বেসরকারি পেনশন মূলত সাধারণ জনগনের জন্য-যারা সরকারি কোন সুবিধা ভোগ করছেন তারা অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন না – সার্বজনীন পেনশন ২০২৩
ঠিক কাদের জন্য এই স্কিম? জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে , দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সুবিধা দিতে এই পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে, গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দেবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল শ্রেণী পেশার বাংলাদেশি নাগরিক এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অংশ হতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক। তবে ব্যতিক্রম আছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা চাইলে পাসপোর্ট দিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তার কপি জমা দিতে হবে।
আপনার কত বছর জমা দিতে হবে?– আপনার চলমান বয়সের হতে ৬০ বছর হতে যে সময় লাগে ঐ সময় পর্যন্ত আপনাকে টাকা জমা দিতে হবে। অর্থাৎ ধরি আপনার বয়স ৩৫ বছর তাহলে আপনাকে ২৫ বছর কিস্তি বা চাঁদা জমা দিতে হবে। আপনি প্রতি বছর বা মাসে মাসে টাকা জমা দিয়ে নিশ্চিত জীবন যাপন করতে পারেন। আপনি মারা গেলে আপনার পরিবারও নিশ্চিন্ত থাকবে।
বয়স সর্বনিম্ন কত পূর্ণ হতে হবে? জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরিয়া ১৮ (আঠারো) বৎসর তদূর্ধ্ব বয়স হইতে ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসর বয়সি সকল বাংলাদেশি নাগরিক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রণ করিতে পারিবে। তবে শর্ত থাকে যে, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসর উর্ধ্ব বয়সের নাগরিকগণও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন এবং সেইক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ হইতে নিরবচ্ছিন্ন ১০ (দশ) বৎসর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হইবেন সেই বয়স হইতে আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হইবেন।
সার্বজনীন পেনশন ২০২৩ । সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ । সর্বজনীন পেনশন সুবিধা
যাদের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে তারাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তিনি পেনশন পাবেন টানা ১০ বছর চাঁদা দিয়ে যাওয়ার পর।
সর্বজনীন পেনশন স্কীমে আবেদনের নিয়ম । যেভাবে আপনি পেনশনের জন্য আবেদন করবেন
- প্রথমে ‘ইউপেনশন‘ ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে। এরপর ‘পেনশনার রেজিস্ট্রেশন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। পরবর্তীতে একটি প্রত্যয়ন পাতা আসবে। সেখানে লেখা থাকবে ‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই, সর্বজনীন পেনশন স্কিম বহির্ভূত কোন ধরনের সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হতে পেনশন সুবিধা গ্রহণ করি না, আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোন ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।‘ তবে, প্রত্যয়ন অংশে অবশ্যই সাবধানে ক্লিক করতে হবে। কারণ সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা আছে ‘ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন বাতিল হবে এবং জমাকৃত অর্থ ফেরত যোগ্য হবে না।’ ওই প্রত্যয়ন পাতার নিচে ‘আমি সম্মত আছি’ নামে একটি অপশন রাখা হয়েছে, সেখানে ক্লিক করতে হবে।
- দ্বিতীয়ত, রেজিস্ট্রেশন করুন পেইজে আবেদনকারীকে প্রথমে ‘প্যাকেজ/স্কিম’ নির্বাচন করতে হবে। পর্যায়ক্রমে ১০, ১৩ বা ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ই–মেইলের তথ্য দেওয়ার অপশন থাকবে। এই পেজের শেষ অংশ থাকবে ‘ক্যাপচা প্রদান করুন’ এবং পরবর্তী ধাপ ক্লিক । সঠিকভাবে ক্যাপচা দেওয়ার পরে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ই–মেইলে একটি ওটিপি আসবে। ওই ওটিপি ফরমে ব্যবহার করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
- তৃতীয়ত, ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিতে হবে এবং এনআইডি অনুযায়ী এই পেজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনকারীর এনআইডি নম্বর, ছবি, বাংলা ও ইংরেজি নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা অটো চলে আসবে। আবেদনকারীর বার্ষিক আয়ের সম্ভাব্য পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে এবং নিজের পেশা, বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম সিলেক্ট করতে হবে।
- চতুর্থত, ‘স্কিম তথ্য’ নামে আরেকটি পেজ/ট্যাব আসবে। এখানে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের সময় বেছে নিতে হবে। এখানে চাঁদা পরিশোধের জন্য মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক তিনটি অপশন থাকবে। এগুলো অবশ্যই চিন্তা ভাবনা করে লিখুন। যদিও আপনি চাইলে স্কিম তথ্য পরবর্তীতে পরিবর্তন করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী পেনশন পুন: নির্ধারণ হবে।
- পঞ্চমত, এখন আপনাকে ব্যাংক তথ্য পেইজে গিয়ে ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবের ধরন (সঞ্চয়ী অথবা চলতি), ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম উল্লেখ করে দিতে হবে। শাখার রাউটিং নম্বর জানা না থাকলে রাউটিং নম্বর জানা নেই বাটনে ক্লিক করে ব্যাংক, শাখা উল্লেখ করে দেখে নিতে পারবেন।
- ষষ্ঠত, এবার নমিনির তথ্য দিতে হবে। সেখানে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ উল্লেখ করতে হবে। চাইলে একাধিক নমিনি যোগ করা যাবে এবং শতকরা হারে নমিনির প্রাপ্যতা বন্টন করা যাবে তবে মোট নমিনির অংশ কোনভাবে ১০০ অতিক্রম করা যাবে না। নমিনির মোবাইল নম্বর, নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি উল্লেখ করে দিতে হবে।
- সপ্তমত, ফরমপূরণের শেষধাপ সম্পূর্ণ ফর্ম, এতক্ষণ যে তথ্য দিয়েছেন সেগুলো একনজড়ে দেখা যাবে। কোনো ভুল চোখে পড়লে এই পেজে তা সংশোধন করা যাবে। আপনি এখান থেকে পূরণকৃত আবেদন ফরম ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করবেন এবং কোন ভুল না থাকলে বা সকল তথ্য ঠিক মনে হলে আমি নিশ্চিত করছি-তে টিক দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করুন এ ক্লিক করলেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হবে।
- অষ্টম ধাপ, ফরম পূরণ বা আবেদন সম্পন্ন করুন এ ক্লিক করার পরই অটো আপনাকে পেমেন্ট গেইটওয়েতে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনি পেমেন্ট করুন এ ক্লিক করুন। যদি তখনও মনে হয়ে আবেদনে কোন ভুল রয়েছে তবে আপনি আবেদন সংশোধন করুনে ক্লিক করবেন এবং তথ্য সংশোধন করে পুনরায় সম্পন্ন করুন-এ ক্লিক করলে এই পেইজে আসতে পারবেন। পেমেন্ট করুন -এ ক্লি করলে সোনালী ব্যাংক, কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং মেন্যুর মাধ্যমে পেমেন্ট ইনফো দিয়ে পেমেন্ট করতে পারবেন এবং পেমেন্ট সম্পন্ন হলে রিসিড পাবেন সেটি ডাউনলোড করুন।
- সর্বশেষ ধাপ- ইউজার তৈরি করুন- এ ক্লিক করে আপনি অটো প্রাপ্ত ইউজার আইডি’র নিচের বক্সে পাসওয়ার্ড দুইবার ইনপুট করে ইউজার তৈরি করুন -এ ক্লিক করলে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড সেট হয়ে যাবে। পরবর্তীতে আপনি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগিন করতে পারবেন এবং প্রতি মাসের বা বছরের পেমেন্ট করতে পারবেন। ধন্যবাদ
চাঁদা দাতার কত বছর পূর্ণ হলে পেনশন পাবেন?
স্কিম অনুযায়ী ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর হলেই তিনি সরকার থেকে পেনশন পেতে শুরু করবেন, তাকে আর চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি ৫৫ বছর বয়সে এসে স্কিমে অংশ নেন তাহলে ৬৫ বয়স বয়স থেকে তিনি পেনশন পেতে শুরু করবেন।
জাতীয় পেনশন স্কিম ২০২৩ । সরকারি চাকরিজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি?