জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা-মাতার নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তন: কী কী নথি প্রয়োজন?
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যেখানে ব্যক্তির নামের পাশাপাশি পিতা ও মাতার নাম উল্লেখ থাকে। বিভিন্ন কারণে এই নামগুলোতে ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ হতে পারে, যা পরবর্তীতে সংশোধনের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে পিতা বা মাতার নামের ‘আমূল পরিবর্তন’ (সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন) একটি জটিল প্রক্রিয়া, যার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং ধাপ অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে।
পিতা-মাতার নাম আমূল পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় নথিপত্র
জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা-মাতার নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তন (আক্ষরিক বা বানান সংশোধন নয়, বরং পুরো নামটিই পরিবর্তন) করতে হলে আবেদনকারীকে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টগুলো আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে:
শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র:
আবেদনকারীর এসএসসি (SSC), এইচএসসি (HSC) বা সমমানের পরীক্ষার সনদপত্র/রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি। এই সনদে পিতা/মাতার নাম উল্লেখ থাকা আবশ্যক।
হলফনামা (Affidavit) ও দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন:
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কর্তৃক সম্পাদিত হলফনামার (এফিডেভিট) মূল কপি।
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের মূল কাটিং।
পিতা-মাতার এনআইডি/ডকুমেন্ট:
সংশ্লিষ্ট পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) সত্যায়িত ফটোকপি।
যদি পিতা-মাতা মৃত হন, সেক্ষেত্রে তাদের মৃত্যু সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।
পারিবারিক ডকুমেন্ট:
আবেদনকারীর অন্যান্য ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) সত্যায়িত ফটোকপি।
পারিবারিক ওয়ারিশান সনদ (যাতে সকল ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ থাকে)।
পিতা-মাতার নাম সংশোধনের কারণ উল্লেখ করে আবেদনকারীর লিখিত বক্তব্য।
অন্যান্য সহায়ক ডকুমেন্ট:
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (বাংলা ও ইংরেজি)।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/কাউন্সিলর কর্তৃক একই ব্যক্তি মর্মে প্রত্যয়নপত্র।
চাকুরিজীবীর ক্ষেত্রে সার্ভিস বুক/এমপিও (Monthly Payment Order) কপি (যদি থাকে)।
✅ প্রক্রিয়া ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপসমূহ
নাম সংশোধনের প্রক্রিয়াটি সাধারণত অনলাইনে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে (services.nidw.gov.bd) নির্ধারিত সংশোধন ফরম-২ এর মাধ্যমে আবেদন করার মাধ্যমে শুরু হয়।
অনলাইন আবেদন: প্রথমে নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে নিবন্ধন করে লগইন করতে হবে এবং সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
ডকুমেন্ট আপলোড ও জমা: প্রয়োজনীয় সকল নথিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি স্ক্যান করে অনলাইনে আপলোড করতে হবে এবং পরে সেগুলোর মূল কপি ও ফটোকপি সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
শুনানি ও তদন্ত: আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত দলিলাদি যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আবেদনকারীর ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হতে পারে। এছাড়াও, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত করতে পারেন।
ফি জমা: নির্ধারিত ফি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে বা মোবাইল ব্যাংকিং (রকেট, বিকাশ, ট্রাস্ট ব্যাংক) ব্যবহার করে জমা দিতে হবে।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, সকল দলিলাদি সঠিক থাকলে এবং শুনানিতে সন্তুষ্ট হলে সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
ডিসক্লেইমার: প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই আবেদন করার আগে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলা নির্বাচন অফিসের সাথে যোগাযোগ করে সর্বশেষ নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া আবশ্যক।

নির্বাচন কমিশনে যাওয়া ছাড়া কি এনআইডি সংশোধন করা যায়?
হ্যাঁ, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) সংশোধনের প্রাথমিক কাজগুলো নির্বাচন কমিশনে (EC) সরাসরি না গিয়েও করা সম্ভব। বর্তমান নিয়মে, সংশোধনের প্রক্রিয়াটি মূলত অনলাইনে শুরু হয়।
✨ নির্বাচন কমিশনে না গিয়ে এনআইডি সংশোধনের উপায়
নির্বাচন কমিশনে সরাসরি না গিয়ে আপনি নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারবেন:
অনলাইনে আবেদন দাখিল:
আপনি নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল NID পোর্টালে (services.nidw.gov.bd) লগইন করে বা নতুন নিবন্ধন করে আপনার NID সংশোধনের জন্য আবেদন দাখিল করতে পারেন।
আবেদনের সময়, সংশোধনের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো স্ক্যান করে আপলোড করতে পারবেন।
এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আপনার একটি সক্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ এবং স্ক্যান করা ডকুমেন্ট প্রয়োজন।
সংশোধন ফি জমা দেওয়া:
NID সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি আপনি ব্যাংক চালান বা মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন: রকেট, বিকাশ) এর মাধ্যমে অনলাইনে বা যেকোনো স্থান থেকে জমা দিতে পারবেন।
আবেদন করার পর সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালানের নম্বর (যদি প্রযোজ্য হয়) বা পেমেন্টের অপশন চলে আসবে।
⚠️ তবে কখন আপনাকে নির্বাচন অফিসে যেতে হতে পারে?
যদিও অধিকাংশ কাজ অনলাইনে করা যায়, কিছু ক্ষেত্রে আপনার উপজেলা বা জেলা নির্বাচন অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে:
সাক্ষাৎকার/শুনানি (Hearing): যদি আপনার সংশোধনের ধরনটি গুরুত্বপূর্ণ বা জটিল হয় (যেমন: পিতা-মাতার নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তন, জন্ম তারিখ বা নাম আমূল পরিবর্তন), তাহলে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশন আপনাকে সশরীরে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকতে পারে।
মূল ডকুমেন্ট যাচাই: কিছু ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষ আপনার আপলোড করা নথিপত্রের মূল কপি সরাসরি দেখার জন্য আপনাকে অফিসে যেতে বলতে পারে।
নতুন এনআইডি সংগ্রহ: সংশোধন অনুমোদিত হওয়ার পর, সংশোধিত নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রটি সংগ্রহ করার জন্য অনেক সময় সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে যেতে হয় (যদিও কিছু ক্ষেত্রে এটি ডাকযোগে পাঠানোর ব্যবস্থা থাকতে পারে)।
অফলাইন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ছবি: যদি আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ছবি নিয়ে কোনো জটিলতা থাকে এবং সেটির আপডেটের প্রয়োজন হয়।
সারসংক্ষেপ: আপনি NID সংশোধনের আবেদন, ডকুমেন্ট আপলোড ও ফি জমা দেওয়ার মতো প্রাথমিক কাজগুলো অনলাইনে সম্পন্ন করতে পারবেন। তবে, চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই, শুনানি এবং নতুন কার্ড বিতরণের জন্য আপনাকে নির্বাচন অফিসে যেতে হতে পারে।

