রোগ ও ওষুধমুক্ত জীবনের দিশারি: জেকে লাইফস্টাইল গাইডলাইন এখন সবার জন্য উন্মুক্ত ও বিনামূল্যে
আধুনিক জীবনযাত্রার ভিড়ে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং হৃদরোগের মতো জটিল ব্যাধি এখন ঘরে ঘরে । এই ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকট থেকে মুক্তি দিতে এবং সাধারণ মানুষকে একটি সুস্থ ও প্রাকৃতিক জীবনধারায় ফিরিয়ে নিতে ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর স্যারের দীর্ঘদিনের গবেষণালব্ধ ‘জেকে লাইফস্টাইল গাইডলাইন’ (JK Lifestyle Guideline) এখন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
সুস্থতার মূল অন্তরায়: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ডা. জাহাঙ্গীর কবীর স্যারের মতে, আধুনিক অধিকাংশ রোগের মূল কারণ হলো ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ । আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং অলস জীবনযাপনের কারণে শরীরের কোষগুলো যখন ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেয় না, তখনই শরীরে নানা জটিলতা দানা বাঁধে । এই গাইডলাইনের প্রধান লক্ষ্য হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ করে শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে রোগমুক্ত করা ।
গাইডলাইনের মূল ৫টি স্তম্ভ: জেকে লাইফস্টাইল মূলত ৫টি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়: ১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: চিনি, প্রসেসড ফুড ও কেমিক্যালযুক্ত খাবার বর্জন করে অর্গানিক ও প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ । ২. অটোফেজি বা ফাস্টিং: রোজা বা উপবাসের মাধ্যমে শরীরের কোষের পুনরুজ্জীবন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি । ৩. ব্যায়াম: সঠিক নিয়মে শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের মাধ্যমে মেটাবলিজম উন্নত করা । ৪. পর্যাপ্ত ঘুম: শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম বজায় রেখে সঠিক সময়ে ঘুম নিশ্চিত করা । ৫. মানসিক প্রশান্তি চর্চা: স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর জন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ ।
বিনামূল্যে সেবা ও পরামর্শ: সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে ডা. জাহাঙ্গীর কবীর স্যার নিয়মিত ‘ফ্রি জেনারেল কাউন্সেলিং’ সেশন পরিচালনা করছেন, যেখানে যে কেউ বিনামূল্যে অংশগ্রহণ করে সরাসরি দিকনির্দেশনা পেতে পারেন । এছাড়া জেকে লাইফস্টাইলের অধীনে এখন হেলথ রেভুলেশন (প্যাথলজি), আল্টিমেট অর্গানিক লাইফ (খাবার), এবং জেকে ফিটনেস অ্যারেনার মতো আধুনিক সেবা যুক্ত করা হয়েছে যাতে মানুষ পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট পায় ।
বিশেষ আহ্বান: কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই গাইডলাইনটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার মাধ্যমে যে কেউ নিজের জীবনধারা পরিবর্তন করতে পারবেন । তবে জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে লাইফস্টাইল শুরুর তাগিদ দেওয়া হয়েছে । এই জনকল্যাণমূলক তথ্যটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে সহায়তার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভাত রুটি ও আলু খাওয়া থেকে মানুষ বেড়িয়ে আসতে পারছে না কেন?
মানুষ কেন ভাত, রুটি ও আলুর মতো শর্করা জাতীয় খাবার বা কার্বোহাইড্রেট ছাড়তে পারে না, তার একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জেকে লাইফস্টাইল গাইডলাইনে দেওয়া হয়েছে। এর মূল কারণ হলো ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ এবং এর ফলে তৈরি হওয়া শর্করার প্রতি আসক্তি।
নিচে বিস্তারিত কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও ক্রেভিংস: যখন শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়, তখন রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় । এই অতিরিক্ত ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে মস্তিষ্ককে সংকেত পাঠায় আরও সুগার বা শর্করা গ্রহণের জন্য । এর ফলে আমাদের মধ্যে তীব্র খাবারের আকাঙ্ক্ষা বা ‘ক্রেভিংস’ তৈরি হয় ।
মাদকাসক্তির মতো প্রভাব: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে মানুষ না চাইলেও বারবার ভাত, রুটি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে চায় । এই খাবারগুলো না খেলে শরীরে দুর্বলতা অনুভব হয় এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, যা অনেকটা মাদকাসক্ত ব্যক্তির আচরণের মতো । ধীরে ধীরে মানুষ এই শর্করার প্রতি পুরোপুরি আসক্ত হয়ে পড়ে ।
কোষের কার্যক্ষমতা হ্রাস: অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে আমরা শরীরের কোষে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করি, যাকে ‘কোষের ওভারলোড’ বলা হয় । এর ফলে কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দিতে পারে না এবং শরীর এই চক্র থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারে না ।
অভ্যাস ও জীবনধারা: প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড এবং অলস জীবনযাপনের কারণে আমাদের মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সকে আরও ত্বরান্বিত করে এবং শর্করা নির্ভরতা বাড়িয়ে দেয় ।
জেকে লাইফস্টাইল অনুযায়ী, এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে কেবল ইচ্ছাশক্তি যথেষ্ট নয়, বরং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে শরীরকে ইনসুলিন সংবেদনশীল করে তোলা প্রয়োজন ।

