পুলিশে বড় পরিবর্তন: প্রথমবারের মতো সরাসরি এএসআই নিয়োগের বিধান রেখে প্রবিধান সংশোধন - Technical Alamin
সরকারি আদেশ ও তথ্য

পুলিশে বড় পরিবর্তন: প্রথমবারের মতো সরাসরি এএসআই নিয়োগের বিধান রেখে প্রবিধান সংশোধন

বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদে সরাসরি নিয়োগের বিধান যুক্ত করে দীর্ঘদিনের পুরনো পুলিশ প্রবিধান (PRB) সংশোধন করেছে সরকার। আজ (২২ ডিসেম্বর, ২০২৫) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-২ শাখা থেকে প্রকাশিত এক বিশেষ গেজেটে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

নিয়োগে নতুন নিয়ম: সংশোধিত ‘পুলিশ রেগুলেশনস, ১৯৪৩’ এর ভলিউম-১-এর ৭৪৩ প্রবিধান অনুযায়ী, এখন থেকে এএসআই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ সরাসরি এবং বাকি ৫০ শতাংশ কনস্টেবল ও নায়েক পদ থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। আগে এই পদটি শুধুমাত্র পদোন্নতির মাধ্যমেই পূরণ করা হতো। গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, সরাসরি নিয়োগের জন্য নির্ধারিত পদগুলো জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারী বণ্টন করা হবে।

যোগ্যতা ও শর্তাবলী: সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) বা সমমান নির্ধারণ করা হয়েছে। বয়সের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২২ বছর নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে কর্মরত কনস্টেবল ও নায়েকদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৫ বছর পর্যন্ত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থীদের অবিবাহিত হতে হবে এবং প্রশিক্ষণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই শর্ত বহাল থাকবে।

প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া: চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করার পর তারা ‘ক্যাডেট সহকারী উপ-পরিদর্শক’ হিসেবে নিয়োগ পাবেন। নিয়োগের পর তারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রবেশন বা শিক্ষানবিশকালে থাকবেন। এই সময়ে অযোগ্য বিবেচিত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ (পুলিশ সুপার বা সমমর্যাদার কর্মকর্তা) তাকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা রাখবেন।

সংস্কারের লক্ষ্য: সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অনলাইন জিডি ও তদন্ত কার্যক্রম আরও বেগবান করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বড় আকারের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয় ৪,০০০ এএসআই পদ সৃজনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল, যার মধ্যে ২,০০০ জন সরাসরি এবং ২,০০০ জন পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার কথা রয়েছে।

পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক নিয়োগের বিধান

সংশোধনীর ফলে কি পদোন্নতির পথ সুগম হলো?

পুলিশ প্রবিধান (PRB) ৭৪৩-এর এই সংশোধনীর ফলে পদোন্নতির ক্ষেত্রে একটি মিশ্র প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সহজভাবে বলতে গেলে, এটি পদোন্নতির কাঠামোতে শৃঙ্খলা আনলেও কিছু ক্ষেত্রে নতুন প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। নিচে এর বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:

১. সুনির্দিষ্ট কোটা ব্যবস্থা: সংশোধনীর আগে এএসআই পদটি মূলত শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমেই পূরণ করা হতো। এখন নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এএসআই পদের ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ এবং বাকি ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। এর ফলে যারা পদোন্নতির অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের জন্য পদের সংখ্যা আগের চেয়ে নির্দিষ্ট বা সীমিত হয়ে গেল।

২. প্রতিযোগিতা ও স্বচ্ছতা: সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে, প্রতি বছর আগস্ট মাসে পুলিশ মহাপরিদর্শক (IGP) সকল ইউনিট থেকে শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহ করবেন। এতে পদোন্নতির প্রক্রিয়াটি নিয়মিত এবং সময়াবদ্ধ হবে, যা আগে অনেক সময় দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ত। নিয়মিত শূন্য পদ নির্ণয় ও তালিকা প্রণয়নের ফলে যোগ্য কনস্টেবল ও নায়েকদের জন্য পদোন্নতির পথ আরও সুশৃঙ্খল হবে।

৩. যোগ্যতা ও পেশাদারিত্ব: সরাসরি নিয়োগের ফলে কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নতুন ও উচ্চশিক্ষিত এএসআইরা বাহিনীতে যোগ দেবেন। এটি সার্বিক কর্মপরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনলেও মাঠপর্যায়ে দীর্ঘকাল কর্মরতদের জন্য পদোন্নতির সুযোগ কিছুটা সংকুচিত করতে পারে, কারণ এখন অর্ধেক পদ সরাসরি নিয়োগের জন্য সংরক্ষিত।

৪. বয়স ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়: কর্মরত কনস্টেবল ও নায়েকদের জন্য সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে (২৫ বছর বয়স পর্যন্ত)। অর্থাৎ, একজন যোগ্য কনস্টেবল এখন কেবল ‘পদোন্নতি’র অপেক্ষায় না থেকে সরাসরি ‘নিয়োগ’ পরীক্ষায় অংশ নিয়েও দ্রুত এএসআই পদে উন্নীত হতে পারবেন।

সারসংক্ষেপ: সংশোধনীর ফলে পদোন্নতির প্রক্রিয়াটি আগের চেয়ে অনেক বেশি নিয়মতান্ত্রিক ও কাঠামোবদ্ধ হয়েছে। তবে ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের বিধান যুক্ত হওয়ায় শুধুমাত্র পদোন্নতির মাধ্যমে পদটি পাওয়ার সুযোগ আগের তুলনায় কমেছে। যারা দক্ষ এবং তরুণ, তাদের জন্য সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পদোন্নতির বিকল্প ও দ্রুততর একটি পথ তৈরি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *