বিডিএস জরিপ ২০২৫ । এ সময় ভূমি মালিকের করণীয় কি জানেন?
বিডিএস (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে) ২০২৫ চলাকালীন ভূমি মালিকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে যা তাদের জমির সঠিক মালিকানা রেকর্ড করার জন্য করা উচিত। প্রথমে, জমির মালিকানার প্রমাণপত্র যেমন দলিল, নামজারি খতিয়ান, ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা ইত্যাদি প্রস্তুত রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমিনগণ যখন জরিপ করতে আসবেন, তখন তাদের জমির সঠিক সীমানা চিহ্নিত করতে সাহায্য করা এবং তাদের সামনে জমির মালিকানা ও দখলের প্রমাণপত্র উপস্থাপন করা উচিত। এছাড়াও, জরিপের পর খসড়া পর্চা (খানাপুরি) যাচাই করে কোন ভুল থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে আপত্তি জানাতে হবে– বিডিএস জরিপ ২০২৫
ভূমি জরিপ কি চলছে? সারা দেশে চলমান বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (বিডিএস) কার্যক্রমে ভূমি মালিকদের অসচেতনতা ও প্রস্তুতির অভাবে রেকর্ড ভুল হওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এতে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত মালিকের নাম বাদ পড়ে অন্যের নামে রেকর্ড সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জরিপ চলাকালীন সময়েই ভূমি মালিকদের কিছু করণীয় বিষয়ে সজাগ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর।
পরে সংশোধন করা যাবে না? জমি রেকর্ডে কোনো ভুল হলে তা পরে শুধরে নিতে হয়রানি ও সময়ের পাশাপাশি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই জরিপের আগে থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এই প্রেক্ষাপটে ভূমি মালিকদের জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো-প্রথমত জমির মালিকানার প্রমাণাদি দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। জরিপকারীদের সামনে যেন আপনি সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেন, সেজন্য দলিল, নামজারীকৃত খতিয়ান, সর্বশেষ ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা ইত্যাদি আগেভাগেই সংগ্রহ করে রাখতে হবে। কারণ, ইতোমধ্যে অনেক জেলায় বিডিএস জরিপ শুরু হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত জমির সীমানা নির্ধারণ এবং তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জমির আইল সোজা করে রাখা, সীমানা পিলার বসানো এবং একটি সঠিক নকশা প্রস্তুত রাখা জরুরি। জরিপকারীরা মাঠ পর্যায়ে জমির সীমানা সহজে চিহ্নিত করতে পারেন এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে মালিকেরই।
মাঠ পর্চায় কি কি তথ্য থাকে? তৃতীয়ত জরিপকারীদের পরিদর্শন শেষে মাঠ পর্যায়ের পর্চা বা খানপুরি গ্রহণ এবং যাচাই করতে হবে। এতে জমির দাগ নম্বর, খতিয়ান, মালিকের নাম, ঠিকানা ও দলিল নম্বর উল্লেখ থাকে। এটি প্রস্তুতের পর মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তাই সেটি গ্রহণের সময় সব তথ্য সতর্কভাবে যাচাই করা জরুরি। চতুর্থত সব তথ্য ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ত্রুটি থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আপত্তি জানাতে হবে। দাগ বিভাজন, নাম বা ঠিকানায় ভুল থাকলে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে সংশোধনের জন্য ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে রেকর্ড চূড়ান্ত প্রিন্টে চলে যাবে, যা পরে সংশোধনের জন্য আপনাকে আদালতের আশ্রয় নিতে হতে পারে। ভূমি রেকর্ড সংশোধন নিয়ে পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় না জড়াতে চাইলে এখন থেকেই সচেতন হওয়াই শ্রেয়। বিডিএস জরিপে অংশগ্রহণের সময় ভূমি মালিকদের যথাযথ প্রস্তুতি ও অংশগ্রহণই নিশ্চিত করবে সঠিক মালিকানা রেকর্ড।
বিডিএস জরিপ ২০২৫ । ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ঠিকানা
বিডিএস জরিপ (BDS Survey), যা বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ নামেও পরিচিত, ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি ডিজিটাল প্রক্রিয়া। এই জরিপ ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকীকরণ এবং নাগরিকদের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা ও খরচ কমাতে সহায়তা করবে। বিডিএস জরিপ মূলত ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি রেকর্ড তৈরি ও ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে ভূমির মালিকানা, সীমানা, এবং অন্যান্য বিবরণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হবে, যা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ করে তুলবে।
Caption: BDS Survey
ডিজিটাল ভূমি জরিপ ২০২৫ । জমির মালিকানার প্রমাণপত্র সংগ্রহ ও প্রস্তুত রাখতে হবে?
- জমির মালিকানার স্বপক্ষে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন – দলিল, নামজারি খতিয়ান, ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা, ইত্যাদি সংগ্রহ ও প্রস্তুত রাখতে হবে। জমির সীমানা চিহ্নিতকরণ।
- জমির সঠিক সীমানা চিহ্নিত করতে জরিপকারীদের সহায়তা করা এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে সহযোগিতা করা। খানাপুরি (পর্চা) যাচাই।
- জরিপকালে আমিনগণ যে খসড়া ভূমি রেকর্ড প্রস্তুত করবেন (খানাপুরি), তা যাচাই করা এবং কোন ভুল থাকলে তা চিহ্নিত করা। আপত্তি দাখিল।
- যদি খানাপুরিতে কোন ভুল থাকে, তবে ৩০ দিনের মধ্যে জরিপ কর্মকর্তার কাছে আপত্তি দাখিল করা। জমির দখল নিশ্চিত করা।
- যদি জমি অন্য কারো দখলে থাকে বা অন্য কেউ চাষাবাদ করে থাকে, তবে জরিপের আগে জমির দখল নিশ্চিত করা আবশ্যক। সকল তথ্য ও কাগজ পর্যালোচনা।
- জমির মালিকানা, সীমানা, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য যাচাই করার জন্য জরিপ দলের সাথে সহযোগিতা করা।
- উপরের বিষয়গুলো মনে রেখে বিডিএস জরিপে অংশগ্রহণ করলে ভূমি মালিকগণ তাদের জমির সঠিক মালিকানা রেকর্ড করতে পারবেন।
ডিজিটাল ভূমি জরিপ ভুল হলে করণীয় কি?
যদি ডিজিটাল ভূমি জরিপে কোনো ভুল ধরা পড়ে, তবে প্রথমে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে রেকর্ডের করণিক ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর, আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি (যেমন- আগের খতিয়ান, দলিল, ইত্যাদি) সংযুক্ত করে দাখিল করতে হবে। শুনানির মাধ্যমে ভুল সংশোধন করা হতে পারে, এবং প্রয়োজনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আপিল করা যেতে পারে। সংশোধনের জন্য প্রথমে, আপনার এলাকার ভূমি অফিসে (ইউনিয়ন ভূমি অফিস) গিয়ে রেকর্ডে হওয়া ভুলের জন্য একটি আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনের সাথে, ভুলের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি যেমন- পূর্বের খতিয়ান, দলিল, ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে।
শুনানি ও নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া: আবেদন করার পর, ভূমি অফিস সাধারণত একটি শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে | শুনানিতে, উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা হয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করা হয়। | যদি ভূমি অফিসের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে রেকর্ডে ভুল হয়েছে, তবে তারা তা সংশোধনের আদেশ দিতে পারে। |
৩. আপিলের সুযোগ: যদি ভূমি অফিস আপনার আবেদন নামঞ্জুর করে বা আপনি প্রদত্ত সমাধানে সন্তুষ্ট না হন, তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আপিল করার সুযোগ থাকে। | ৪. অন্যান্য পদক্ষেপ: ক্ষেত্রবিশেষে, দেওয়ানী আদালতে মামলা করারও প্রয়োজন হতে পারে, যদি বিষয়টি জটিল হয় বা ভূমি অফিসের মাধ্যমে সমাধান না হয়। | এছাড়া, জমি জরিপ ট্রাইব্যুনালেও আপনি অভিযোগ দায়ের করতে পারেন, যদি চূড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশের এক বছরের মধ্যে কোনো ভুল ধরা পড়ে। |
ভূমি জরিপ কখন হবে ২০২৫ । বিডিএস জরিপ কি বাতিল নাকি চলছে?