সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ২০২৫ । সচিবদের সঙ্গে পে কমিশনের বৈঠক, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম - Technical Alamin
সরকারি আদেশ ও তথ্য

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ২০২৫ । সচিবদের সঙ্গে পে কমিশনের বৈঠক, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে সোমবার (২৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসে জাতীয় বেতন কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে এই বৈঠককে ফলপ্রসূ বলে জানানো হলেও, সরকারি কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ম পে স্কেলের গেজেট প্রকাশ ও বাস্তবায়নের জোর দাবি জানানো হয়েছে।

জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বিদ্যমান বেতন কাঠামো পর্যালোচনা, নতুন সুপারিশ প্রণয়নের কাজকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জগুলো সচিবদের কাছ থেকে সরাসরি শোনা ছিল মূল এজেন্ডা। পে কমিশন ইতিমধ্যে তাদের সুপারিশ তৈরির প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ করেছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার আশা ব্যক্ত করেছে।


কর্মচারীদের ‘এক দফা, এক দাবি’

অন্যদিকে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নবম পে স্কেল নিয়ে আগ্রহ ও অস্থিরতা বেড়েছে। বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ সহ ১২টিরও বেশি সংগঠন তাদের দাবিতে সোচ্চার। তাদের মূল দাবিগুলো হলো:

  • এক দফা, এক দাবি: ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নবম পে স্কেলের প্রজ্ঞাপন (গেজেট) বাস্তবায়ন করা।

  • গ্রেড কমানো: বর্তমানে প্রচলিত ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে মোট ১২টি গ্রেডে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা।

  • বেতন অনুপাত: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ নির্ধারণ করা, যার লক্ষ্য হলো কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য হ্রাস করা।

কর্মচারী নেতারা কমিশনকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ দাখিলের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন। দাবি পূরণ না হলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা। এর অংশ হিসেবে আগামী ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।


অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সরকারের অবস্থান

অর্থ উপদেষ্টার মতে, গত আট বছরে বেতন খাতে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের জীবনমানে প্রভাব পড়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাজেটসংশ্লিষ্ট বাস্তবতা এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হবে। কমিশন ইতোমধ্যে সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে অনলাইনে মতামত সংগ্রহ করেছে এবং সেই তথ্যগুলোও পর্যালোচনার মধ্যে আছে।

সোমবারের বৈঠক শেষে কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান সাংবাদিকদের জানান, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং অনুপস্থিত সচিবদের সঙ্গে পরবর্তীতে আবার আলোচনা করা হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

সরকারি কর্মচারীদের চাপ এবং কমিশনের দ্রুত সুপারিশ তৈরির প্রক্রিয়ার দিকে এখন সকলের নজর। তাদের এই দাবি এবং আল্টিমেটাম নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের কাজকে কতটা গতি দেবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

সর্বনিম্ন বেতন কত চায় সরকারি কর্মচারীগণ?

সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলো ৯ম পে স্কেলে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা (পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা) নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।

বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন, যেমন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশন, পে কমিশনের কাছে এই প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

এই দাবির মূল কারণগুলো হলো:

  • জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি: সর্বশেষ ২০১৫ সালে পে স্কেল ঘোষণার পর থেকে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মচারীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

  • বেতন বৈষম্য হ্রাস: তারা সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত (Ratio) বর্তমানে প্রায় ১:১০ থেকে কমিয়ে ১:৪ করার দাবি জানিয়েছেন।

তবে এটি দাবি বা প্রস্তাবনা, যা চূড়ান্তভাবে জাতীয় বেতন কমিশন পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ আকারে জমা দেবে। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত বেতন কাঠামো নির্ধারিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *