সিঙ্গেল মাদারের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া ২০২৫ । পিতৃ-মাতৃহীন পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন করা যায় কি?
হ্যাঁ, পথশিশুদেরও জন্ম নিবন্ধন করা যেতে পারে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সব নাগরিকের অধিকার, এবং পথশিশুদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য– সিঙ্গেল মাদারের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া ২০২৫
পিতা মাতা নেই যাদের তাদের জন্ম নিবন্ধন কিভাবে হবে? পিতামাতার পরিচয়হীন পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন নিবন্ধন সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা। বাংলাদেশে বহু পথশিশু রয়েছে। তাদের অনেকেরই জন্ম সনদ না থাকায় দেশের বিভিন্ন সরকারি নাগরিক সুবিধা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এ সকল শিশুদের সহজ উপায়ে জন্ম নিবন্ধন আবেদন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ সকাল ১১ টায়, পুরান ঢাকার বাবু বাজারে পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক এক মিডিয়া ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছিল ‘বারাকা পথশিশু দিবা ও রাত্রিকালীন আশ্রয়কেন্দ্রে’। এসময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে নানান বক্তব্য পেশ করেন। এমদাদুল হক বলেন, “আঞ্চলিক সরকার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে পথ শিশুদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করলে, নিবন্ধন করার জটিলতা কমে আসতে পারে।”অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাসেল মুন বলেন, “প্রত্যেক মানুষেরই জন্ম নিবন্ধন করা প্রয়োজন।
জন্ম নিবন্ধনের উদ্দেশ্য কি বয়স নির্ধারণ? বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন প্রতিটি শিশুর জন্মগত অধিকার। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে জন্মের পরপরই শিশুর জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি শিশুর অধিকার সুরক্ষার পূর্বশর্ত হচ্ছে তার জন্ম নিবন্ধন করা। শিশুর জন্য সকল আইন ও বিধিবিধান যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে সঠিক বয়স নির্ধারণ খুবই প্রয়োজন। একজন শিশুর জন্ম নিবন্ধনের ফলে তার সঠিক বয়স নির্ধারণের জন্ম নিবন্ধন করা প্রয়োজন। জন্ম নিবন্ধনের সাথে সাথে শিশু পাবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। বাংলাদেশে শিশু সম্পর্কিত আইনে শিশু অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র দায়িত্ব নিয়েছে।
৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে? হ্যাঁ। যে কোনো তথ্যের জন্য নিকটস্থ নিবন্ধন কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের জন্য ভিজিট করুন http://bdris.gov.bd/ । জন্ম নিবন্ধন না হবার ফলে শিশু তাদের নিজের দেশ,ঘর, আশ্রয় এবং নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয়। জন্ম নিবন্ধন না হলে ভোটার হিসেবে সঠিক সময়ে নাম অন্তর্ভুক্তি হয় না, চাকুরীর বয়সসীমা নির্ধারণে সমস্যা হয়, দেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করা যায় না, স্কুলে সঠিক সময়ে ভর্তি করানো যায় না এবং বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হয় না। জন্ম নিবন্ধন না থাকলে নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট প্রাপ্তি, সরকারী বিভিন্ন ভাতাদিসহ সামাজিক নিরাপত্তা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবেন। এমনকি শিশুর বিনামূল্যে টিকাসেবা গ্রহণের জন্যও জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন।
বাংলাদেশের মত দেশে শিশুর জন্ম নিবন্ধন হলো শিশুদের স্থায়ী পারিবারিক পরিচিতি। আর জন্ম নিবন্ধন সনদ হচ্ছে দেশের মানুষের একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিপত্র। বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন আইনের আওতায় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা জন্ম নিবন্ধন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সকল শিশুর জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পিতা/মাতার নামহীন শিশু জন্ম নিবন্ধন কিভাবে হবে? পিতা-মাতার নাম ছাড়া শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা সম্ভব, তবে কিছু শর্ত আছে। জন্ম নিবন্ধন ফর্মের ক্ষেত্রে, যদি শিশুর পিতার নাম বা মায়ের নাম না থাকে, তাহলে সেই ঘরগুলো খালি রেখে আবেদন করা যেতে পারে। পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে এই তথ্য পূরণ করে জন্ম নিবন্ধন অফিসে জমা দিতে হবে। জন্ম নিবন্ধন ফর্মের যেখানে পিতার নাম এবং মায়ের নাম লেখার স্থান রয়েছে, সেখানে যদি এই তথ্য না থাকে, তাহলে সেই ঘরগুলো খালি রেখে ফর্ম পূরণ করা যেতে পারে। ফর্মটি পূরণ করে জন্ম নিবন্ধন অফিসে জমা দিতে হবে।
Caption: bdris.gov.bd
জন্ম নিবন্ধ ব্যবহার ২০২৫ । ১৮টিরও অধিক সেবা পেতে জন্ম সনদের ব্যবহার বাধ্যতামূলক
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বিবাহ নিবন্ধন
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- জমি রেজিস্ট্রেশন
- পাসপোর্ট ইস্যু
- ৪টি ক্ষেত্রে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ অত্যাবশ্যক
- উত্তরাধিকার সংক্রান্ত (সাকসেশন সার্টিফিকেট)
- পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তি
- মৃত ব্যক্তির লাইফ ইনস্যুরেন্সের দাবি মেটানো
- নামজারি ও জমাভাগ প্রাপ্তি
- স্বাস্থ্য সেবা
- চাকুরিতে নিয়োগ
- ট্রেড লাইসেন্স
- ব্যাংক হিসাব খোলা
- আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্স
- গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি টিআইএন
- ঠিকাদারি লাইসেন্স
- বাড়ির নকশা অনুমোদন
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ভোটার তালিকা প্রণয়ন
- স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট হতে যে কোনো সেবা প্রাপ্তি ।
জন্ম নিবন্ধন না করলে কি জরিমানা হয়?
হ্যাঁ। শিশুর পিতা বা মাতা বা অভিভাবক বা নির্ধারিত ব্যক্তি উক্ত শিশুর জনের ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিনের মধ্যে সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধকের নিকট প্রদান করতে ব্যর্থ হলে অনধিক ৫০০০ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে একই শাস্তির বিধান রয়েছে। শিশুর পিতা-মাতার নাম বা তথ্য নিশ্চিত করার পর, পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন অফিসে এই তথ্য জমা দিতে হবে। তথ্য জমা দেওয়ার পর, জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। জন্ম নিবন্ধন করতে হলে, শিশুর নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যও দিতে হবে। যদি শিশুর কোনো অভিভাবক থাকে, তাহলে তার নাম ও ঠিকানা দিতে হবে। জন্ম নিবন্ধন ফর্মের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন – জন্ম সার্টিফিকেট, পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদের অনুলিপি দিতে হতে পারে। পিতা-মাতার নাম ছাড়া জন্ম নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে, ৪৫ দিনের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। যদি পিতা-মাতার নাম বা তথ্য না থাকে, তাহলে অভিভাবকের তথ্য দিয়েও জন্ম নিবন্ধন করা যেতে পারে। জন্ম নিবন্ধন করার জন্য, জন্ম নিবন্ধন অফিসের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, পিতা-মাতার নাম না থাকলেও শিশুর জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করা সম্ভব।