অ্যান্ড্রয়েড সিক্রেট কোড ২০২৫ । কৌতূহল মেটানোর সুযোগ, নাকি ডেটা হারানোর ঝুঁকি?
ফোনের ‘গোপন’ কোড ব্যবহারে সতর্কতা: এক ডায়ালেই পাল্টে যেতে পারে সেট আপ, খোয়া যেতে পারে ব্যক্তিগত তথ্য
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনে (যেমন Samsung, Xiaomi, Vivo, OPPO, Realme, Huawei/Honor, OnePlus) ব্যবহৃত কিছু “সিকিউরিটি ও টেস্ট কোড”-এর তালিকা ব্যবহারকারীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই বিশেষ কোডগুলো সাধারণত ফোনের হার্ডওয়্যার পরীক্ষা, সফটওয়্যার তথ্য জানা, এবং বিভিন্ন সার্ভিস মেনু অ্যাক্সেস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু, এগুলোর ভুল বা অসাবধানতাপূর্ণ ব্যবহারে ফোনের সেটিংস এবং ব্যক্তিগত ডেটার গুরুতর ক্ষতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন।
স্মার্টফোনের ডায়ালপ্যাডে ডায়াল করার উপযোগী এই কোডগুলোর মাধ্যমে একজন সাধারণ ব্যবহারকারীও ফোনের ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা টেস্ট মোডে প্রবেশ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ:
*#06#
: সকল ব্র্যান্ডের ফোনেই IMEI নম্বর দেখায়।*#0*#
(Samsung) বা*#*#6484#*#*
(Xiaomi/Redmi/POCO) : হার্ডওয়্যার টেস্ট মেনু অ্যাক্সেস করার জন্য ব্যবহৃত হয়।*#*#4636#*#*
: ফোন এবং ব্যাটারি সংক্রান্ত তথ্য দেয়।*#7353#
(Samsung) বা*#899#
(Realme) : কুইক সার্ভিস বা ইঞ্জিনিয়ার মোডে প্রবেশ করায়।
ঝুঁকির দিক: ফ্যাক্টরি রিসেট এবং সিস্টেম পরিবর্তন
বিশেষজ্ঞদের মূল উদ্বেগ সেই সমস্ত কোড নিয়ে, যা অজান্তে ব্যবহার করলে মুহূর্তের মধ্যে ফোনের সমস্ত ডেটা মুছে যেতে পারে অথবা সিস্টেম সেটিংসে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। কিছু কোড, যেমন:
*#*#7780#*#*
(Vivo-এর তালিকায় রয়েছে) বা*2767*3855#
(অন্যান্য কিছু কোড) এর মতো কমান্ড সরাসরি ফ্যাক্টরি রিসেট শুরু করে দিতে পারে। এর ফলে ব্যবহারকারীর ছবি, ভিডিও, অ্যাপ, এবং সমস্ত ব্যক্তিগত ডেটা স্থায়ীভাবে মুছে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।- এছাড়াও, সার্ভিস মোড বা ইঞ্জিনিয়ারিং মোডের মতো অ্যাডভান্সড মেনুতে প্রবেশ করে, অনভিজ্ঞ ব্যবহারকারী যদি ভুল করে কোনো অপশন পরিবর্তন বা সেভ করে ফেলেন, তাহলে ফোনের নেটওয়ার্ক সেটিং, ইউএসবি সেটিংস, বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম ফাংশনালিটি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ব্যবহারকারীদের জন্য সতর্কতা
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের এই ধরনের কোড ব্যবহারের আগে অত্যন্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। যেকোনো কোড ডায়াল করার আগে তার সঠিক কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক।
১. ব্যাকআপ অত্যাবশ্যক: ফ্যাক্টরি রিসেট বা ডেটা মুছে ফেলার মতো কোনো কোড ব্যবহারের সামান্যতম সম্ভাবনাও থাকলে, ব্যবহারকারীকে অবিলম্বে তার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ডেটা (ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্ট, কন্টাক্ট) ক্লাউডে বা অন্য কোনো স্টোরেজে ব্যাকআপ করে রাখা উচিত। ২. অজানা কোড এড়িয়ে চলুন: কেবলমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া এবং যার কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত, সেই কোডগুলোই ব্যবহার করা উচিত। “পরীক্ষার” জন্য অপ্রয়োজনীয় বা অজানা কোড ডায়াল করা এড়িয়ে চলুন। ৩. মডেল-ভিত্তিক পার্থক্য: মনে রাখতে হবে, একই ব্র্যান্ডের ভিন্ন ভিন্ন মডেল বা সফটওয়্যার ভার্সনে কোডগুলো ভিন্নভাবে কাজ করতে পারে বা আদৌ কাজ নাও করতে পারে। ৪. রিসেট কোড থেকে দূরত্ব: ফোন রিসেট করার প্রয়োজন হলে, সেটিংস মেনুর মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন, ডায়ালপ্যাড কোড ব্যবহার না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
অ্যান্ড্রয়েড ফোন নির্মাতারা এই “গোপন” কোডগুলো মূলত সার্ভিস টেকনিশিয়ান এবং ডেভেলপারদের জন্য রেখে থাকেন। সাধারণ ব্যবহারকারীদের এর গভীরে না যাওয়াই শ্রেয়, কারণ এক ক্লিকেই বড় কোনো বিপদ ডেকে আনা খুবই সহজ।