Akashi & Ulcal Tree Banned in Bangladesh 2025 । আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস গাছ রোপন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ?
আকাশমনি (Acacia auriculiformis) ও ইউক্যালিপটাস (Eucalyptus) গাছ বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় ছিল দ্রুত বর্ধনশীল কাঠের উৎস হিসেবে। তবে সম্প্রতি এই দুই ধরনের গাছ নিয়ে কিছু বিতর্ক ও বিধিনিষেধ এসেছে পরিবেশগত কারণে– Akashi & Ulcal Tree Banned in Bangladesh 2025
কেন এই গাছগুলো নিয়ে নিষেধাজ্ঞা বা সতর্কতা এসেছে? ইউক্যালিপটাস গাছ অনেক বেশি পানি শোষণ করে, ফলে এটি মাটির নিচের জলস্তর দ্রুত হ্রাস করতে পারে। এই কারণে শুষ্ক বা পানি সংকটাপন্ন অঞ্চলে এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে খুব কম গাছপালা জন্মায়। এগুলো স্থানীয় প্রজাতির গাছ ও প্রাণীর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে না। এই গাছগুলো মাটির পুষ্টি হ্রাস করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে কৃষির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
নিষেধাজ্ঞা কি কার্যকর হয়েছে? হ্যাঁ। তবে বিদ্যমান গাছের কি হবে সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সরকার কিছু এলাকায় এই গাছগুলো রোপণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, বিশেষ করে যেখানে এগুলোর নেতিবাচক প্রভাব বেশি। বিকল্প প্রজাতি রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যেমন – দেশি ফলজ ও বনজ গাছ (হরিতকী, আমলকী, চালতা, গামারি ইত্যাদি)। কিছু সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস বাদ দিয়ে পরিবেশবান্ধব গাছকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এখনো কিছু জায়গায় এই গাছের কাঠ বিক্রি হচ্ছে, তবে ভবিষ্যতে নীতিগত পরিবর্তনের কারণে বাজার সংকুচিত হতে পারে। বেসরকারি বনাঞ্চল বা কৃষিজমিতে রোপণ ও বিক্রয় পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়, তবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। রোপণ ও বিক্রয় পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়, তবে পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে সরকার এবং পরিবেশবিদরা এদের বিকল্প খুঁজতে উৎসাহ দিচ্ছেন।
ইউক্যালিপটাস গাছের পরিবেশগত ক্ষতি কি? অতিরিক্ত পানি শোষণ: ইউক্যালিপটাস গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে, যা মাটির আর্দ্রতা কমিয়ে দেয় এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামিয়ে ফেলতে পারে। এর ফলে আশপাশের এলাকার মাটি শুষ্ক হয়ে যায় এবং অন্যান্য উদ্ভিদের জন্য পানির অভাব দেখা দেয়। (Source: দৈনিক শিক্ষা, Dhaka Times, Somoy TV, Alokito Bangladesh, উইকিপিডিয়া, Protidiner Sangbad, BBC, SAMAKAL, Bangla Tribune) এই গাছের পাতা ও মূলে থাকা টক্সিন বা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে এবং উর্বরতা কমিয়ে দেয়। ফলে অন্য প্রজাতির গাছ বা ফসল জন্মাতে অসুবিধা হয়। গাছটি কেটে ফেলার পরও মাটির উর্বরতা ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশের জন্য বেশ কিছু কারণে ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইউক্যালও কি জীববৈচিত্র্য হ্রাস করে? হ্যাঁ। ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে অন্য কোনো ছোট গাছ বা উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। এর পাতায় থাকা অ্যান্টিসেপটিক উপাদানের কারণে পোকামাকড়ও কম আসে। ফলে স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্য সংকট দেখা দেয় এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। দেশীয় পাখি ও পোকামাকড় এই গাছে বাসা বাঁধে না বা খাদ্য খুঁজে পায় না।
Caption: govt order
আকাশমনি গাছের পরিবেশগত ক্ষতি ২০২৫ । সরকারিভাবে এসব গাছের রোপন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে
- অতিরিক্ত পানি শোষণ ও মাটির উর্বরতা হ্রাস: ইউক্যালিপটাসের মতোই আকাশমনি গাছ মাটি থেকে বেশি পরিমাণে পানি শোষণ করে মাটিকে শুষ্ক করে ফেলে এবং এর উর্বরতা কমিয়ে দেয়।
- জীববৈচিত্র্য হ্রাস: এই গাছের নিচেও অন্যান্য প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মানোর সুযোগ কমে যায়। ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য এটি হুমকি সৃষ্টি করে।
- বীজের মাধ্যমে আগ্রাসী বিস্তার: আকাশমনি গাছ প্রচুর পরিমাণে বীজ ছড়ায়, যার ফলে অন্যান্য দেশীয় প্রজাতির গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে?
হ্যাঁ। কিছু সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশ থেকে অধিক পরিমাণে অক্সিজেন শোষণ করে এবং নাইট্রোজেন ত্যাগ করে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে, সাধারণভাবে গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন।ইউক্যালিপটাস গাছে তেলজাতীয় দাহ্য পদার্থ বেশি থাকায় এটি অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ায়। এর আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়াতেও এটি দাবানলের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিছু পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ইউক্যালিপটাস গাছের ফুল ও পাপড়ি বাতাসে মিশে মানুষের শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগের কারণ হতে পারে। এই সকল কারণে বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার দেশীয় প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণে উৎসাহিত করছে। তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে অবক্ষয়িত ও অনুর্বর মাটিতে যেখানে অন্য গাছ সহজে জন্মায় না, সেখানে আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাসের মতো দ্রুত বর্ধনশীল গাছ টিকে থাকতে পারে এবং এসব ক্ষেত্রে এদের ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। দ্রুত বর্ধনশীলতা এবং কাঠের চাহিদা মেটানোর সুবিধার কারণে এই গাছগুলো জনপ্রিয় হলেও পরিবেশের উপর এদের দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ব্যাপক। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানোর উপর গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য।