বাইক এবং গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিনামা"-এর ফরম্যাট বা নমুনা - Technical Alamin
টিপস এন্ড ট্রিকস

বাইক এবং গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিনামা”-এর ফরম্যাট বা নমুনা

সূচীপত্র

ব্যবহৃত যানবাহন কেনাবেচায় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতে চুক্তিনামার গুরুত্ব বাড়ছে- ব্যবহৃত মোটরসাইকেল বা গাড়ি কেনাবেচার ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত আইনি জটিলতা এড়াতে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে লিখিত চুক্তিনামা সম্পাদনের প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি একটি আদর্শ ‘ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিনামা’ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লেনদেনের স্বচ্ছতা এবং মালিকানা বদল প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে এই দলিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চুক্তিনামার তথ্য অনুযায়ী, লেনদেনের সময় প্রথম পক্ষ (বিক্রেতা) এবং দ্বিতীয় পক্ষকে (ক্রেতা) তাদের পূর্ণ নাম, পিতার নাম ও বর্তমান ঠিকানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়। যানবাহনের সঠিক পরিচিতির জন্য এর রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর এবং চ্যাসিস নম্বর দলিলে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া গাড়ির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, তৈরির সন এবং সিসি (ইঞ্জিন ক্ষমতা) উল্লেখ করার ঘরও রাখা হয়েছে।

চুক্তিনামায় বিশেষভাবে উল্লেখ থাকে যে, গাড়িটি বিক্রির আগে বিক্রেতার নামে থাকাকালীন কোনো মামলা, ব্যাংক মর্টগেজ বা আইনি জটিলতা ছিল না। বিক্রয়মূল্য বাবদ সমস্ত টাকা বুঝে পাওয়ার পর বিক্রেতা গাড়িটি ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করেন।

চুক্তিনামার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত হলো মালিকানা পরিবর্তন। এতে উল্লেখ থাকে যে, মালিকানা পরিবর্তনে কোনো সমস্যা হলে বিক্রেতা তা নিজ দায়িত্বে সমাধান করে দেবেন। তবে ক্রেতাকে অবশ্যই পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে নাম পরিবর্তনের (Name Transfer) প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এই সময়ের পর কোনো দুর্ঘটনা বা আইনি সমস্যার জন্য বিক্রেতা আর দায়ী থাকবেন না।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু মৌখিক কথায় বা টাকা লেনদেনের মাধ্যমে গাড়ি কেনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তায় কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে বা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বিআরটিএ-র নথিতে যার নাম থাকে, তাকেই প্রথমে অভিযুক্ত করা হয়। তাই ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে যথাযথভাবে স্ট্যাম্পে এই চুক্তিনামা স্বাক্ষর করা জরুরি।

সচেতন মহলের মতে, একটি সুষ্ঠু চুক্তিনামা কেবল মালিকানা হস্তান্তরের প্রমাণই নয়, বরং ভবিষ্যতে কোনো বিবাদ বা আইনি জটিলতায় শক্তিশালী ঢাল হিসেবে কাজ করে।

চুক্তিপত্র না করলে কি হয়?

ব্যবহৃত বাইক বা গাড়ি কেনাবেচার সময় লিখিত চুক্তিপত্র না করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি কেবল একটি কাগজ নয়, বরং ভবিষ্যতে কোনো আইনি বিপদে আপনার নির্দোষ হওয়ার একমাত্র প্রমাণ। চুক্তিপত্র না করলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা—উভয়কেই যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে, তা নিচে তুলে ধরা হলো:

১. বিক্রেতার জন্য ঝুঁকি (যিনি গাড়িটি বিক্রি করছেন)

গাড়ি বা বাইক বিক্রি করার পর যদি সেটি ক্রেতার নামে ট্রান্সফার না হয় এবং কোনো চুক্তিপত্রও না থাকে, তবে বিক্রেতা মারাত্মক বিপদে পড়তে পারেন:

  • আইনি দায়বদ্ধতা: গাড়িটি দিয়ে যদি কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটে বা কোনো অপরাধমূলক কাজ (যেমন- ছিনতাই বা মাদক বহন) করা হয়, তবে পুলিশ বিআরটিএ-র ডাটাবেজ অনুযায়ী গাড়ির আসল মালিক বা বিক্রেতাকেই প্রথমে গ্রেফতার করবে।

  • ট্রাফিক মামলা: ক্রেতা যদি ট্রাফিক আইন অমান্য করেন বা স্পিড গান-এ ধরা পড়েন, তবে মামলার জরিমানা বিক্রেতার নামেই আসবে।

  • ক্ষতিপূরণ: বড় কোনো সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে অনেক সময় মালিককে বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।

২. ক্রেতার জন্য ঝুঁকি (যিনি গাড়িটি কিনছেন)

চুক্তিপত্র ছাড়া টাকা দিয়ে গাড়ি কিনলে ক্রেতাও বিভিন্ন আইনি ও মালিকানাগত সংকটে পড়তে পারেন:

  • মালিকানা নিয়ে বিতর্ক: বিক্রেতা যদি অসৎ হন, তবে পরবর্তীতে তিনি গাড়িটি চুরি হয়েছে বলে মামলা করতে পারেন। লিখিত প্রমাণ না থাকলে আপনি যে গাড়িটি টাকা দিয়ে কিনেছেন, তা প্রমাণ করা কঠিন হবে।

  • ব্যাংক মর্টগেজ বা ঋণ: গাড়িটি যদি ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকে এবং বিক্রেতা সেটি লুকিয়ে বিক্রি করেন, তবে পরবর্তীতে ব্যাংক গাড়িটি জব্দ করতে পারে। চুক্তিপত্র থাকলে আপনি বিক্রেতার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করতে পারতেন, যা চুক্তি ছাড়া প্রায় অসম্ভব।

  • নাম ট্রান্সফারে জটিলতা: মালিকানা বদলের জন্য বিআরটিএ-তে আবেদন করতে গেলে বিক্রয় রসিদ বা চুক্তিপত্র প্রয়োজন হয়। এটি না থাকলে ভবিষ্যতে মালিকানা স্থায়ীভাবে নিজের নামে করা সম্ভব হবে না।

  • পুরানো মামলা: গাড়িটি কেনার আগে যদি কোনো মামলা বা সরকারি বকেয়া (ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস) থেকে থাকে, তবে চুক্তিপত্র না থাকলে সেই আর্থিক দায়ভার পুরোপুরি ক্রেতার ওপর এসে পড়ে।

৩. সাধারণ কিছু সমস্যা

  • সাক্ষীর অভাব: মৌখিক চুক্তির কোনো আইনি ভিত্তি নেই। বিরোধ দেখা দিলে সাক্ষী পাওয়া বা প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

  • দুর্ঘটনার দায়: চুক্তিপত্রে নির্দিষ্ট সময় ও তারিখ উল্লেখ থাকে। তাই গাড়ি হস্তান্তরের এক ঘণ্টা পর যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তবে ওই সময়ের আগের দায় বিক্রেতার এবং পরের দায় ক্রেতার—এটি প্রমাণ করার আর কোনো সহজ উপায় থাকে না।


উপদেশ: গাড়ি কেনাবেচার সময় ন্যূনতম ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিনামা তৈরি করুন। সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার এনআইডি (NID) কার্ডের ফটোকপি যুক্ত করুন এবং কমপক্ষে দুইজন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী রাখুন।

গাড়ি বিক্রয়ের চুক্তিপত্র ২০২৫ । ক্রয় বিক্রয় চুক্তিনামা নমুনা সংগ্রহ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *