ব্রাউজার হিস্ট্রি ডিলিট করলেই কি সব মুছে যায়? গুগল ট্র্যাকিং বন্ধ করতে যা করবেন
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেটে আমরা কী করছি, কী খুঁজছি বা কোথায় যাচ্ছি—তার সব রেকর্ডই জমা থাকে ইন্টারনেটে। সাধারণ ব্যবহারকারীরা মনে করেন, ব্রাউজারের ‘সেটিংস’ থেকে ‘ক্লিয়ার হিস্ট্রি’ (Clear History) দিলেই তাদের সব তথ্য মুছে গেছে। কিন্তু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। ব্রাউজার থেকে হিস্ট্রি মুছলেও আপনার আসল ‘ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট’ বা ট্র্যাকিং ডেটা গুগলের সার্ভারে ঠিকই থেকে যায়।
আসল হিস্ট্রি কোথায় থাকে? প্রকৃতপক্ষে, ব্রাউজারের হিস্ট্রি মুছে ফেলা কেবল আপনার ডিভাইস বা কম্পিউটার থেকে ডেটা সরিয়ে দেয়। কিন্তু আপনার গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনি ইন্টারনেটে যা যা করেছেন, তার বিস্তারিত রেকর্ড জমা থাকে গুগলের ‘My Activity’ সেকশনে। আপনি কোন অ্যাপ কতক্ষণ ব্যবহার করেছেন, ম্যাপে কোথায় সার্চ করেছেন কিংবা ইউটিউবে কী দেখেছেন—সবকিছুর আসল ট্র্যাকিং হয় এখান থেকেই।
কীভাবে পুরোপুরি মুছবেন আপনার ডিজিটাল তথ্য? আপনি যদি গুগল থেকে আপনার যাবতীয় ট্র্যাকিং হিস্ট্রি বা ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট স্থায়ীভাবে মুছতে চান, তবে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১. যেকোনো ব্রাউজার থেকে সরাসরি প্রবেশ করুন myactivity.google.com এই লিংকে। ২. আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে লগ-ইন করা থাকলে সেখানে আপনার করা প্রতিটি সার্চ ও অ্যাক্টিভিটি দেখতে পাবেন। ৩. উপরে বাম দিকে বা মেনু অপশনে থাকা “Delete” বাটনে চাপ দিন। ৪. সময়সীমা হিসেবে “All time” অপশনটি বেছে নিন। ৫. এরপর গুগল আপনাকে জানাবে কোন কোন সার্ভিসের ডেটা মোছা হবে, সেখানে সব সিলেক্ট করে ‘Delete’ নিশ্চিত করুন।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, গুগল এই ডেটাগুলো বিশ্লেষণ করে আপনার পছন্দ-অপছন্দ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। ব্রাউজার হিস্ট্রির চেয়েও ‘মাই অ্যাক্টিভিটি’ পরিষ্কার রাখা ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য অনেক বেশি কার্যকর।
গুগল ব্রাউজিং হিস্ট্রি কি?
সহজ কথায়, গুগল ব্রাউজিং হিস্ট্রি হলো আপনি যখন গুগল ক্রোম (Google Chrome) ব্রাউজার ব্যবহার করে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, তার একটি তালিকা বা রেকর্ড।
এটি অনেকটা আপনার ইন্টারনেটে ভ্রমণের ডায়েরির মতো। আপনি কোন সময়ে কোন ওয়েবসাইটে গিয়েছিলেন, কী লিখে সার্চ করেছিলেন—সবই এখানে জমা থাকে।
নিচে ব্রাউজিং হিস্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
১. ব্রাউজিং হিস্ট্রিতে কী কী জমা থাকে?
ওয়েবসাইটের তালিকা: আপনি গত কয়েক দিন বা কয়েক মাসে যে যে ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন।
সার্চ টার্মস: গুগল সার্চ বক্সে আপনি যা যা লিখে সার্চ করেছেন।
সময় ও তারিখ: ঠিক কোন সময়ে আপনি কোন লিঙ্কে ক্লিক করেছিলেন।
ক্যাশ ও কুকিজ (Cache & Cookies): ওয়েবসাইটগুলো যাতে দ্রুত লোড হয়, সেজন্য কিছু ছোট ফাইল জমা থাকে।
২. এর সুবিধা কী?
সহজে খুঁজে পাওয়া: ধরুন, গত সপ্তাহে আপনি একটি দারুণ আর্টিকেল পড়েছিলেন কিন্তু এখন ওয়েবসাইটের নাম মনে নেই। হিস্ট্রি চেক করে আপনি সহজেই সেটি ফিরে পেতে পারেন।
অটো-ফিল: আপনি যখন কোনো ওয়েবসাইটের নাম লিখতে শুরু করেন, ব্রাউজার হিস্ট্রি থেকে সেটি আগেভাগেই সাজেস্ট করে।
৩. ডিভাইস হিস্ট্রি বনাম গুগল অ্যাকাউন্ট হিস্ট্রি (পার্থক্যটি জরুরি)
অনেকেই মনে করেন ব্রাউজার থেকে হিস্ট্রি মুছলেই সব শেষ। কিন্তু আসলে গুগল দুইভাবে আপনার তথ্য রাখে:
| বিষয় | ডিভাইস হিস্ট্রি (Local) | গুগল অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভিটি (Server) |
| কোথায় থাকে? | আপনার ফোন বা কম্পিউটারের ব্রাউজারে। | গুগলের নিজস্ব সার্ভারে (Cloud)। |
| মুছে ফেললে কী হয়? | শুধু ঐ ডিভাইস থেকে তালিকাটি মুছে যায়। | গুগলের রেকর্ড থেকে স্থায়ীভাবে মুছে যায়। |
| লিঙ্ক | chrome://history | myactivity.google.com |
৪. গোপনীয়তা রক্ষা করবেন কীভাবে?
যদি আপনি চান যে গুগল আপনার কোনো হিস্ট্রি রেকর্ড না করুক, তবে আপনি দুটি কাজ করতে পারেন:
Incognito Mode (ইনকগনিটো মোড): এই মোডে ব্রাউজ করলে ব্রাউজার আপনার হিস্ট্রি সেভ করে না।
Auto-Delete: আপনি গুগলের সেটিংস থেকে সেট করে দিতে পারেন যে, প্রতি ৩ মাস বা ১৮ মাস পর পর আপনার সব হিস্ট্রি নিজে থেকেই মুছে যাবে।

