বিলাসী নয়, চাই সম্মানজনক জীবন : নবম পে-স্কেলে সর্বনিম্ন বেসিক ৩৫,০০০/- টাকার দাবিতে ১৪-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা
সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সর্বনিম্ন গ্রেডের (১৪ থেকে ২০) কর্মজীবীরা জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে বর্তমান বেতনের তীব্র অসামঞ্জস্যের কারণে এক কঠিন সংগ্রামের মুখে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা কেবল জীবিকা নির্বাহ নয়, বরং পরিবার ও সমাজে সম্মানের সাথে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের জোরালো দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের প্রধান দাবি, সর্বনিম্ন বেসিক বেতন ৩৫,০০০/- টাকা নির্ধারণ করা হোক।
🏡 মাথা নিচু করে চলা, পরিবারকে সময় দিতে না পারা:
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪-২০ গ্রেডের একাধিক কর্মচারী জানান, তাদের মাসিক আয়ের বেশিরভাগই চলে যায় মৌলিক চাহিদা মেটাতে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এই বেতন দিয়ে সংসার চালানো এক নিত্যদিনের যুদ্ধ।
🗣️ “আমরা তো বিলাসিতা চাই না, শুধু একটু সম্মানের সাথে বাঁচতে চাই,” এক কর্মচারী আক্ষেপ করে বলেন। “বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের সামনে মাথা উঁচু করে চলতে পারি না। তাদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে না পারার যন্ত্রণা আমাদের কুরে কুরে খায়। ছুটির দিনগুলোতেও মানসিক চাপে থাকি, বন্ধুদের সঙ্গে বা পরিবারকে নিয়ে কোথাও সময় কাটানো যেন স্বপ্ন।”
তাঁদের বক্তব্য, বর্তমান বেতনে জীবনধারণ করাই যেখানে কঠিন, সেখানে সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান, অসুস্থতায় সুচিকিৎসা কিংবা সন্তানদের উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব।
📉 বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই: জীবন, শুধু টিকে থাকা
দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো অপরিবর্তিত থাকায় বিশেষ করে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের আর্থিক চাপ আরও বেড়েছে। এ অবস্থায়, ১৪-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য নবম পে-স্কেল একটি অপরিহার্য দাবি হিসেবে সামনে এসেছে।
কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৫ সালের পে-স্কেলের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা না হওয়ায় নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলো অমানবিক জীবন যাপন করছে। তাই দ্রুত পে-কমিশনকে তাদের দাবি বিবেচনা করে সর্বনিম্ন বেসিক বেতন ৩৫,০০০/- টাকা নির্ধারণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাঁদের মতে, এটিই বর্তমান বাজারে একটি সম্মানজনক জীবনযাত্রার ভিত্তি হতে পারে।
🤝 ন্যায্যতার দাবি: বৈষম্য দূর করার আহ্বান
১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বলছেন, শুধুমাত্র উচ্চ গ্রেডের কর্মচারীদের নয়, বরং সমাজের ভিত্তি হিসেবে কাজ করা নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। তাঁদের দাবি, বৈষম্যহীন নতুন বেতন কাঠামো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে সাধারণ কর্মচারীরা নতুন উদ্যমে কাজ করতে পারবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
পরিশেষে, ১৪-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা সরকারের কাছে তাদের দাবি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন—বিলাসী জীবন নয়, তাঁরা শুধু কাজের বিনিময়ে একটু সম্মান এবং নিরাপদ জীবন চান।
আপনি যে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন, তা হলো সরকারি কর্মচারীদের জন্য নবম পে-স্কেলে চাওয়া বা প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো কেমন। এটি বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন ও অংশীজনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তবে সরকার কর্তৃক চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত বা ঘোষিত নয়।
বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় বেতন কমিশনের কাছে যে প্রস্তাবনাগুলো পেশ করা হয়েছে, তার মূল বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
💰 নবম পে-স্কেলে সরকারি কর্মচারীদের প্রস্তাবিত মূল বিষয়
সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন (যেমন বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশন, ১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরাম ইত্যাদি) বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে তাদের প্রস্তাবনা দিয়েছে।
| বিষয় | প্রস্তাবিত হার/পরিমাণ | প্রধান প্রস্তাবক (উদাহরণ) |
| সর্বনিম্ন বেসিক বেতন | ৳ ২৫,০০০/- থেকে ৳ ৩৫,০০০/- | একাধিক কর্মচারী সংগঠন |
| সর্বোচ্চ বেসিক বেতন | ৳ ১,৪০,০০০/- থেকে ৳ ১,৫০,০০০/- | একাধিক কর্মচারী সংগঠন |
| গ্রেড সংখ্যা | ২০টি থেকে কমিয়ে ১০/১২/১৫টি | একাধিক সংগঠন (বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে) |
| বেতন বৃদ্ধির অনুপাত (সর্বোচ্চ:সর্বনিম্ন) | ১:৪ এর মধ্যে | একাধিক সংগঠন |
| বিশেষ প্রস্তাব (ঢাবি) | বর্তমান বেতনের ৩০০% পর্যন্ত মূল বেতন বৃদ্ধির দাবি | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা |
📊 গ্রেডভিত্তিক প্রস্তাবিত বেতনের কিছু নমুনা
কিছু সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের অষ্টম পে-স্কেলের ওপর ভিত্তি করে মূল বেতন ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নিচে কয়েকটি গ্রেডের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো:
| গ্রেড | ৮ম পে-স্কেলের মূল বেতন (৳) | ৯ম পে-স্কেলের প্রস্তাবিত মূল বেতন (৳) (৩০০% বৃদ্ধির ভিত্তিতে) |
| ১ম গ্রেড | ৭৮,০০০ (নির্ধারিত) | ৯৪,৪০০ (অপেক্ষাকৃত কম বৃদ্ধির প্রস্তাব) |
| ২য় গ্রেড | ৬৬,০০০ – ৭৬,৪৯০ | ৮০,০০০ – ৯২,৫৩৭ |
| ৬ষ্ঠ গ্রেড | ৩৫,৫০০ – ৬৭,০১০ | ৪২,৯৫৫ – ৮১,০৮৩ |
| ১০ম গ্রেড | ১৬,০০০ – ৩৮,৬৪০ | ১৯,৩৬০ – ৪৬,৭৫৪ |
| ১৪তম গ্রেড | ১০,২০০ – ২৪,৬৮০ | ১২,৩৪২ – ২৯,৮৬৬ |
| ২০তম গ্রেড | ৮,২৫০ (সর্বনিম্ন) | ৯,৯৮২ – ২৪,৩৪৮ (একটি প্রস্তাব অনুযায়ী) |
📌 অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দাবি
নবম পে-স্কেলের পাশাপাশি কর্মচারীরা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরেছেন:
- টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করা।
- বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে (যেমন: বন অধিদপ্তর) ঝুঁকি ভাতা মূল বেতনের ৫০% করার দাবি।
- বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা।
- শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি করা।
- সকল কর্মচারীর জন্য রেশন পদ্ধতি চালু করা।
- পেনশন সুবিধা বিদ্যমান ৯০% থেকে বাড়িয়ে ১০০% করা।
উল্লেখ্য, এই তথ্যগুলো বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন কর্তৃক জাতীয় বেতন কমিশনের কাছে পেশ করা প্রস্তাবনা। সরকারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত নবম পে-স্কেল ঘোষণা করা হলে, প্রকৃত বেতন কাঠামো ভিন্ন হতে পারে।

