ওয়ারিশ নাকি নমিনি প্রাপ্যতা ২০২৫ । গ্রাহকের মৃত্যুতে সঞ্চয়পত্রের টাকা কে পাবে?
গ্রাহকের মৃত্যুতে সঞ্চয়পত্রের টাকা কে পাবে: নমিনি না ওয়ারিশ? গ্রাহকের মৃত্যু হলে উক্ত সঞ্চয়পত্রের অর্থ কার হাতে যাবে—নমিনি নাকি ওয়ারিশগণ?—এই প্রশ্নটি সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রায়শই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। আজকের এই লেখাটি এ বিষয়েই। লেখাটি কিছুটা দীর্ঘ তবে পুরোটা পড়লে আশা করি কনফিউশন দুর হবে।– ওয়ারিশ নাকি নমিনি প্রাপ্যতা ২০২৫
এখানে ব্যাংক আইন কার্যকর হবে না? না। সঞ্চয়পত্র বিক্রয় ও পরিচালনা করা হয় জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিধিমালা-১৯৭৭ অনুসারে, যদি কোনো গ্রাহক জীবিত অবস্থায় একজন নমিনি নির্ধারণ করে যান, তাহলে সঞ্চয়পত্র বিধিমালা ১৯৭৭ এর Rule 17 (Death of certificate holder) অনুসারে: মৃত্যুর পর সঞ্চয়পত্রের অর্থ নমিনিকে প্রদান করা যাবে অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রের মালিক মারা গেলে উক্ত টাকা নমিনি পাবে। ব্যাংক নমিনিকে টাকা বুঝিয়ে দেবে তাতে ব্যাংকের কোন দায় থাকবে না অর্থাৎ, গ্রাহকের মৃত্যুতে নমিনিকে টাকা প্রদান করলে ব্যাংক বা সঞ্চয় অধিদপ্তর দায়মুক্ত থাকবে। এছাড়া সর্বশেষ “সরকারী ঋণ আইন ২০২২” এর ১৮ নং ধারাতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকের মৃত্যুতে টাকা নমিনি পাপ্য হবেন। এই আইন যথাযথভাবে পরিপালন করার জন্য জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর নির্দেশনাও দিয়েছে।
তবে কোর্ট যে বলে ওয়ারিশান পাবে? বহুল আলোচিত কেস সিভিল রিভিশন নং- ১৬৮২/১০১৫ এর একটি হাইকোর্ট রায়কে কেন্দ্র করে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, উক্ত রায়ে বলা হয়েছে, নমিনি কেবল টাকা গ্রহণের অধিকারী, মালিক নয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ে আদালত স্পষ্ট করেছেন: “Nominee is merely a trustee for the legal heirs of the deceased.” এই দৃষ্টিকোণ থেকে নমিনি কেবল একজন প্রতিনিধি, যিনি টাকাটি গ্রহণ করে প্রকৃত ওয়ারিশদের—মধ্যে বণ্টনের দায়িত্বে থাকেন।
আদালতের রায়ের পর তো সবাই জানে নমিনি কিছু না? জি না। এই রায়ের পর অনেকে ভাবতে শুরু করেছেন তাহলে টাকা ওয়ারিশগনই পাবে। আসলে তা নয়, আদালতের রায় মুলত নির্দিষ্ট একটি কেসের জন্য ছিল যেটা আইন হিসেবে প্রচলিত বিধিমালাকে প্রভাবিত করে না, মামলার রায় অন্য কেসের রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া রায় হাইকোর্টে ওয়ারিশদের পক্ষে গেলেও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের পর আপিল বিভাগে আপিল ( civil petition no 520/2016, Leave to Appeal no-1398/2019) করা হয়েছিল কিন্তু তা চুড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। তাই উক্ত কেসের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা মানলেও অন্য সকল ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধি মানতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
সঞ্চয়পত্র নমিনি আইন ২০২৫ । উত্তরাধিকারগণ চাইলেই কি নমিনির টাকা নিজেরা তুলে নিয়ে নিতে পারবে?
তাহলে মুল কথা কি দাড়ালো? র্সবশেষ সরকারী ঋণ আইন-২০২২ ও সঞ্চয়পত্র বিধিমালা ১৯৭৭ অনুসারে সঞ্চয়পত্রের নমিনি দেয়া থাকলে, ক্রেতার মৃত্যুর সঞ্চয়পত্রের টাকা শুধুমাত্র নমিনিকে প্রদান করা হবে। এটাই রুলস এবং প্যাকটিস!
Caption: public debt act 2022 pdf download
সঞ্চয়পত্র নমিনি ২০২৫ । নমিনি” বলতে বোঝানো হয় সেই ব্যক্তিকে, যিনি ব্যাংক হিসাব, বীমা পলিসি বা অন্য কোনো আর্থিক সম্পদের মালিক মারা গেলে, সেই সম্পদের টাকা বা সুবিধা পাওয়ার জন্য মনোনীত হন। সহজ করে বললে, নমিনি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি মৃত্যুর পর আপনার ব্যাংক হিসাব বা বীমার টাকা বা সুবিধা পাবেন।
- মনোনয়ন: আপনি আপনার ব্যাংক হিসাব বা বীমা পলিসির জন্য একজন বা একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি হিসেবে মনোনীত করতে পারেন।
- মালিকানা নয়: নমিনি শুধুমাত্র টাকা বা সুবিধা পাওয়ার অধিকার পান, তিনি সম্পদের মালিক হন না।
- উত্তরাধিকার: নমিনির মৃত্যুর পর, সেই টাকা বা সুবিধা আইনি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।
- উপকার: নমিনি মনোনয়ন করার ফলে, আপনার মৃত্যুর পর আপনার হিসাবের টাকা বা বীমার সুবিধা দ্রুত এবং সহজে আপনার মনোনীত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে যায়।
- আইন: ব্যাংক এবং বীমা কোম্পানিগুলো নমিনি মনোনয়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।
- উদাহরণ: যদি আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য আপনার সন্তানকে নমিনি হিসেবে মনোনীত করেন, তাহলে আপনার মৃত্যুর পর আপনার সন্তানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা টাকা বা সুবিধা পাওয়ার অধিকার থাকবে।
- উপসংহার: নমিনি হলো একজন ব্যক্তি যিনি আপনার মৃত্যুর পর আপনার ব্যাংক হিসাব, বীমা পলিসি বা অন্য কোনো আর্থিক সম্পদের টাকা বা সুবিধা পেতে মনোনীত হন। সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে নমিনি-ই গ্রাহকের পর টাকা মালিক।
নমিনির নিকট অংশ দাবী করা যাবে?
হ্যাঁ। তবে ওয়ারিশগন যদি মনে করেন উক্ত টাকা তাদের প্রাপ্য তাহলে ওয়ারিশগণ নমিনির কাছে তাদের প্রাপ্য অংশ চাইবেন অর্থাৎ, ওয়ারিশদের টাকা পাওয়ার দাবিটি করবে নমিনির কাছে। যদি নমিনি টাকা তুলে নিজেই রেখে দেন বা ভাগ না করেন, তাহলে ওয়ারিশগণ টাকা উত্তলনের প্রমানপত্রসহ ( Encashment certificate) সিভিল কোর্টে মামলা করতে পারেন। পরিশেষে, সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক মারা গেলে উক্ত টাকা শুধুমাত্র নমিনি পাবে। কিন্তু ঘটনা ও প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে কার্যক্রম বিভিন্ন হতে পারে। আদালত রায় দিয়ে যেকোন কার্যক্রম বন্ধ করা বা কোন বিধিমালা বা আইন স্থগিত করতে পারে। সঞ্চয়পত্রের ট্রান্সেকশন বন্ধ করতে পারেন বা অন্য নির্দেশনা দিতে পারে তবে সেটা নির্দিষ্ট কোন কেসের ক্ষেত্রে। সার্বজনীনভাবে সঞ্চয়পত্রের প্রচলিত বিধিমালার উপর প্রভাব ফেলে না।