ঘরে বসেই মিলবে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ: জেনে নিন আবেদনের সহজ ধাপ ও শর্তাবলি
বর্তমান সরকারের ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ প্রক্রিয়া এখন আরও সহজ ও ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এখন নতুন মিটারের জন্য গ্রাহককে আর বিদ্যুৎ অফিসে বারবার দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে অনলাইনের মাধ্যমেই এখন নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন সম্পন্ন করা যাচ্ছে।
অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়া
নতুন সংযোগের জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (BREB) অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। আবেদন সাবমিট করার পর নির্ধারিত সংযোগ ফি মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম (যেমন- রকেট) ব্যবহার করে পরিশোধ করা যাবে। এতে করে গ্রাহকের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের হয়রানি বন্ধ হয়েছে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র (চেকলিস্ট)
আবেদনের পূর্বে গ্রাহককে বেশ কিছু ডকুমেন্টস স্ক্যান করে হাতে রাখতে হবে। সাধারণত যে কাগজগুলো প্রয়োজন হয়:
আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) কপি।
জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিলের কপি বা খতিয়ান।
পূর্ববর্তী কোনো বিদ্যুৎ বিলের কপি (যদি থাকে বা প্রতিবেশী কারো)।
নির্ভুল মোবাইল নম্বর (পরবর্তীতে যোগাযোগের জন্য)।
সংযোগ পাওয়ার প্রধান শর্তাবলি
নতুন সংযোগ পেতে হলে গ্রাহককে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নির্ধারিত কিছু কারিগরি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে:
দূরত্ব: মূল ট্রান্সফরমার বা সার্ভিস পোল থেকে গ্রাহকের ঘরের দূরত্ব নির্ধারিত সীমার (সাধারণত ১৩০ ফুট বা ৪০ মিটারের) মধ্যে হতে হবে।
সঠিক ওয়্যারিং: ঘরের ভেতর সঠিক নিয়মে আর্থিং এবং ইন্টারনাল ওয়্যারিং সম্পন্ন থাকতে হবে। ওয়্যারিং সঠিক না হলে সংযোগ প্রদান করা হয় না।
সঠিক তথ্য: আবেদন ফর্মে দেওয়া সকল তথ্য (নাম, ঠিকানা, জমির বিবরণ) সত্য হতে হবে। তথ্যে গড়মিল থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
সতর্কতা
অনলাইনে আবেদন করার সময় নির্ধারিত সরকারি ফি ব্যতীত অন্য কোনো অতিরিক্ত লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সকল পেমেন্ট শুধুমাত্র স্বীকৃত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই সম্পন্ন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নতুন মিটার পেতে কত টাকা লাগে?
পল্লী বিদ্যুতের নতুন মিটার (আবাসিক সংযোগ) পাওয়ার জন্য নির্ধারিত কিছু সরকারি ফি রয়েছে। সাধারণত একটি সাধারণ আবাসিক মিটারের (২ কিলোওয়াট পর্যন্ত) জন্য মোট খরচ ১,১৪৮ টাকার আশেপাশে হয়ে থাকে।
খরচের খাতগুলো নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
১. আবেদন ও সমীক্ষা ফি
আবেদন ফি: ১০০ টাকা।
ভ্যাট: আবেদনের সাথে ৫% ভ্যাট (৫ টাকা) দিতে হয়।
অর্থাৎ, অনলাইনে আবেদন করার সময় আপনাকে মোট ১০৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
২. জামানত ও অন্যান্য ফি (আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর)
আবেদন সফলভাবে যাচাই হওয়ার পর আপনাকে নিচের ফিগুলো জমা দিতে হবে:
নিরাপত্তা জামানত: প্রতি কিলোওয়াটের জন্য ৮০০ টাকা (আবাসিক সংযোগের জন্য)। সাধারণত ২ কিলোওয়াটের জন্য ৮০০ টাকা ধরা হয় (অনেক ক্ষেত্রে লোড অনুযায়ী এটি কম-বেশি হয়)।
সদস্য ফি: ৫০ টাকা।
মিটার ভাড়া/অন্যান্য: কিছু ক্ষেত্রে মিটার স্ক্র্যাপ বা বিশেষ সার্ভিস চার্জ যুক্ত হতে পারে।
বি.দ্র: বর্তমানে অনেক সমিতি থেকে জানানো হচ্ছে যে, ২ কিলোওয়াট লোডের আবাসিক সংযোগের জন্য মোট সরকারি খরচ ১,১৪৮ টাকা। এটি রকেট বা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
অতিরিক্ত কিছু সম্ভাব্য খরচ:
সরকারি ফির বাইরেও আপনার কিছু ব্যক্তিগত খরচ হতে পারে, যা সরাসরি বিদ্যুৎ অফিসকে দিতে হয় না:
ওয়্যারিং খরচ: আপনার ঘরের ভেতরের তার, মেইন সুইচ এবং আর্থিং রড স্থাপনের খরচ আপনাকে বহন করতে হবে।
সার্ভিস তার: সার্ভিস পোল থেকে মিটার পর্যন্ত দূরত্ব ১০০ ফুটের বেশি হলে অতিরিক্ত তারের জন্য বাড়তি ফি লাগতে পারে।
পরামর্শ: কোনো দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীকে অতিরিক্ত টাকা দেবেন না। সকল পেমেন্ট রকেট বা অফিশিয়াল পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে করবেন এবং মানি রিসিট সংগ্রহে রাখবেন।
কি কি কাগজপত্র আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হয়?
পল্লী বিদ্যুতের নতুন মিটারের আবেদনের জন্য সাধারণত নিচের কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হয়। অনলাইনে আবেদন করার সময় এই ডকুমেন্টগুলোর স্ক্যান কপি বা পরিষ্কার ছবি আপলোড করতে হবে:
১. আবেদনকারীর ছবি: আবেদনকারীর এক কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
২. পরিচয়পত্র: আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ফটোকপি। (যিনি মিটারের মালিক হবেন তার নামে)।
৩. জমির মালিকানা দলিল: যে স্থানে মিটারটি বসানো হবে, সেই জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিলের কপি, খারিজ খতিয়ান অথবা নামজারি পর্চা।
৪. প্রতিবেশীর বিদ্যুৎ বিলের কপি: নিকটস্থ বা পাশের বাড়ির কোনো গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের কপি (এতে আপনার ভৌগোলিক অবস্থান বা পোল নম্বর শনাক্ত করতে সুবিধা হয়)।
৫. ওয়্যারিং রিপোর্ট: আপনার ঘরটি সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ওয়্যারিং করা হয়েছে কি না, তার একটি ওয়্যারিং রিপোর্ট (এটি সাধারণত লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ান বা সমিতি থেকে অনুমোদিত ব্যক্তি দিয়ে করা হয়)।
৬. মোবাইল নম্বর: একটি সচল মোবাইল নম্বর, যা দিয়ে পরবর্তীতে রকেটের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ এবং আপনার আবেদনের অবস্থা জানানো হবে।
৭. অনাপত্তি পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে): যদি ভাড়া বাসা বা অন্যের জমিতে সংযোগ নিতে চান, তবে মূল মালিকের অনাপত্তি পত্র প্রয়োজন হতে পারে।
বিশেষ টিপস: অনলাইনে আপলোড করার জন্য প্রতিটি ফাইলের সাইজ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে (সাধারণত ১০০-১৫০ KB এর নিচে) হতে হয়। তাই ছবিগুলো সেভাবে রিসাইজ করে নেবেন।


