অনেক বেশি। বিভিন্ন সূত্রমতে, বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানিতে মোট শুল্ক-কর প্রায় ১৫.৫% থেকে ১৯% পর্যন্ত হতে পারে। এই উচ্চ শুল্কের কারণে আমদানিকারকরা বৈধ পথে স্বর্ণ আনতে আগ্রহ দেখান না। ফলে আমদানি খরচ বেড়ে যায় এবং স্থানীয় বাজারে দাম চড়া হয়। দেশে স্বর্ণের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, বৈধ পথে আমদানি তার তুলনায় অনেক কম। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, অনুমতি পেতে সময়ক্ষেপণ এবং উচ্চ শুল্ক-করের কারণে অনুমোদিত ডিলাররা স্বর্ণ আমদানি করতে আগ্রহী হন না। ফলে বাজারের বেশিরভাগ স্বর্ণ আসে অনানুষ্ঠানিক পথে (যেমন – চোরাচালান, ব্যাগেজ রুল)। এই অনানুষ্ঠানিক সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ সীমিত থাকে এবং ব্যবসায়ীরা দাম নির্ধারণে বেশি প্রভাব ফেলতে পারেন।

স্বর্ণের বর্তমান মূল্য ২০২৫ / আবারও কমল স্বর্ণের দাম

আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বনাম দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দাম

Caption: Gold price in local market in Bangladesh

স্বর্ণের দাম । দেশের বাজারে কমলো স্বর্ণের দাম ২০২৫

দেশের বাজারে সোনার নতুন মূল্য কাঠামো (২৯ অক্টোবর, ২০২৫ থেকে কার্যকর)

দেশের বাজারে সম্প্রতি স্বর্ণের দাম বড় অঙ্কে কমানো হয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) কর্তৃক নির্ধারিত নতুন মূল্য কাঠামোটি নিম্নরূপ:

ক্যারেটপ্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম (টাকায়)আগের দামের তুলনায় হ্রাস
২২ ক্যারেট১,৯৩,৮০৯ টাকা১০,৪৭৪ টাকা কমেছে
২১ ক্যারেট১,৮৫,০০৩ টাকা৯,৯৯৬ টাকা কমেছে
১৮ ক্যারেট১,৫৮,৫৭২ টাকা৮,৫৭৩ টাকা কমেছে
সনাতন পদ্ধতি১,৩১,৬২৮ টাকা৭,৩১৪ টাকা কমেছে

স্বর্ণের দাম কি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খুব বেশি?

হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম তুলনামূলকভাবে বেশ বেশি, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই এবং এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে এই পার্থক্য অনেক বেশি চোখে পড়ে।

এই দামের পার্থক্যের প্রধান কারণগুলো হলো:

১. শুল্ক ও করের বোঝা

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানিতে মোট শুল্ক-কর (Duty, VAT ইত্যাদি) অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা সরাসরি গ্রাহকের ক্রয়মূল্যের ওপর গিয়ে পড়ে।

২. ডলারের উচ্চ বিনিময় মূল্য

আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণ ডলারে কেনা হয়। বাংলাদেশে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার (ডলারের মূল্য) ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানির খরচ (টাকার অঙ্কে) অনেক বেড়ে যায়। এটি স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

৩. প্রতিবেশী দেশের সাথে তুলনামূলক পার্থক্য

বিভিন্ন সময়ের তথ্যানুসারে, দুবাই বা ভারতের মতো দেশগুলির তুলনায় বাংলাদেশে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দামের পার্থক্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।

তুলনার ক্ষেত্রদুবাই / ভারতবাংলাদেশ
মূল্য নির্ধারণআন্তর্জাতিক স্পট মূল্য এবং যৌক্তিক স্থানীয় শুল্কের ওপর ভিত্তি করে।আন্তর্জাতিক দাম + উচ্চ আমদানি শুল্ক + উচ্চ ডলার মূল্য + স্থানীয় অন্যান্য খরচ।
শুল্কের প্রভাবতুলনামূলকভাবে কম বা শুল্কমুক্ত (দুবাই)।মোট মূল্যের একটি বড় অংশ শুল্ক ও কর হিসেবে যুক্ত হয়।
সরবরাহ ব্যবস্থাঅনেক বেশি প্রাতিষ্ঠানিক এবং স্বচ্ছ।বৈধ আমদানি কম হওয়ায় অনানুষ্ঠানিক (চোরাচালান ও ব্যাগেজ) সরবরাহের ওপর নির্ভরতা বেশি।

৪. ভ্যাট এবং মজুরি (Making Charge)

বাংলাদেশে ক্রেতাকে ক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে ৫% ভ্যাট এবং ন্যূনতম ৬% মজুরি যুক্ত করতে হয়, যা চূড়ান্ত দামকে আরও বাড়িয়ে দেয়।সংক্ষেপে, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লে বা কমলে বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ে, কিন্তু উচ্চ আমদানি শুল্ক এবং ডলারের চড়া দাম—এই দুটি স্থানীয় নিয়ন্ত্রিত উপাদান বাংলাদেশে স্বর্ণকে আন্তর্জাতিক গড় দামের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল করে তুলেছে। স্বর্ণের দাম প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়, তবে এই তুলনামূলক চিত্রে দামের তুলনামূলক ব্যবধান (Price Gap) তুলে ধরা হয়েছে।

রুপার দামও কমল:

সোনার পাশাপাশি রুপার দামও কমানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়া নতুন দর অনুযায়ী,

ক্যারেটপ্রতি ভরি রুপার মূল্য
২২ ক্যারেট৪২৪৬/-
২১ ক্যারেট৪০৪৭/-
১৮ ক্যারেট৩৪৮৫/-
সনাতন পদ্ধতি২৫৬১/-

কেন এই পতন?

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে “তেজাবি সোনার” (পিওর গোল্ড) দাম কমার কারণে দেশের বাজারে সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে দরপতন অব্যাহত থাকায় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সোনার দাম সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছানোর পর এই নিম্নমুখী প্রবণতা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনে দেবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাজারের সাম্প্রতিক প্রবণতা অনুসারে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের স্বর্ণের দামের একটি তুলনামূলক চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো।

(তুলনা: ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি / ১১.৬৬৪ গ্রাম)

দেশের নামদামের সাম্প্রতিক প্রবণতা (বাংলাদেশি টাকায়)তুলনামূলক অবস্থানদাম বেশি হওয়ার কারণ
বাংলাদেশ৳ ১,৮৭,০০০ থেকে ৳ ১,৯৩,০০০+ (স্থানীয় বাজারের ঘোষণা অনুযায়ী)সবচেয়ে বেশিউচ্চ আমদানি শুল্ক, চড়া বিনিময় হারে ডলারের দাম বৃদ্ধি, ও সীমিত বৈধ সরবরাহ।
ভারত (কলকাতা/মুম্বাই)৳ ১,৪৭,০০০ থেকে ৳ ১,৭০,০০০+ (প্রায়)বাংলাদেশের তুলনায় কমবাংলাদেশে প্রতি ভরিতে প্রায় ৳৪০,০০০ থেকে ৳৮০,০০০ বা তারও বেশি পার্থক্য থাকতে পারে।
দুবাই (UAE)৳ ১,৩০,০০০ থেকে ৳ ১,৫০,০০০+ (প্রায়)তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কমদুবাইতে স্বর্ণের ওপর আমদানি শুল্ক নেই, এবং খুচরা ক্রয়ের ওপর ভ্যাট (VAT) সাধারণত কম বা ফেরতযোগ্য থাকে।