ইমামের পিছনে ছানা পড়ার নিয়ম । সানা কখন পড়তে হয়?

ইমামের পিছনে ছানা পড়ার নিয়ম । সানা কখন পড়তে হয়?

নামাজে নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা বাধার পরই সানা পড়তে হয় – শুধুমাত্র প্রথম রাকাতেই সানা একবার পড়তে হয়- প্রতি রাকাতে পড়তে হয় না- ইমামের পিছনে ছানা পড়ার নিয়ম

ইমাম কেরাত পড়লে কি তখন সানা পড়া যাবে?– না। ইমাম আস্তে কেরাত পড়া অবস্থায় ইমামের সঙ্গে নিয়ত বেঁধে সানা পড়তে পারে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে ইমাম জোরে কেরাত পড়া অবস্থায় কেরাত শুনা ফরজ বিধায়, তখন সানা পড়া নিষেধ। পরবর্তী রাকাতেও সানা পড়া যাবে না। এক নামাজ পড়া বা জামায়াতে পড়া উভয় ক্ষেত্রে প্রথম রাকাতে সানা পড়তে হবে।

সানা বাংলা উচ্চারণ কি? সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআ-লা জাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গায়রুক অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আপনার নাম বরকতপূর্ণ, আপনার মাহাত্ন সুউচ্চ এবং আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই) ( সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮০৪)।

নামাজে ছানা না পড়লে কি নামাজ হবে না? প্রত্যেক নামাজের শুরুতে সানা পড়া সুন্নত অর্থাৎ এটি বাধ্যতামূলক নয়। আপনি চাইলে পড়তে পারেন, না পড়লেও আপনার কোনো গুনাহ হবে না। তাই এ ধারণা ভুল যে, নামাজে সানা না পড়লে নামাজ হবে না।

ছানা দোয়া বাংলা । ছানা বাংলা অর্থ সহ । নামাজের ছানা পড়ার নিয়ম

ইসতেগফার বা সানা কি একই জিনিস? হ্যাঁ। নামাজের প্রতিটি রোকনেই মহান আল্লাহর প্রশংসা ও তারই কাছে সাহায্য চাওয়ার আবেদনে ভরপুর। তবে এর মধ্যে অন্যতম একটি হলে সানা। এটিকে দোয়ায়ে ইসতিফতাহও বলা হয়।

ইমামের পিছনে ছানা পড়ার নিয়ম । সানা কখন পড়তে হয়?

 

Caption: info source

ছানা বা নামাজের ছানা পড়ার নিয়ম । নামাজের ফরজ কয়টি?

  1. সানা (ثناء) অর্থ প্রশংসা, গুণগান, স্তুতি। পরিভাষায় তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) এর পর কেরাতের পূর্বে (আউযু, বিসমিল্লাহ’রও পূর্বে) বিশেষ শব্দে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করাকে সানা বলে। রাসুল সা. বিভিন্ন শব্দে সানা পড়তেন। রাসুল সা. এর পঠিত সানাগুলো নিম্নরূপ-  سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তোমার প্রশংসার সাথে তোমার নাম বরকতময়, উচ্চ, তোমার মহিমা এবং তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। [তিরমিযী : হাদিস-242, 243, নাসাঈ : হাদিস-899, ইবন মাযাহ : হাদিস-806]

     

  2. হাদিসের মান : সহিহ। اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ، كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ المَشْرِقِ وَالمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنَ الخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالبَرَدِ. رواه البخارى ومسلم অর্থ : হে আল্লাহ! আমার ও আমার পাপরাশির মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেমন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার পাপরাশি হতে পবিত্র করে দাও যেমন সাদা কাপড় ময়লা হতে পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। হে আল্লাহ! আমাকে পানি, বরফ, শিলা বৃষ্টির সাহায্যে ধৌত কর। [বুখারি : হাদিস-774, মুসলিম : হাদিস-598, নাসাঈ : হাদিস-60]

     

  3. হাদিসের মান : সহিহ। وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ المُشْرِكِينَ، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ العَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ المُسْلِمِينَ، اللَّهُمَّ أَنْتَ المَلِكُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَنْتَ رَبِّي وَأَنَا عَبْدُكَ، ظَلَمْتُ نَفْسِي وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا، إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الأَخْلَاقِ، لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا، لَا يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ، آمَنْتُ بِكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি রাজার রাজা, তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তুমিই আমার প্রতিপালক এবং আমি তোমার দাস। আমার নিজের উপর আমি অত্যাচার করেছি, আমার অপরাধ আমি স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমার সকল অপরাধ ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া অপরাধ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। তুমি আমাকে ভাল চরিত্রের পথনির্দেশ কর, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ সবচেয়ে ভাল চরিত্রের দিকে পথনির্দেশ করতে পারে না। তুমি আমার হতে মন্দ চরিত্র দূর করে দাও। তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমার হতে তা দূর করতে পারে না। তোমার উপরে আমি ঈমান এনেছি। তুমি কল্যাণময়, সুমহান। তোমার কাছে আমি মাফ চাই এবং তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি”। [মুসলিম : হাদিস-771, তিরমিযী : হাদিস-3421]

     

  4. হাদিসের মান : সহিহ। إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ. اللَّهُمَّ اهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَعْمَالِ وَأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ، وَقِنِي سَيِّئَ الْأَعْمَالِ وَسَيِّئَ الْأَخْلَاقِ لَا يَقِي سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ» অর্থ : নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সমস্ত পৃথিবীর প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি এ সম্বন্ধেই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের প্রথম। হে আল্লাহ! সুন্দরতম কাজ ও সুন্দরতম চরিত্রের প্রতি আমাকে পথ দেখাও, যেহেতু তুমি ছাড়া সুন্দরতম কাজ ও সুন্দরতম চরিত্রের প্রতি অন্য কেউ পথ দেখাতে পারে না। আর আমাকে মন্দ কাজ ও মন্দ চরিত্র থেকে রক্ষা কর, কেননা তুমি ছাড়া অন্য কেউ মন্দ কাজ ও মন্দ চরিত্র থেকে রক্ষা করতে পারে না। [নাসাঈ : হাদিস-897, আবু দাউদ : হাদিস-760]

সুন্নত নামাজে কি সানা পড়তে হয়?

হ্যাঁ। সানা পড়তে হবে- এটা সুন্নাত। পড়লে সোয়াব হবে তবে না পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে। তবে পড়ার চেষ্টা করাই উত্তম। ফরম বা সুন্নত বা নফল সকল নামাজে সানা পড়া যেতে পারে এমনটি আংশিক ফরম নামাজ ধরলেও সানা পড়া যেতে পারে। সানা উত্তম দোয়া হিসেবে স্বীকৃত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *