ব্যাংক আমানতের উপর  TDS কর্তন বিধান– সকল ধরণের আমানতের সুনমুনাফার উপর অর্থ আইন, ২০২২ এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৫৩এফ ধারায় উৎসে আয়রন নিশ্চিত করণের নির্দেশনা প্রদান করেছে কর কমিশনারের কার্যালয়, ঢাকা।

অর্থ আইন, ২০২২ এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৫৩এফ থাকা অনুযায়ী সব ধরণের আমানতের সুদ/মুনাফার উপর ৫%-২০% পর্যন্ত উৎসে কর কর্তনের বিধান করা হয়েছে। ১ জুলাই ২০২২ হতে উক্ত বিধান কার্য হবে।

আমানতকারী ৭৫ ধারায় রিটার্ণ দাখিলের প্রমাণক দাখিল উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে সব ধরনের আমানতের সুর/মুনাফা উপর নির্ধারিত হারে উৎসে কর কর্তন করার পর অতিরিক্ত ৫০% আরো উৎসে কর কর্তনের বিধান করা হয়েছে অর্থাৎ যে হার প্রযোজ্য হইবে ঐ হারের অর্ধেক ধার্য হইবে। ব্যক্তি পর্যায়ে ১০% কর কর্তনের বিধান রয়েছে রিটার্ণ দাখিলের কাগজপত্র দাখিল করা না হলে আরও ৫% (৫০%) হারে কর্তন করা হবে।

আসুন একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি পরিস্কার হওয়া যাক, কোম্পানী পর্যায়ের কোন আমানতকারী ৭৫ থাকায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিল করতে ব্যর্থ হলে প্রদেয় সুদ/মুনাফার উপর ২০% এর স্থলে ৩০% উৎসে কর কর্তন প্রযোজ্য হবে। আপনার প্রতিষ্ঠানের সকল শাখা কর্তক সব ধরনের আমানতের উপর আয়কর অধ্যাদেশের ৫৩এফ ধরায় উপরে উল্লিখিত বিধান মোতাবেক উৎসে কর কর্তন নিশ্চিতকরণের জন্য কর কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা জারি করেছে।

ব্যাংক আমানতের উপর সুদ /মুনাফার ১৫% পর্যন্ত উৎসে আয়কর গণনা হবে / কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩০% পর্যন্ত প্রযোজ্য হইতে পারে।

ব্যাকিং সেবা সহ সর্বমোট ৩৮টি সেবার উপর আয়কর কর্তন বা উৎস্যে কর কর্তন করা হবে। কিছু সেবায় TIN নয় রিটার্ন জমার প্রমাণক জমা দিতে হবে।

আমানতের উপর আয়কর কর্তন

Caption: TDS On interest / Tax Deduction on Source at Bank Interest of Deposit

ব্যাংক আমানতের সুদ ছাড়াও অন্য যে সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন জমার রশিদ বা প্রমাণক দেখানোর নির্দেশনা রয়েছে

  • পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস কিনতে হলে আয়কর জমার প্রমাণ দেখাতে হবে।
  • ব্যাংক জমার সুদ আয় থেকে উৎস কর কর্তনে রিটার্ণ সনদ থাকলে ১০ শতাংশ কাটা হবে অন্যথায় ১৫%;
  • ১০ লাখ টাকা বেশি মূল্যের জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি, বিক্রি, দলিল হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে হলে ক্রেতাকে রেজিস্ট্রি অফিসে রিটার্ন জমার স্লিপ জমা দিতে হবে।
  • যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে;
  • দুই বা তিন চাকা ছাড়া যেকোনো মোটরগাড়ি নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতে;
  • সিটি করপোরেশন বা জেলা সদর, পৌরসভায় সন্তান বা পোষ্যদের আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রমের আওতায় ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল বা জাতীয় পাঠ্যক্রমের আওতায় ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি করাতে;
  • দেশের যেকোনো স্থানে বাণিজ্যিক বা শিল্প কারখানায় গ্যাসের সংযোগ নিতে হলে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় বাসা বাড়ির গ্যাসের সংযোগ নিতে বা আগের সংযোগ বজায় রাখতে;
  • সিটি করপোরেশন বা সেনানিবাস এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হলে;
  • জমি বা বাড়ি ভাড়া আয়ের ক্ষেত্রে;
  • সরকার বা সরকারি কোনো সংস্থা, করপোরেশন থেকে বেতন হিসেবে মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা বেশি হলেই;
  • বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেয়ার সময়;
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি অংশ বা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আয় মাসে ১৬ হাজার টাকার বেশি হলেই;
  • ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী শহরে ভবন নির্মাণের অনুমোদন চাইলে;
  • জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলায় কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে;
  • পেনশন ফান্ড, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত সুপারএন্যুয়েশন
  • ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ছাড়া অন্যান্য ফান্ডের রিটার্ন;
  • সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে হলে;
  • ডিজিটাল প্লাটফর্মে কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে হলে;
  • মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অথবা ইলেকট্রনিক উপায়ে অর্থ হস্তান্তরে কমিশন, ফি জাতীয় অর্থ পেতে হলে;
  • সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের আওতায় কোন সমিতি বা ক্লাব গঠিত হলে বা এ ধরনের ক্লাবের সদস্য হলে;
  • এছাড়া আরও সেগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে
  • ডাক্তার, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি ইত্যাদি পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হলে বা সদস্য হতে চাইলে;
  • পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল বা নিরাপত্তা সেবা দিয়ে অর্থ গ্রহণ করতে;
  • বিবাহ নিবন্ধক বা কাজী হিসেবে লাইসেন্স পেতে চাইলে;
  • আমদানি-রফতানির সনদ পেতে চাইলে;
  • আমদানির এলসি খুলতে চাইলে;
  • কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার পদ পেতে হলে;
  • ব্যবসা বা বাণিজ্য সংগঠনের বা সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ;
  • বীমা কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে তালিকাভুক্তি বা নবায়ন করতে হলে;
  • বীমা বা সার্ভেয়ার হিসেবে নিবন্ধন নিতে হলে;
  • অস্ত্রের লাইসেন্স নেয়ার আবেদন করলে;
  • ওষুধ ব্যবসার জন্য ড্রাগ লাইসেন্স থাকলে বা করাতে চাইলে, অগ্নি-নিরাপত্তা লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স পেতে চাইলে;
  • লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার, কার্গো, বার্জ ইত্যাদি নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেটের জন্য;
  • ইটভাটার অনুমোদন নিতে হলে;
  • পরিবহন সেবার ব্যবসা করলে;
  • কোনো কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর বা এজেন্টশিপ চাইলে;
  • পণ্য সরবরাহের ঠিকাদারি কাজে টেন্ডার জমা দিতে হলে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দিতে হবে।
  • তাতে ব্যর্থ হলে ৫০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করার প্রস্তাব করা হয়েছে;
  • এনজিও বা মাইক্রো ক্রেডিট সংস্থার জন্য বিদেশি অনুদানের ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে;

রিটার্ণ দাখিল না করলে দৈনন্দিন সেবা পাওয়া যাবে না?

না – আপনি যদি টিআইএন ধারী হয়ে থাকেন বা ন্যূনতম আয়করের আওতায় থাকেন অথবা অল্প কিছু অর্থও যদি আপনার জমা থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। অন্যথায় দেশের বিভিন্ন প্রকার সেবা হতে আপনাকে বঞ্চিত হতে হবে। আপনি উপ-কর কমিশনারের অফিসে সরাসরি ভিজিট করে আয়কর রিটার্ণ দাখিল করতে পারবেন অন্যদিকে যদি আপনি অনলাইনে রিটার্ণ দাখিল করতে চান তাও পারেন। ঘরে বসে নভেম্বর মাসের মধ্যে অনলাইনে রিটার্ণ দাখিল করতে পারবেন। জিরো রিটার্ণ দাখিল করলেও করতে হবে। যদিও বর্তমানে অনলাইনে রিটার্ণ দাখিল সেবা বন্ধ রয়েছে। অপেক্ষা করুন অনলাইনে রিটার্ণ দাখিলের জন্য ওয়েবসাইট লাইভ হবে। অনলাইনে দাখিল করুন জিরো রিটার্ণ – Zero Return Submission 

১৫% TDS on Bank Interest । রিটার্ণ দাখিল না করলে অতিরিক্ত ৫% আয়কর কর্তনের বিধান: ডাউনলোড