পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে বিদেশে বসে সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয় এবং মামলা পরিচালনা করা যায় আম-মোক্তার নিয়োগের মাধ্যমেই-Power of Attorney দলিল করার নিয়ম
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কি? পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন ২০১২ এর ধারা২ অনুযায়ী পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র অর্থ এমন কোনো দলিল যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পক্ষে উক্ত দলিলে বর্ণিত কার্য সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা অর্পণ করেন। বাংলায় পাওয়ার অব অ্যাটর্নিকে বলা হয় “মোক্তারনামা” এর শাব্দিক অর্থ “প্রতিনিধি”। তবে “মোক্তারনামা” শব্দের অভিধানিক অর্থ হচ্ছে, “মোক্তার নিয়োগপত্র” বা প্রতিনিধি নিয়োগপত্র। মোক্তারনামা দুই প্রকারের হয়। (১) আম-মোক্তারনামা, (২) খাস-মোক্তারনামা।
কেন প্রবাসে বসে জমি কেনা যায় না?- বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও পরিবারকে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী করার আশায় বাংলাদেশীরা প্রবাসে পাড়ি জমায় কিন্তু এত ভালকিছু পাবার পরেও প্রবাসীদের মন পড়ে থাকে নিজের দেশের উপর। আর তাই কিছু টাকা আয় করতে পারলে চিন্তা করে দেশে এক টুকরো জমি কেনার। কিন্তু বিদেশে থেকে জমি কেনার কোন উপায় এখন আর নেই। ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যে কোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতাকেও দলিল করার সময় উপস্থিত থাকতে হবে– তাহলে কি কোন উপায় নেই? হ্যাঁ আছে। বিদেশে বসে কিংবা অপ্রাপ্ত-বয়ষ্ক ছেলে মেয়ের নামে জমি কেনা এখন আর সম্ভব হয় না।
প্রবাসে থেকে জমি ক্রয় করার নিয়ম- বিদেশ থেকে যে কেউ তার দেশে রেখে যাওয়া যেকোনো সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারবেন। এই বিক্রয় করতে হলে তাকে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে পাওয়ার দিতে হবে। শুধু জমিজমা-সংক্রান্ত নয়, যেকোনো কাজ আপনার অনুপস্থিতিতে সম্পাদনের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন। যেমন-দেশে যদি তার জমি বিক্রয় করার প্রয়োজন হয় তখন জায়গা জমি বিক্রি, ব্যাংক থেকে লোন নেবার বিপরীতে স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক, জায়গা জমি দেখাশুনা, তত্ত্বাবধায়ন করার জন্য কাউকে দায়িত্ব, বিদেশে অবস্থানকালে তার যদি কোন মামলা পরিচালনার প্রয়োজন হয় ইত্যাদি কারণে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করা যায় এবং এক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
আপনি কোন অংশ বিক্রি বা ক্রয় করতে চান? অনেকেরই প্রবাসে থাকা কালীন দেশের জমি বিক্রয়ের প্রয়োজন হয়। আবার দেখা যায় এজমালি সম্পত্তি কোন অংশীদার প্রবাসে থাকায় জমি বিক্রয়ে সমস্যা হচ্ছে। এসব সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়। আইন অনুযায়ী আপনি প্রবাসে থেকেই দেশের সম্পত্তি বিক্রয়ের করতে পারবেন। এ জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল- একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে জমি বিক্রয়ের পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলিল তৈরী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাওয়ার দাতার নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত বিবরন, পাওয়ার গ্রহীতার নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত বিবরন, জমির পরিমাণ ও অবস্থানসহ বিস্তারিত বিবরন অর্থাৎ এই তিনটি বিষয় প্রয়োজন পড়বে।
যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলিল করতে হবে / ভয় নেই যে কোন সময় আম-মোক্তার নিয়োগ বাতিল করা যায়
নামজারি বা খারিজ করা যায়? পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন-২০১২ এর ২(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অর্থ এমন কোনো দলিল- যাহার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তাহার পক্ষে ওই দলিলে বর্ণিত কার্যসম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করেন’। এই দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না। তাই দলিল গ্রহিতা তার নিজ নামে সম্পত্তি নামজারি বা খারিজ করতে পারবেন না। অর্থাৎ এই দলিলমূলে কেউ সম্পত্তির মালিকানা দাবী করতে পারেন না, দলিল গ্রহিতা কেবল দাতার পক্ষে দলিলে উল্লিখিত কার্য সম্পাদন করতে পারেন। অনেকেই এই দলিলকে “আমমোক্তারনামা দলিল” বলে থাকেন। কিন্তু আইন ও বিধিমালার কোথাও “আমমোক্তারনামা” শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। তাই বাংলায় “পাওয়ার অব অ্যাটর্নি” কিংবা ইংরেজিতে “Power of Attorney” লেখাই যুক্তিযুক্ত।
প্রবাসীর ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া । পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলে কি প্রবাসীর স্বাক্ষর লাগবে না? লাগবে।
- পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলিল তৈরী হলে ডাকযোগে দলিল ও পাওয়ার গ্রহীতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও NID এর কপি পাওয়ার দাতার প্রবাসী ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।
- ডাক প্রাপ্তির পর পাওয়ার দাতাকে তার নিজের পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি ছবি ও NID এর কপি সহ প্রেরিত দলিল, গ্রহীতার ছবি ও NID এর কপি নিয়ে অবস্থানরত দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে যেতে হবে।দূতাবাসে গিয়ে পাওয়ার দাতা একজন কাউন্সিলরের সামনে দলিলে স্বাক্ষর করবেন।
- উক্ত কাউন্সিলর ও দলিলে স্বাক্ষর করবেন। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে পাওয়ার দাতা দলিলটি ডাকযোগে দেশে প্রেরণ করবেন।
- পাওয়ার গ্রহীতা ডাক হতে দলিলটি গ্রহণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উক্ত দলিলটি পরীক্ষা করে সত্যায়িত করে দিবেন।
- পাওয়ার গ্রহীতাকে দলিলটি নিয়ে ডি.সি. অফিসের রাজস্ব কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখানে দলিলটিতে আঠা যুক্ত প্রয়োজনীয় স্টম্প লাগানো হবে। এবং একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করা হবে।
- পাওয়ার গ্রহীতা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমিটি পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলিলের শর্তানুযায়ী হস্তান্তর করতে পারবে।
- পাওয়ার অব এ্যার্টনীর শর্ত অনুসারে পাওয়ার গ্রহীতা কতৃক সকল ধরনের হস্তান্তর এমন ভাবে কার্যকর হবে যেন হস্তান্তরটি পাওয়ার দাতা কর্তৃক সম্পন্ন হয়েছে।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়? হ্যাঁ। আম-মোক্তার নামার মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং খাস মোক্তারনামার মাধ্যমে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অবশ্যই লিখিত হতে হবে যেহেতু এটি একটি আইনগত দলিল। বিদেশে থাকাবস্থায় কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইলে প্রথমেই তাকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সর্ম্পকে জানতে হবে। এই ক্ষেত্রে এমন কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে এটি করাতে হবে যিনি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পর্কে ভাল জানেন বা এমন কাউকে দিয়ে সঠিকভাবে লিখে দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যায়ন করে পাঠাতে হবে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে ইচ্ছুক প্রবাসী যে দেশে অবস্থান করবেন, সেই দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কনসুলারের সম্মুখে দাতা স্বাক্ষর করবেন এবং উক্ত কনসুলার কর্তৃক তা সত্যায়িত হবার পর পাওয়ারদাতা পাওয়ারটি গ্রহীতা বা আম-মোক্তার বরাবরে পাঠিয়ে দিবেন। উক্ত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পাওয়ার পর তা বাংলাদেশের ফরেন মিনিস্ট্রির (পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়) সহকারী সচিব, কনসুলার কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে। পরবর্তীতে তা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিদেশে সম্পাদিত আম-মোক্তারনামা দলিলে প্রদত্ত বর্নিত সম্পত্তিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত আছে কিনা তার তথ্যসহ সকল দাগের তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি প্রেরণ করবেন এবং আরেকটি চিঠি প্রেরণ করবেন সহকারী সচিব (কনস্যুলার) পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বরাবর।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রবাসী দলিল করতে কেমন খরচ হয়?
সকল তথ্যসমগ্র জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে আসার পর ২,০০০/- টাকার চালান প্রদানের পর নির্দিষ্ট একটি সময়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ইহাতে ৫০০ টাকার এবং এর অপর পাতায় ৫০০ টাকার দুটি স্ট্যাম্প লাগাবে। তখন অত্র পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল নম্বর এবং এই নম্বর দিয়েই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সঠিকভাবে হয়েছে কিনা যাচাই বাছাই করা থাকে। রেজিস্ট্রেশন ফিঃ ১০০ টাকা। স্ট্যাম্প শুল্কঃ ১০০০ টাকা। ই ফিঃ ১০০ টাকা। ৪) এন ফিঃ (i) বাংলায় প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা। (ii) ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা। এনএন ফি (নকলনবিশগনের পারিশ্রমিক) (i) বাংলায় প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা। (ii) ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ৩৬ টাকা। ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে হলফনামা প্রিন্ট করে দলিলের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। ফিস পরিশোধ পদ্ধতিঃদলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য যাবতীয় ফিসাদি নগদে অফিসে জমা প্রদান করতে হবে।
Power of Attorney দলিলের খরচ 2023 । পাওয়ার অব এটর্নি দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করা যায়?
One comment