ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ । দলিল যার জমি তার আইনে যা আছে?
নুতন ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইন জমি জমা নিয়ে জটিলতা দূর করবে- রেকর্ড ছাড়া ভূমি দখলে রেখে ভোগ করা যাবে না – ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩
কেন নতুন আইন তৈরি করা হল? –ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। নাগরিকগণের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখলসহ প্রাপ্য অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণ, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং এর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধসমূহ প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে উক্ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
ভূমি হতে বে-আইনী দখল, স্থাপনা বা প্রতিবন্ধকতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি, বালু, ইত্যাদি অপসারণ করতে এবং উক্ত ভূমিকে এর পূর্বের শ্রেণি বা প্রকৃতিতে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সন্নিবেশ করা হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণ এবং যথাসময়ে জনগণের বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের মতামত গ্রহণসহ অংশীজনের মতামত গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে প্রস্তাবিত “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩” প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা এবং ভূমি সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বিধায় সর্বসাধারণ উপকৃত হবেন। নতুন আইনের অধীন অপরাধের বিচার মামলা প্রাপ্তির তারিখ হইতে ১৮০ (একশত আশি) দিনের মধ্যে সমাপ্ত করিতে হইবে । এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন অপরাধের বিচার ও আপিলের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।
ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার—(১) এই আইনে বর্ণিত অপরাধের বিচারকালে যদি কোনো ফৌজদারি আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে উপযুক্ত ব্যক্তির অনুকূলে দখল অর্পণ করা আবশ্যক, তাহার হইলে আদালত তদ্উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করিতে পারিবে।
দলিল যার জমি তার গেজেট ২০২৩ pdf । দলিল যার জমি তার প্রজ্ঞাপন । নতুন ভূমি আইনে সাত ধরনের দলিল বাতিল
অপরাধের বিচার (১) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ, আমালযোগ্য (cognizable), ধারা ৪ ও ৫ এ বর্ণিত অপরাধ অ-জামিনযোগ্য (non-bailable), অন্যান্য ধারায় বর্ণিত অপরাধ জামিনযোগ্য এবং আপোষযোগ্য (compoundable) হইবে। এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য হইবে।
দলিল যার জমি তার গেজেট ২০২৩ ডাউনলোড
জোরপূর্বক জমি দখলে রাখার শাস্তি । যে অপরাধে যে দন্ড প্রদান করা হবে
- ক্রেতা বরাবর বিক্রিত ভূমির দখল হস্তান্তর না করিবার দণ্ড- বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত মূল্যের সম্পূর্ণ অর্থ বিক্রেতা বরাবর পরিশোধ করা সত্ত্বেও যদি তিনি, যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত, ক্রেতা বরাবর উক্ত ভূমির দখল হস্তান্তর না করেন, তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২(দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
- সীমানা বা ভূমির ক্ষতিসাধনের দণ্ড যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির আইনানুগভাবে দখলকৃত ভূমির সীমানা বা সীমানা চিহ্নের ক্ষতিসাধন করেন অথবা এইরূপ কোনো কার্য করেন যাহাতে উক্ত ভূমি অথবা উহাতে অবস্থিত স্থাপনা, বৃক্ষ, ফসলের কোনো ক্ষতি সাধিত হয়, তাহা হইলে অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
- আদেশ অমান্যে দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৮ বা ধারা ১৪ এর অধীন প্রদত্ত কোনো আদেশ ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য বা লংঘন করেন বা উহা বাস্তবায়নে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন, তাহা হইলে উক্তরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
- অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনার দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনে বর্ণিত কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা প্রদান করেন তাহা হইলে উক্তরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি প্রকৃত অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
- অপরাধ পুনঃসংঘটনের দণ্ড -এই আইনের কোনো ধারার অধীন কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হইয়া সাজাপ্রাপ্ত হইলে এবং পরবর্তীতে একই অপরাধ পুনঃসংঘটন করিলে তিনি যে ধারায় ইতিপূর্বে দোষী সাব্যস্ত হইয়াছেন উক্ত ধারায় নির্ধারিত দণ্ডের দ্বিগুণ পরিমাণ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
- কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন– এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি কোনো কোম্পানি বা ফার্ম হইলে, তাহা বাংলাদেশে নিগমিত (incorporated) হউক বা না হউক, উক্ত কোম্পানির মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা উক্ত অপরাধের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হইবেন, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, উক্তরূপ অপরাধ সংঘটন তাহার অজ্ঞাতসারে হইয়াছে অথবা উহা রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।
ভূমি প্রতারণা ও অপরাধ হবে কি করলে?
ভূমি হস্তান্তর, জরিপ, রেকর্ড হালনাগাদকরণ বা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিম্নবর্ণিত কোনো কার্য ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে, যথা:—অন্যের মালিকানাধীন ভূমি স্বীয় মালিকানাধীন ভূমি হিসাবে প্রচার করা হলেই অপরাধ হবে। তথ্য গোপন করিয়া কোনো ভূমি, সম্পূর্ণ বা উহার অংশবিশেষ, কোনো ব্যক্তি বরাবর হস্তান্তর বা সমর্পণ করা হলে অপরাধ হবে। স্বীয় মালিকানাধীন ভূমির অতিরিক্ত ভূমি বা অন্যের মালিকানাধীন ভূমি, তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হইয়া, কোনো ব্যক্তি বরাবর হস্তান্তর বা সমর্পণ করলে অপরাধ হবে।