সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-স্কেল ২০২৫ । সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ করার দাবি, বেসিক শুরু হোক ৩০ হাজার থেকে?
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাবিত নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি অনানুষ্ঠানিক খসড়া ও দাবির তালিকা অনুযায়ী, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ করার জোরালো দাবি উঠেছে। এই প্রস্তাবে সর্বনিম্ন বেসিক ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করার এবং সর্বোচ্চ গ্রেডে তা ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে-সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-স্কেল ২০২৫
প্রস্তাবিত খসড়ায় গ্রেড ও বেসিক
অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রচারিত এই খসড়া অনুযায়ী, ২০টি গ্রেডের জন্য একটি নতুন পে-কোড এবং বেসিক বেতনের কাঠামো উপস্থাপন করা হয়েছে:
দ্রষ্টব্য: এই তালিকায় ১-১৪ গ্রেডের বেসিকের ক্রম এবং গ্রেড ২০-এর বেসিকের মধ্যে কিছুটা অসঙ্গতি (যেমন গ্রেড ১২-এর চেয়ে ১৩-এর বেসিক বেশি দেখানো হয়েছে) লক্ষ করা গেছে, যা সম্ভবত এটি একটি প্রাথমিক ও সংশোধিতব্য প্রস্তাবনার অংশ।
মূল দাবি: অনুপাত ১:৪ এবং অন্যান্য ভাতা
এই অনানুষ্ঠানিক পে-স্কেল প্রস্তাবনার মূল দাবি হলো— রাষ্ট্রায়ত্ত বেতনের ভোগী সকল কর্মচারীর জন্য দলমত নির্বিশেষে ১৭ তারিখ (সম্ভবত কোনও বিশেষ তারিখ নির্দেশিত) থেকে কার্যকর করে, সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা থেকে বেসিক শুরু করতে হবে, এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ (অর্থাৎ ৩০,০০০:১,২০,০০০) করতে হবে।
এই প্রস্তাবে অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
- বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট: ৫%
- বাড়ি ভাড়া ভাতা: বেসিকের ৪০%
- চিকিৎসা ভাতা: ২০০০ টাকা
- যাতায়াত ভাতা: ২০০০ টাকা
- টিফিন/প্রাতরাশ ভাতা (নতুন): ২০০০ টাকা
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের তাগিদ
প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, যদি সর্বনিম্ন বেসিক ১,৫০০ টাকাও বাড়ে, তবে কর্মচারীদের বেতন আরও বাড়বে এবং বর্তমানে যে ২২/২৩ হাজার টাকায় সংসার চালানো কঠিন হচ্ছে, তা থেকে মুক্তি মিলবে। জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে এবং সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এই নতুন বেতন কাঠামো দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, এটি জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫-এর চূড়ান্ত গেজেট বা আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা নয়, বরং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি খসড়া, যা মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের দাবি ও প্রত্যাশাকে তুলে ধরে। সরকার এখন পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা না করে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দেওয়ায়, এই দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আসতে পারে।

২০২৬ সালের শুরুতেই নতুন পে স্কেল আসবে?
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি সুসংবাদ। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা না করে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তাদের মেয়াদের মধ্যেই নতুন বেতন কাঠামো, অর্থাৎ নবম জাতীয় বেতন স্কেল, গেজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে যেতে চায়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট হয়েছে। ২০২৬ সালের শুরুতেই কার্যকরের সম্ভাবনা-অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নতুন এই পে-স্কেল ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকেই কার্যকর হতে পারে। এর জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। তিনি জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই এই বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেছেন, “সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গেজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে না।”
বেতন কমিশন গঠন ও গ্রেড কমানোর আলোচনা ভন্ডুল? নবম জাতীয় বেতন স্কেল নির্ধারণের লক্ষ্যে গত ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’ গঠন করা হয়েছে। কমিশন তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং বেতন কাঠামোর বিন্যাস নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হলো— বর্তমানে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে ১৫টি বা ১২টি করা হতে পারে।সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত-যদিও নতুন পে-স্কেলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন কত হবে বা বিদ্যমান কাঠামোর তুলনায় গড়ে কত হারে বেতন বাড়ানো হবে, সে বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি, তবে কমিশনের এক সদস্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আভাস দিয়েছেন। তিনি জানান, বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত রয়েছে ১০:১। নতুন কাঠামোতেও এই অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে বজায় থাকবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এই ধরনের অনুপাতই প্রচলিত। সরকারের এই দ্রুত পদক্ষেপের ফলে লাখ লাখ সরকারি কর্মচারী নতুন বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন নিয়ে যে অপেক্ষায় ছিলেন, তার অবসান হতে চলেছে। নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

