আয়কর অডিট নথি তালিকা ২০২৫ । আপনার টিআইএন নম্বর অডিট আপত্তির মধ্যে সার্চ করবেন?
ব্যক্তিগত আয়কর অডিট হতে পারে। বাংলাদেশ সরকার আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী কিছু নিয়মকানুন নির্ধারণ করেছে, যার ভিত্তিতে করদাতাদের রিটার্ন অডিট করা হয়। এটি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, বরং কর ব্যবস্থাপনার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া– আয়কর অডিট নথি তালিকা ২০২৫
আয়কর ফাইলে আপত্তি আসলে কি চিঠি পাঠায়? হ্যাঁ। সাধারণত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কিছু ঝুঁকি বা অনিয়মের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট কিছু আয়কর রিটার্ন অডিটের জন্য বাছাই করে। অডিটের উদ্দেশ্য হলো নিশ্চিত করা যে, করদাতা তার আয়ের হিসাব, সম্পত্তি ও দায়ের বিবরণ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সঠিকভাবে দিয়েছেন এবং প্রযোজ্য কর সঠিক পরিমাণে পরিশোধ করেছেন। আপনার আয়কর ফাইল যদি অডিটে আসে, তাহলে আপনাকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হতে পারে। অডিট নোটিশ প্রথমে আপনি কর অফিস থেকে একটি নোটিশ পাবেন, যেখানে অডিটের কারণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।
নোটিশ প্রাপ্তির পর কর অফিসে যোগাযোগ করতে হবে? নোটিশ পাওয়ার পর আপনাকে আপনার সকল আর্থিক নথি, যেমন— আয়ের উৎস, বিনিয়োগ, ব্যাংক হিসাবের বিবরণী এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক প্রমাণপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রয়োজনে আপনি একজন অভিজ্ঞ আয়কর পেশাজীবী বা আইনজীবীর সাহায্য নিতে পারেন। তিনি আপনাকে অডিট প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবেন। আপনাকে আয়কর কর্মকর্তার কাছে আপনার সকল তথ্য সঠিকভাবে ও স্বচ্ছতার সাথে উপস্থাপন করতে হবে। যদি অডিট শেষে কোনো গরমিল পাওয়া যায়, তাহলে কর কর্তৃপক্ষ আপনাকে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করার জন্য বলতে পারে। কিন্তু যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে অডিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন বলে বিবেচিত হবে।
আয়কর নথির অডিট আপত্তি আসলে কি জরিমানা দিতে হয়? আয়কর অডিট আপত্তির ফলে জরিমানা হতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের আয়কর আইন, ২০২৩-এর অধীনে বিভিন্ন ধরনের জরিমানার বিধান রয়েছে। অডিট চলাকালীন বা অডিটের পরে যদি কোনো ভুল বা অনিয়ম ধরা পড়ে, তবে উপ-কর কমিশনার (Deputy Commissioner of Taxes) জরিমানা আরোপ করতে পারেন। যদি কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% হারে বা সর্বনিম্ন ১,০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। যদি এই ব্যর্থতা চলতে থাকে, তবে প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ হতে পারে। যদি অডিট রিপোর্টে দেখা যায় যে, করদাতা তার আয়, ব্যয়, বা সম্পদের বিষয়ে সঠিক তথ্য দেননি বা হিসাবে গরমিল আছে, তবে উপ-কর কমিশনার তাকে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারেন।
কর বর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথির অডিট আপত্তি ২০২৫ / প্রতি বছরই এনবিআর অডিট আপত্তির নথি পেশ করেন এবং অডিট আপত্তি অনুসারে প্রতিটি টিন নম্বরের বিপরীতে চিঠি দেওয়া হয়।
যদি করদাতা এটি করতে ব্যর্থ হন বা তার ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী কর নির্ধারণের পাশাপাশি জরিমানা আরোপ করা হতে পারে। আয়কর আইনের অধীনে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থতা, তথ্য দিতে ব্যর্থতা, বা অন্য কোনো নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা হতে পারে। যদি আপনি অডিটের ফলাফলে বা জরিমানার বিষয়ে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে আপিল করারও সুযোগ আছে।
Caption: 2023-2024 Audit List Bangladesh pdf File
ব্যক্তি আয়কর নথির অডিট আপত্তি ২০২৫ । কি কি কারণে আয়কর নথির অডিট আপত্তি হতে পারে?
- আয়ের সাথে ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতা: যদি কোনো ব্যক্তির ঘোষিত আয়ের তুলনায় তার জীবনযাত্রার ব্যয় বা অর্জিত সম্পদের পরিমাণ বেশি মনে হয়, তাহলে অডিট আপত্তি হতে পারে। যেমন, কম আয় দেখানো সত্ত্বেও বিলাসবহুল গাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা।
- গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের গরমিল: আয়ের উৎস, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ, জমি বা ফ্ল্যাটের কেনা-বেচার মতো গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক তথ্যে গরমিল থাকলে অডিট হতে পারে। বিশেষ করে, তৃতীয় পক্ষের (যেমন: ব্যাংক, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস) কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে যদি আপনার দাখিল করা রিটার্নের তথ্যের মিল না থাকে।
- হঠাৎ আয়ের পরিবর্তন: যদি কোনো করদাতার আয়ে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা হ্রাস দেখা যায়, যা তার পেশা বা ব্যবসার স্বাভাবিক গতির সঙ্গে মেলে না, তাহলেও অডিট আপত্তি আসতে পারে।
- সম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে ত্রুটি: রিটার্নের সঙ্গে দাখিলকৃত সম্পদের বিবরণীতে যদি কোনো সম্পদ বা দায় গোপন করা হয়, বা ভুলভাবে দেখানো হয়, তাহলে অডিট হতে পারে। প্রথমবার রিটার্ন দাখিলকারীরা সব সম্পদ না দেখালে পরে তা ধরা পড়লে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
- যথাযথ নথি ও প্রমাণপত্র দাখিল না করা: আয়ের উৎস, বিনিয়োগ, জীবনযাত্রার ব্যয়, বা অন্য কোনো খরচ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা প্রমাণপত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হলে বা ভুল তথ্য দিলে অডিট আপত্তি আসতে পারে।
- যান্ত্রিক বা দৈবচয়ন পদ্ধতি (Random Selection): অনেক সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কম্পিউটারাইজড বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দৈবচয়ন ভিত্তিতে কিছু রিটার্ন অডিটের জন্য নির্বাচন করে। এক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও আপনার ফাইলটি অডিটের জন্য বাছাই হতে পারে।
- আইনের নিয়ম না মানা: আয়কর আইন, ২০২৩-এর অধীনে বিভিন্ন নিয়ম ও শর্ত আছে, যেমন— উৎসে কর কর্তন, নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় ঘোষণা ইত্যাদি। এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ না করলে অডিট হতে পারে। যদি আপনার রিটার্ন অডিটের জন্য বাছাই করা হয়, তবে উপরের কোনো একটি বা একাধিক কারণে আপত্তি আসতে পারে। তাই রিটার্ন দাখিল করার সময় সব তথ্য সঠিকভাবে ও স্বচ্ছভাবে দেওয়া জরুরি।
আয়কর অডিট আপত্তি মওকুফের আবেদন কিভাবে লিখতে হয়?
আয়কর অডিট আপত্তির কারণে আরোপিত জরিমানা মওকুফের আবেদন সরাসরি উপ-কর কমিশনার (Deputy Commissioner of Taxes) বরাবর করতে হয়। এটি লেখার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করা প্রয়োজন। আপনার আবেদনটি স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং যুক্তিযুক্ত হওয়া উচিত।
আবেদন লেখার জন্য একটি সাধারণ কাঠামো নিচে দেওয়া হলো:
তারিখ: (আবেদন দাখিলের তারিখ)
বরাবর, উপ-কর কমিশনার (আপনার সার্কেল ও কর অঞ্চলের নাম) (ঠিকানা)
বিষয়: আয়কর অডিট আপত্তির কারণে আরোপিত জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি (আপনার পুরো নাম), পিতা (আপনার পিতার নাম), সাং (আপনার বর্তমান ঠিকানা)। আমার টিআইএন (TIN) নম্বর হলো: (আপনার টিআইএন নম্বর)। আমি (অর্থবছর) এর আয়কর রিটার্ন (তারিখ) তারিখে দাখিল করেছিলাম।
(আপনার অডিট নোটিশ নম্বর) নম্বর নোটিশের মাধ্যমে আমার আয়কর নথি অডিট করা হয় এবং এর ফলে (জরিমানার কারণ) কারণে আমার উপর (জরিমানার পরিমাণ) টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।
মহোদয়, আমি বিনীতভাবে জানাচ্ছি যে, আমার উপর আরোপিত এই জরিমানা মওকুফের আবেদন জানাচ্ছি। এর কারণ হলো (জরিমানা মওকুফের কারণ উল্লেখ করুন)। যেমন:
- যদি কোনো মানবিক কারণে বা অনিবার্য পরিস্থিতিতে আপনি সময়মতো ফাইল জমা দিতে ব্যর্থ হন।
- যদি আপনি অনিচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলবশত কোনো তথ্য বাদ দিয়ে থাকেন।
- যদি আপনার আর্থিক অবস্থা বর্তমানে খারাপ থাকে এবং জরিমানা পরিশোধ করা আপনার জন্য কষ্টকর হয়।
(এখানে আপনি আপনার কারণটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করুন। যেমন, ‘আমার পরিবারের একজন সদস্য গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, যার কারণে আমি সময়মতো সব নথি প্রস্তুত করতে পারিনি’ অথবা ‘আমার বর্তমান আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় এই বড় অঙ্কের জরিমানা পরিশোধ করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।’)
আমি একজন নিয়মিত ও সচেতন করদাতা এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুল এড়িয়ে চলার ব্যাপারে আমি সচেষ্ট থাকব।
অতএব, বিনীত নিবেদন এই যে, আমার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমার উপর আরোপিত জরিমানা মওকুফ করে আমাকে বাধিত করবেন।
ধন্যবাদান্তে,
বিনীত নিবেদক, (আপনার নাম) (আপনার টিআইএন নম্বর) (আপনার মোবাইল নম্বর) (আপনার ই-মেইল ঠিকানা)
আবেদনটি অবশ্যই স্পষ্ট এবং মার্জিত ভাষায় লিখতে হবে। | জরিমানা মওকুফের পেছনে আপনার যুক্তি বা কারণগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরুন। | যদি আপনার কাছে কোনো সহায়ক নথি (যেমন: ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, চিকিৎসার বিল, আর্থিক অবস্থার প্রমাণ) থাকে, তাহলে সেগুলো আবেদনের সাথে সংযুক্ত করুন। |
আবেদনটি হাতে লিখে বা কম্পিউটার টাইপ করে, উভয়ভাবেই দাখিল করা যেতে পারে। | আবেদনের একটি অনুলিপি আপনার নিজের কাছে রাখুন। | উপ-কর কমিশনারের সন্তুষ্টির ওপরই আপনার আবেদন গৃহীত হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে। |